গাজীপুরে হৃদয় হত্যা: প্রধান আসামি বেলালসহ গ্রেফতার ৩

গাজীপুর মহানগরের কোনাবাড়ীতে গার্মেন্টস শ্রমিক হৃদয়কে (২০) পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় প্রধান আসামি বেলাল হোসেনসহ তিনজনকে গ্রেফতার করেছে র্যাব ও পুলিশ। গত শনিবার (২৮ জুন) ভোরে গ্রীণল্যান্ড গার্মেন্টস লিমিটেড কারখানায় এ ঘটনা ঘটে। চুরির অভিযোগে হৃদয়কে নির্মমভাবে রশি দিয়ে বেঁধে নির্যাতনের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে দেশজুড়ে তীব্র চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়।
নিহত হৃদয় টাঙ্গাইল জেলার ঘাটাইল উপজেলার আবুল কালামের ছেলে। তিনি কোনাবাড়ীর হারিনাবাড়ী এলাকায় মা ও ছোট বোনের সঙ্গে একটি ভাড়া বাসায় থাকতেন এবং গ্রীণল্যান্ড গার্মেন্টস কারখানায় অস্থায়ী মেকানিক্যাল মিস্ত্রী হিসেবে কাজ করতেন।
হত্যাকাণ্ডের ঘটনার পর নিহত হৃদয়ের বড় ভাই লিটন মিয়া (৩৬) কোনাবাড়ী থানায় অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলার পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার (১ জুলাই) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে র্যাব-১, পোড়াবাড়ী ক্যাম্পের একটি টিম গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গাজীপুর মহানগরের চান্দনা চৌরাস্তা এলাকা থেকে প্রধান আসামি বেলাল হোসেনকে (৪৫) গ্রেফতার করে। তিনি সিরাজগঞ্জ জেলার কাজীপুর উপজেলার পাটাগ্রাম (পূর্ব বেদগাড়ী) গ্রামের বাসিন্দা এবং কারখানাটির নিরাপত্তাকর্মী ছিলেন।
র্যাব-১ এর পুলিশ সুপার কে এম এ মামুন খান চিশতী জানান, গ্রেফতারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে বেলাল হৃদয়কে পিটিয়ে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন।
এছাড়াও মামলার অপর দুই আসামি—শফিকুল ইসলাম (৩০) ও আরেক বেলাল হোসেনকে সোমবার মধ্যরাতে গ্রেফতার করে কোনাবাড়ী থানা পুলিশ। শফিকুলকে হরিনাচালা (সেলিম নগর) এলাকা থেকে এবং অপর বেলালকে কুদ্দুসনগর এলাকা থেকে আটক করা হয়। তারা দুজনেই গ্রীণল্যান্ড গার্মেন্টস কারখানার নিরাপত্তাকর্মী হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
গ্রেফতারকৃত শফিকুল ইসলাম রাজশাহী জেলার বাগমারা উপজেলার হাটমাদনগর গ্রামের বাসিন্দা এবং অপর বেলাল গাজীপুরের কুদ্দুসনগরের স্থানীয় বাসিন্দা।
কোনাবাড়ী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. সালাহ উদ্দিন জানান, “তিনজন আসামিকে গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। হৃদয় হত্যাকাণ্ডে জড়িত বাকি আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।”
এদিকে হৃদয়ের নির্মম মৃত্যুতে গার্মেন্টস শ্রমিকদের মধ্যে ক্ষোভের বিস্ফোরণ ঘটে। রবিবার সকাল থেকে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা টাঙ্গাইল-গাজীপুর মহাসড়ক অবরোধ করে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভে নামে। ঘণ্টাব্যাপী এই অবরোধে মহাসড়কে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। পরে পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসনের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়।
হৃদয়ের হত্যাকাণ্ড গার্মেন্টস খাতের শ্রমিক নিরাপত্তা এবং আইনশৃঙ্খলা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে। সাধারণ মানুষ ও শ্রমজীবী জনগণের মধ্যে দেখা দিয়েছে বিচারের দাবিতে প্রবল গণচাপ।