যত বাধাই আসুক, ড. ইউনুসের নেতৃত্বেই ফেব্রুয়ারীতে নির্বাচন হবে এটা জনগণের সাথে সরকারের সামাজিক চুক্তি —ঝিনাইদহে অ্যাটর্নি জেনারেল মোঃ আসাদুজ্জামান।

মোঃ আবু সাইদ শওকত আলী,খুলনা বিভাগীয় প্রধানঃ
অ্যাটর্নি জেনারেল বাংলাদেশ মোঃ আসাদুজ্জামান বলেছেন, আমি দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে বলতে চাই, প্রধান উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বে আগামী ফেব্রুয়ারীতেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচন কে সামনে রেখে যত বাধাই আসুক তা প্রতিহত করে নির্বাচনের মাঠে ভোট দিতে যাবে। এবং জনগণ সতঃস্ফুর্তভাবে ভোট দেবে। জনগন এটাই জুলাই গণ-অভ্যূথানের মাধ্যমে নতুন সরকারের বৈধতা ও জনগণের সামাজিক চুক্তি। বুধবার (০১ অক্টোবর) দুপুরে ঝিনাইদহ ডায়াবেটিক সমিতি আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
বুধবার (১ অক্টোবর) সকাল ১০টায় ঝিনাইদহ ডায়াবেটিস হাসপাতাল চত্বরে এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়। ঝিনাইদহ ডায়াবেটিক সমিতির সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেনের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুন্সি কামাল আজাদ পান্নু, ঝিনাইদহ জেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট এমএ মজিদ, ঝিনাইদহ ডায়াবেটিক সমিতির সহ সভাপতি জাহিদুজ্জামান মনা, আক্তারুজ্জামান ও জাহিদুল ইসলাম প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
অ্যাটর্নি জেনারেল মোঃ আসাদুজ্জামান আরো বলেন, সাংবিধানিকভাবে সরকার পরিবর্তনের সকল পথ যখন পথ রুদ্ধ হয়ে গিয়েছিল। তখন জুলাই বিপ্লবের শহীদরা তাদের জীবন দিয়ে শেখ হাসিনাকে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য করেছে। ছাত্র জনতার এই বিজয় দেশে গণতান্ত্রিক উত্তোরণের পথ উন্মুক্ত করেছে। এই উন্মুক্ত পরিবর্তিত পরিস্থিতিই বর্তমান সরকারের বৈধতা দিয়েছে। তাই আগামীতে কিভাবে নির্বাচন হবে তা জনগণই নির্ধারন করেছে।
অ্যাটর্নি জেনারেল মোঃ আসাদুজ্জামান বলেন, অনেকেই বর্তমান সরকারের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। আপনাদের বলতে চাই, ২০০৯ সাল থেকে লাখ লাখ মানুষ রাজনৈতিক হামলা মামলার শিকার হয়েছেন। হাজার হাজার মানুষ গুম হয়েছেন, বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার হয়েছেন। ফ্যাসিবাদী হাসিনা সরকারের বিদায়ে সাংবিধানিক সকল পথ যখন বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, তখন দেশের ছাত্রজনতা জুলাই বিপ্লবের মাধ্যমে হাসিনাকে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য করেছে। ছাত্র জনতার এই বিজয় দেশে গণতান্ত্রিক উত্তোরণের পথ উন্মুক্ত করেছে। এই উন্মুক্ত পরিবর্তিত পরিস্থিতিই বর্তমান সরকারের বৈধতা দিয়েছে। দেশের জনগণ এই সরকারকে সেই ক্ষমতা দিয়েছে। কোন পতিত স্বৈরাচারের যুক্তি জনগনের গণরায়কে প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারেনা।
