হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) কে কটুক্তির অভিযোগ।মোঃ আহমুদুল হাসান, লালমনিরহাট জেলা প্রতিনিধি।

ঘটনাটি রবিবারের(22 জুন,2025)৷ বেলা দুইটার পর পর৷ লালমনিরহাট গোসালা বাজারের হানিফ পাগলার মোড়ে হিন্দু দুই নাপিতের(বাবা-ছেলে) বিরুদ্ধে “ইসলাম ও মহানবী(সা.)” এর বিরুদ্ধে আবমাননাকর মন্তব্যের জেরে বাজারের উপস্থিত জনতা তাদের দোকান ঘেরাও করে ও আটক করে পুলিশের হাতে সোপর্দ করে৷
অভিযুক্ত দুই ব্যক্তি হলেন –
1) পরেশ চন্দ্র শীল (69)
2) বিষ্ণু চন্দ্র শীল (35)
দুই অভিযুক্তকে পুলিশের হাতে সোপর্দের পর মামলা প্রক্রিয়া নিশ্চিতের জন্য জনতা থানায় অবস্থান নেয়৷ তাদের শাস্তির দাবীতে থানায় স্লোগান দিতে থাকে৷ উপস্থিত জনতাকে শান্ত করার উদ্দ্যেশ্যে থানার ওসি দেশের আইন নিয়ে জনতাকে অবহিত করে ও অভিযুক্তদেরকে দেশের আইন দ্বারা বিচার করা হবে প্রতিশ্রুতি দেন৷ এর মাঝে সেনাবাহিনী থানায় এসে পৌছায় ও পরিস্থিতি যেন অশান্ত না হয়ে ওঠে সেই পদক্ষেপ গ্রহণ করে৷ পরিস্থিতি কিছুক্ষণের মাঝেই শান্ত হয়ে যায়৷ এরপর যথাপোযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে অভিযুক্তদেরকে ‘ধর্ম অবমাননার’ মামলা দেয়া হয় ও কোর্টে পাঠিয়ে দেয়া হয়৷
ঘটনার পিছনের ঘটনা:
অভিযুক্ত পরেশ চন্দ্র শীল ও বিষ্ণু চন্দ্র শীলের ব্যাপারে দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় মানুষের অভিযোগ এই যে, তারা দুজন (বিশেষত পরেশ চন্দ্র শীল) ইসলাম বিদ্বেষী মনোভাব পোষণ করে ও মাঝে মাঝে বিদ্বেষ মূলক কথা বলে থাকে৷ যারা তাদের কাছে চুল কাটাতে যান, তাদের অনেকের সাথে(বিশেষ করে যারা অল্প বয়সি) সুযোগ পেলে প্রায়শই পরেশ চন্দ্র ‘ধর্ম’ নিয়ে আলাপন শুরু করে ও আর অনেক সময় সেই আলাপনে তার ইসলাম বিদ্বেষ ফুটে ওঠে৷
গত 20শে জুন (শুক্রবারে) তার দোকানে 19 বছর বয়সি মো: নাজমুল ইসলাম চুল কাটাতে গেলে পরেশ চন্দ্র শীল তার অভ্যাসগত ধারাবাহিকতায় সেই যুবকের সাথে ‘ইসলাম ধর্ম ও রাসুল(সা.)’ নিয়ে আলাপন শুরু করে দেয়৷ আলাপনের এক পর্যায়ে সুযোগ পেয়ে ‘ইসলাম ধর্ম ও মহানবী(সা.)’ কে নিয়ে বাজে মন্তব্য শুরু করে৷ অভিযুক্ত পরেশ ‘তোমাদের নবী 11টা বিয়ে করছে৷ তার সবচেয়ে ছোট বৌ আয়েশার বয়স 6 বছর৷ তোমাদের মহানবী কিভাবে পারলো একটা ছোট্ট মেয়েকে বিয়ে করতে৷ তার যৌন ক্ষমতা অনেক৷ তাই সে অনেক বিয়ে করছে৷” ইত্যাদি নানা বাজে মন্তব্য করে৷ এমনকি ‘কাবা ঘর হাজার হাজার বছর আগে শিবলিংগের পাথর দিয়ে তৈরি’ এমন মন্তব্যও সে করেছে বলে অভিযোগ ওঠে৷ পরে এই ঘটনার জানাজানি হলে উপরে উল্লেখিত 22শে জুনের ঘটনাটি ঘটে৷
লালমনিরহাটের মুসল্লিদের প্রতিবাদ আন্দোলন:
এহেন জঘন্য ঘটনার যেন পুনরাবৃত্তি না ঘটে সেজন্য স্থানীয় জনগণ প্রশাসনকে জানিয়ে 24 শে জুন বাদ যোহর একটা প্রতিবাদ সমাবেশের ব্যবস্থা করেছে৷
এখন পর্যন্ত পরিস্থিতি শান্ত ও অনুকূল রয়েছে৷ তবে কিছু মিডিয়া শান্তিপূর্ণ এই পরিবেশ নিয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছে৷
10 টাকা কান্ড:
এক ভিডিও বার্তায় অভিযুক্ত পরেশ চন্দ্র শীলের ছেলের বৌ দাবী করেন যে, তার শ্বশুরের সাথে এক লোকের 10 টাকা নিয়ে কথা কাটাকাটি হয় ও এর জের ধরে পরেশ বাবুকে মিথ্যা অপবাদ দেয়া হয়৷ যা উত্তেজনার সৃষ্টি করে ও মামলা পর্যন্ত পৌছায়
কিন্তু, এখানে অনেক প্রশ্ন থেকে যায়! যখন জনতা তাদেরকে তার দোকানে ঘেরাও করে ও পুলিশে সোপর্দ করে তখন পরেশ চন্দ্র শীল ও তার ছেলে কথা বলার সময় একবারও এমন দাবী উত্থাপন করেন নি৷ যদিও তাদেরকে ঘেরাও করার সময় তাদেরকে কথা বলার সুযোগ দিয়েছিলো জনতা৷ তখন আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য এমন দাবী করেননি পরেশ চন্দ্র শীল ও তার ছেলে বিষ্ণু চন্দ্র শীল৷ আবার, অভিযুক্তদেরকে গ্রেফতার করার পর পুলিশ অভিযুক্তদের সাথে কথা বলেছে৷ ঘটনা যদি এমনই হতো, তাহলে দায়িত্বপালনরত পুলিশ বা ওসি থানার বাইরে উত্তেজিত জনতার সাথে কথা বলার সময় এই ’10 টাকা কান্ডে’র কথাও উল্লেখ করতেন যেন জনতা প্রকৃত ঘটনা জানতে পারেন৷ কিন্তু, 22শে জুন উত্তেজিত জনতা থানায় অবস্থানকালে দায়িত্বপালনরত পুলিশ থেকেও ব্রিফিং এর সময়কালে অভিযুক্ত থেকে এমন কোনো অভিযোগের কথা শোনা যায় না৷
তাই সময় অনেক সময় পেরিয়ে যাবার পর এমন দাবী এক মিথ্যা দাবী ও অপপ্রচার চালিয়ে শান্তিমূলক আইনি প্রক্রিয়াকে অশান্তিমূলক করার প্রয়াস বলে দাবী করছেন স্থানীয় জনতা৷ ঘটনার প্রকৃত অবস্থা না জেনেই অনেক মিডিয়া ও সোসাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সার উদ্দেশ্যপ্রণদিতভাবেই তা প্রচার করছেন৷
এমন পরিস্থিতিতে অপপ্রচার না করা ও অপপ্রচারে কান না দেয়ার অনুরোধ করা যাচ্ছে