জামাত নয়, কিন্তু জামাতের লেবাসে সুযোগ নিচ্ছে অনেকেই! ধর্মীয় পরিচয়ের ছদ্মবেশে চলছে ব্যক্তিস্বার্থ হাসিলের অপচেষ্টা

বিদ্যুৎ চন্দ্র বর্মন, রিপোর্টার:
সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় সম্প্রতি এক ভিন্নধর্মী সামাজিক প্রবণতা লক্ষ করা যাচ্ছে— কেউ জামাতে ইসলামী করেন না, আবার কেউ কোনো ইসলামপন্থী রাজনৈতিক দলের সদস্য নন; তবুও অনেকে জামাতের মতো পোশাক ও ভাষার অনুসরণ করে নিজেদের ব্যক্তিস্বার্থ হাসিলের চেষ্টা করছেন।
টুপি, দাড়ি, ধর্মীয় ভঙ্গিতে কথা বলা এবং মুখে ইসলামী মূল্যবোধের কথা বললেও, বাস্তবে তারা কোনো ধর্মীয় সংগঠনের সক্রিয় কর্মী নন। বরং এই লেবাসকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে সমাজে ‘ভদ্রলোক’ পরিচিতি পেতে, প্রশাসনের দৃষ্টি এড়িয়ে অগ্রাধিকার পেতে ও নিজ নিজ কাজ সহজে করাতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, উপজেলার বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি অফিসে এমন কিছু ব্যক্তির আনাগোনা বেড়েছে, যারা নিজেদের জামাত বা ইসলামপন্থী পরিচয় দিয়ে কাজের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাচ্ছেন। সাধারণ মানুষ যখন দীর্ঘক্ষণ লাইন ধরে অপেক্ষায় থাকে, তখন এই ‘ধর্মীয় লেবাসধারী’ ব্যক্তি অফিস কক্ষে ঢুকে নিজেদের কাজ আগে করিয়ে নিচ্ছেন।
একজন ভুক্তভোগী সেবাপ্রার্থী বলেন, আমরা সকাল ৯টা থেকে লাইনে বসে থাকি, আর তারা এসে বলে ‘নেতার লোক’, ‘ইসলামী সংগঠনের মানুষ’। এরপরই তাদের কাজ হয়ে যায়। অথচ কেউ জানে না, তারা আসলেই কে।”
অনুসন্ধানে আরও জানা গেছে, যারা এই পরিচয় নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন, তাদের অনেকেরই জামাতে ইসলাম কিংবা কোনো ধর্মভিত্তিক সংগঠনের সঙ্গে কোনো সরাসরি সংযোগ নেই। এমনকি জামাতের আদর্শ বা শৃঙ্খলার সঙ্গেও তারা নিজেদের জীবন পরিচালিত করেন না। শুধুমাত্র ইসলামি লেবাসকে ব্যবহার করে তারা নিজেদের সামাজিক ও প্রশাসনিক ফায়দা আদায়ের পথ খুঁজে নিচ্ছেন।
একজন রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলেন, এটি একধরনের সাংস্কৃতিক প্রতারণা ও নৈতিক দুর্বলতার প্রতিফলন। ছদ্ম ধর্মীয় পরিচয়ে সুবিধা নেওয়া শুধু সমাজের প্রতি অন্যায় নয়, বরং এটি ইসলাম ধর্মের ভাবমূর্তিকেও প্রশ্নবিদ্ধ করে।”
সবচেয়ে আশঙ্কাজনক বিষয় হলো— জামাত কিংবা অন্যান্য ইসলামি সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে এসব ভুয়া লেবাসধারীদের বিষয়ে কোনো বিবৃতি বা প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা এখনো নেওয়া হয়নি। এতে সাধারণ মানুষের মাঝে সন্দেহ জন্ম নিচ্ছে যে, এসব প্রতারক ব্যক্তিরা আদৌ কি সংগঠনের ছায়ায় থাকছেন?
সচেতন মহল মনে করছেন, এখন সময় এসেছে ইসলামি দল ও সংগঠনগুলোর স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার। প্রকৃত সদস্যদের তালিকা প্রকাশ এবং জনসাধারণকে সচেতন করার আহ্বান জানানো হচ্ছে।
সুন্দরগঞ্জের এই পরিস্থিতি শুধুই একটি উপজেলার সমস্যা নয়, বরং এটি বাংলাদেশের বৃহত্তর সমাজ ব্যবস্থায় ক্রমবর্ধমান নৈতিক অবক্ষয়ের ইঙ্গিত। ধর্মীয় লেবাস ব্যবহার করে যারা সমাজে স্বার্থসিদ্ধি করছেন, তারা শুধুমাত্র ব্যক্তিগত সুযোগ নিচ্ছেন না— বরং তারা ইসলাম, আদর্শিক সংগঠন এবং সাধারণ মানুষের বিশ্বাসের উপর আঘাত হানছেন।
✅ ধর্মীয় লেবাসধারীদের প্রকৃত পরিচয় যাচাই
✅ সরকারি-বেসরকারি দপ্তরে ‘চেনা পরিচয়ে’ নয়, নিয়ম অনুযায়ী সেবা প্রদান
✅ ইসলামি সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে ছদ্মপরিচয় ব্যবহারকারীদের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ
✅ জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং মিডিয়ায় এ বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ
সামাজিক স্থিতি ও ধর্মীয় মূল্যবোধ রক্ষায় এখনই সময়— ছদ্মবেশীদের বিরুদ্ধে একযোগে সমাজ, প্রশাসন এবং সংগঠনের সম্মিলিত অবস্থান নেওয়ার।