এক সেতু পাল্টে দিল’২০ গ্রাম গোপালগঞ্জের বৌলতলী সেতু

সাজিম মোল্যা গোপালগঞ্জ।
গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার অন্তত ২০টি গ্রামের মানুষের জীবন পাল্টে দিয়েছে মধুমতী বিলরুট চ্যানেলের ওপর নির্মিত বৌলতলী সেতু। বছরের পর বছর যাতায়াতের সীমাহীন কষ্ট, সময়ের অপচয় এবং অর্থনৈতিক ক্ষতির অবসান ঘটিয়ে সেতুটি এখন হয়ে উঠেছে এলাকার মানুষের আর্থসামাজিক উন্নয়নের মাইলফলক। জানা গেছে, সদর উপজেলার বৌলতলী, সাতপাড়, সাহাপুর ও করপাড়া ইউনিয়নের ২০টি গ্রামের মানুষের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন ছিল বৌলতলী সেতু। সেতু না থাকায় প্রতিনিয়ত সমস্যার মুখে পড়তে হতো এসব গ্রামের কয়েক লাখ মানুষকে। নদী পারাপারে ভোগান্তি, রোগী পরিবহনে দেরি, শিক্ষার্থীদের স্কুল-কলেজে যাতায়াতে ঘণ্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করতে হতো। পরে মানুষের ভোগান্তির কথ্য চিন্তা করে মধুমতীর বিলরুট চ্যানেলের ওপর ২০০ মিটার দৈর্ঘ্য আর ৭ দশমিক ৩২ মিটার গ্রন্থের বৌলতলী সেতুটি নির্মাণ করে স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী অধিদপ্তর। গোপালগঞ্জ এলজিইডি অফিস সূত্রে জানা যেছে, ২০১৭ সালের ১২ জুলাই জেলার গুরুত্বপূর্ণ পল্লি অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ২৩ কোটি টাকা ব্যয়ে শুরু হয় সেতুটির নির্মাণকাজ। চুক্তি অনুযায়ী ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। তবে পশ্চিম পাড়ের সংযোগ সড়ক নির্মাণের কারণে ২০১৩ সালের ৩০ নভেম্বর সেতুটির নির্মাণকাজ শেষ হয়। সেতুটি নির্মাণ হওয়ায় ২০ গ্রামের মানুষের দীর্ঘদ্দিনের স্বপ্ন বাস্তবায়ন হয়েছে। এখন আর কাউকে খেয়াঘাটে মাঝির জন্য অপেক্ষা করতে হয় না। নৌকায় করে রোগী এনে অ্যাম্বুলেন্সে তোলারও প্রয়োজন পড়ে না। শিক্ষার্থীরা রোদ-বৃষ্টি উপেক্ষা না করে সরাসরি গাড়িতে করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পৌঁছাতে পারছে। এ পরিবর্তন শুধু স্বপ্ন নয়, বাস্তব। এটি চালু হওয়ার পর এলাকাবাসী এখন সহজেই কম সময়ে কাশিয়ানী উপজেলার রামদিয়া, ঘোনাপাড়া, ফুকরা, রাজপাট, ওড়াকান্দি প্রভৃতি এলাকায় যাতায়াত করতে পারছে। ফলে ব্যবসায়ী, কৃষক, শ্রমিকসহ সব শ্রেণির মানুষের সময় ও অর্থ দুই সাশ্রয় হচ্ছে। কৃষকরা দ্রুত তাদের পণ্য বাজারজাত করতে পারছেন এবং ভালো দাম পাচ্ছেন। জেলেরা স্বল্প খরচে মাছ বাজারে আনতে পারছেন। সেতুটি চালু হওয়ায় সমগ্র এলাকার অর্থনৈতিক চিত্র বদলে গেছে। জমির দাম বেড়েছে। কৃষিপণ্য ও মাছ দ্রুত বাজারজাত হওয়ায় দাম কমছে। বৌলতলী গ্রামের হাফিজ শিকদার ও ফজলুল হক বলেন, ‘আগে শহরে যেতে হলে নৌকায় মধুমতী নদী পার হতে হতো। এতে একদিকে যেমন সময় নষ্ট হতো, অন্যদিকে খরচও বেশি হতো। এখন সহজেই আমরা শহরে যেতে পারছি।’ কৃষক রফিক মুন্সী বলেন, ‘সেতু না থাকার আগে কৃষিপণ্য শহরে নিতে অনেক বমস্যায় পড়তে হতো। তবে সেতুটি হওয়ায় আমরা সহজেই কৃষিপণ্য বাজারে নিতে পারছি। সময়মতো বাজারে নিতে পারায় বৃদিপণ্য যেমন নষ্টের হাত থেকে বেঁচে যাচ্ছে, তেমনি দামও ভালো পাচ্ছি।’ বৌলতলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সুকান্ত বিশ্বাস বলেন, ‘আগে নদীর দুই পারের ২০ গ্রামের মানুষ যাতায়াতে সীমাহীন হয়রানির শিকার হতো। তবে সেতুটি নির্মাণ হওয়ায় এখন মানুষ গ্রাম থেকে সহজেই শহরে যেতে পারছে।। তাদের কষ্ট কমে গেছে। এলাকার মানবসম্পদ উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে যোতুটি। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) নির্বাহী প্রকৌশলী এহসানুল হক বলেন, ‘নতুন রাস্তা বা সেতু এলাকার মানুষের জীবনে সরাসরি প্রভাব ফেলে। বৌলতলী সেতুও এর ব্যতিক্রম নয়। এখানে ২০ গ্রামের মানুষের জীবনযাত্রায় সরাসরি পরিবর্তন এসেছে, যা আর্থিক, সামাজিক ও মানবিক সব দিক থেকেই ইতিবাচক। মধুমতী বিলরুট চ্যানেলের ওপর বৌলতলী সেতুটি কেবল একখণ্ড কংক্রিটের সেতু নয়, এটি এই এলাকার মানুষের আও উন্নয়নের প্রতীক।”