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, পৃথিবীর যত সভ্যতা আছে, সকল সভ্যতার মাধ্যমে যেসব সরকার অতিতে গঠিত হয়েছে, তার মধ্যে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার সবচেয়ে বৈধ সরকার। যারা দেশের মানুষকে জিম্মি করে রেখেছিল, তারা আগামী নির্বাচন বানচালে নানা ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। আমরা দ্যর্থহীন কণ্ঠে বলতে চাই, ড. মোহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বেই আগামী ফেব্রুয়ারীতেই দেশে নির্বাচন হবে। জনগণ সতঃস্ফুর্তভাবে ভোট দেবে। এটাই জনগণের সাথে বর্তমান সরকারের সামাজিক চুক্তি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাস সমাজ বদলের ইতিহাস, মানুষের সভ্যতার ইতিহাস। মানুষ যখন বন্যপ্রাণীর মত বসবাস করতেন, হিংস্র ছিলেন, আত্মকেন্দ্রিক ছিলেন, তখন মানুষ সমাজবদ্ধ হয়ে সভ্যতার দিকে ধাবিত হয়েছেন। এভাবে ধাবিত হতে হতে মানুষ তাদের শাসককেক মনোনয়ন দিয়েছেন। আর এই মনোনীত সাংবিধানিক আইন হলো ৬২২ খ্রিস্টাব্দে মদিনা সনদ। রাসুল পাক (সাঃ) বিভেদপূর্ণ জনগোষ্ঠিকে এক কাতারে দাঁড় করিয়ে মদীনা সনদে স্বাক্ষর করেছিলেন। সুতারাং এটি একটি সামাজিক চুক্তি, রাজনৈতিক চুক্তি।
তিনি বলেন, সরকার পরিবর্তনের সমস্ত পথ যখন রুদ্ধ হয়ে গিয়েছিল, তখন জুলাই বিপ্লবের শহীদরা তাদের জীবন দিয়ে সেই ফ্যাসিষ্ট সরকারকে পালিয়ে যেতে বাধ্য করে জনগণ দেশের ক্ষমতা নিজের হাতে নিয়েছিল। তারাই ঠিক করেছেন কে প্রধান উপদেষ্টা কে হবেন, প্রধান বিচারপতি কে হবেন, বাংলাদেশ কিভাবে শাসিত হবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের গণতন্ত্রের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে এসে যদি কোন খুনি গোষ্ঠী সামনে চলে আসে তবে বাংলাদেশের জনগণ তার সমুচিত জবাব দেবে আইন সঙ্গতভাবে।
তিনি বলেন, আমরা হাসিনার বিচার করতে আসেনি, মানবতা বিরোধী অপরাধের বিচার করতে এসেছি। যে অপরাধের মধ্যে আছে পাঁচ বছরের শিশুকে হত্যা করা হয়েছে গুলি করে। যে বালক যে যুবকদের ছাত্র পানি দিচ্ছে তাকে গুলিবিদ্ধ করে মারা হয়েছে। রাজপথে দাঁড়িয়ে বৈষম্যের বিরুদ্ধে কথা বলতে গিয়ে আত্মহুতি দিয়েছেন সে সবের বিচার করতে শেখ হাসিনার নাম উঠে এসেছে। তাই বিনা বিচারে কাউকে ছাড়া হবে না।
সুতরাং যারা বিভেদ তৈরি করার জন্য বলছেন তাদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই ২৪ এবং ৭১ একই সূত্রে কথা। যারা আমাদের কাছ থেকে হারিয়ে গেছেন যারা পঙ্গুত্ব পালন করেছেন যারা সর্বস্ব হারিয়েছেন এই বাংলাদেশ বিনির্মাণের ভূমিকা রেখেছেন এবং তাদের সবার ভূমিকাতেই আমরা শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করতে চাই। আগামী বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ হবে। আগামী বাংলাদেশ আইনের শাসনের বাংলাদেশ হবে, যাতে করে আর কোন মা বোনকে রাতের পর রাত তার স্বজন ফেরার প্রতীক্ষায় থাকতে না হয়।