ময়না হত্যা: ইমাম-মোয়াজ্জেমের রিমান্ড মঞ্জুর, তদন্তে নতুন মোড়, শানে সাহাবা সহ স্থানীয় আলেম সমাজের ক্ষোভ

মোঃ জানে আলম রনি (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি :

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার শাহবাজপুর ইউনিয়নে মাদরাসাছাত্রী পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী মাইমুনা আক্তার ময়না হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গ্রেপ্তারকৃত মসজিদের ইমাম ও মোয়াজ্জেমকে রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। মামলার তদন্তে নতুন মোড় আসছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বুধবার (৯ জুলাই) দুপুরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. সামিউল আলম শুনানি শেষে মসজিদের ইমাম হামিদুল ইসলামকে ৩ দিনের এবং মোয়াজ্জেম সাইদুল ইসলামকে ২ দিনের রিমান্ডে প্রেরণের আদেশ দেন।

গত ৬ জুলাই শনিবার সকাল থেকে নিখোঁজ ছিল ময়না। পরদিন ৭ জুলাই সকাল ১০টার দিকে শাহবাজপুর গ্রামের একটি মসজিদের দ্বিতীয় তলার কক্ষ থেকে শিশুটির বিবস্ত্র মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। মরদেহে ছিল নির্যাতনের স্পষ্ট চিহ্ন। প্রাথমিকভাবে ধর্ষণের পর হত্যার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

এব্যাপারে সরাইল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আসলাম হোসেন বলেন, “রিমান্ডে পেয়ে আমরা তথ্য উদ্ধারের চেষ্টা করছি। তদন্তে অগ্রগতি হয়েছে, আশা করি দ্রুতই হত্যার রহস্য উদঘাটন হবে।”

বাদীপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট নুরুজ্জামান লস্কর তপু বলেন, “এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডে যারা জড়িত, তাদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে আমরা কাজ করছি। পরিবার যেন ন্যায়বিচার পায়, সে লক্ষ্যেই আমরা আছি।”

এদিকে রিমান্ডের খবর ছড়িয়ে পড়ার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্থানীয় জনসাধারণ এবং আলেম সমাজের মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা যায়।

শানে সাহাবা জাতীয় খতীব ফাউন্ডেশন এর কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আতিকুল্লাহ বিন রফিক ও বি-বাড়িয়া জেলা শাখার দায়িত্বশীলগন সরাইল থানা ও নিহত ময়নার পরিবারকে সমবেদনা জানাতে সরেজমিনে উপস্থিত হন।

তাদের পক্ষ থেকে বলা হয়—“আমরা আইনকে সম্মান করি। কিন্তু কোনো নিরীহ ইমাম-মোয়াজ্জেমকে হয়রানি বরদাস্ত করবো না। তদন্ত অফিসার গতকাল আমাদের আশ্বস্ত করেছিলেন, ডিএনএ ও ময়নাতদন্তে সংশ্লিষ্টতা না থাকলে ছেড়ে দেওয়া হবে—এ সংক্রান্ত কল রেকর্ড আমাদের কাছে আছে। আজ কী কারণে রিমান্ডে নেওয়া হলো, তা স্পষ্ট নয়।”

তারা আরও বলেন, “মসজিদের ছাদে লাশ উদ্ধারের কারণে ইমাম-মোয়াজ্জেমকে জিজ্ঞাসাবাদ যৌক্তিক। কিন্তু শুধু তাদেরই কেন রিমান্ডে নেওয়া হলো, আর যাদেরও আটক করা হয়েছে—তাদের কেন নয়? প্রশাসনের প্রতি আমাদের আহ্বান, বিষয়টিকে ঘোলাটে করবেন না।”

ঘটনার জেরে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। শিশুদের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে। অনেক শিশু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যেতে ভয় পাচ্ছে।
এলাকাবাসী দোষীদের দ্রুত গ্রেফতার ও বিচার দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছে।