আল্লার জমিন কতো জুলুম বাজ করে দাবি তার মালিকানা,

মুহাম্মদ রাওফুল বরাত বাঁধন ঢালী রংপুর বিভাগীয় চীপ।

রংপুর বিভাগ বিরামপুরে নোটিশ ছাড়া বস্তি উচ্ছেদের পর খোলা আকাশের নিচে ৬২ পরিবার ও ৫০০ শোর বেশি সাধারণ জনগণ।

রংপুর বিভাগ বিরামপুর দিনাজপুর জেলার বিরামপুর পৌর পশুহাট এলাকায় আদালতের নির্দেশনায় বস্তি উচ্ছেদের পর খোলা আকাশের নিচে অবস্থান করছিলেন সেখানকার ৫০০ শোর বেশি সাধারণ বাসিন্দারা।

দিনাজপুরের বিরামপুর পৌর পশুহাট এলাকায় আদালতের নির্দেশনায় বস্তি উচ্ছেদের পর খোলা আকাশের নিচে অবস্থান করছেন সেখানকার বাসিন্দারা। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে
দিনাজপুরের বিরামপুরে আদালতের নির্দেশে এক মামলার বাদীকে জমির দখল বুঝিয়ে দিতে পৌর পশুহাটসংলগ্নে একটি বস্তি উচ্ছেদ করা হয়েছে। এতে প্রায় ৫০০ জন নারী-পুরুষ ও শিশু ঘর হারিয়ে খোলা আকাশের নিচে অমানবিক অবস্থান করছেন।

গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা থেকে ২টা পর্যন্ত পৌরসভার পুরাতন বাজার এলাকায় এই উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়। জেলা আদালতের নাজির মো. শাহিন ও পুলিশের উপস্থিতিতে বুলডোজার দিয়ে বস্তির ঘরবাড়ি ও পশুহাটের স্থাপনা গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়।

উচ্ছেদ হওয়া বস্তির বাসিন্দারা জানান, তাঁরা দিনমজুর। পুরুষদের কেউ কেউ দোকানে বা পরিবহনশ্রমিক হিসেবে কাজ করেন, নারীরা শহরের চালকল ও চাতালের শ্রমিক। তাঁদের অভিযোগ, পূর্বের কোন নোটিশ ছাড়া বাড়িঘর থেকে জিনিসপত্র সরাতে মাত্র এক ঘণ্টা সময় দেওয়া হয়। এ সময় সরিয়ে ফেলা কিছু আসবাবে আগুন ও ধরিয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী সাধারণ জনগণ।

উচ্ছেদের সময় পৌর পশুরহাটের অফিস কক্ষ, টোল আদায়ের ঘর ও গরুর ছাউনি ভেঙে ফেলা হয়। পাশেই পুরাতন বাজারের পানের আড়ত ও জালের শেডও গুঁড়িয়ে দেওয়া হয় আনুমানিক আরো ১০০ দোকান পাট বিনা নোটিশ এ বোলডুজার দিয়ে গুড়িয়ে দেয়। পশুহাট চত্বরে থাকা পাঁচটি প্রাচীন বট বৃক্ষ ও পাকুড় বৃক্ষ কেটে ফেলা হয়। জমির দখল বুঝিয়ে দেওয়ার আগে হাট কর্তৃপক্ষ বা বস্তিবাসীকে কোনো ধরনের দাপ্তরিক নোটিশ দেয়নি বলে অভিযোগ তাদের । এ নিয়ে এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে।

বস্তির বাসিন্দা নাছিমা বেগম বলেন, ‘৫০ বছর হলো এই বাড়িতে আমি থাকি বিয়ের পর হইতে। তখন থেকে আমি আমার স্বামী, তিন পুত্র সন্তান ও নাতি-নাতনি নিয়ে এই বাড়িত আছি। তাঁরা (বাদী) কেউ যদি আদালতের রায়ে এই জমি পায়, তাইলে আমরা এখান থেকে চলে যাবো। আমাদের কে আগে না কোন প্রকার নোটিশ না দিয়ে আজকপ বুলডোজার দিয়ে আমাদের বাড়িঘর ভেঙ্গে চুরে তছনছ করে দিয়েছে । বাড়ির জিনিসপত্র সরে নিবার জন্য এক ঘণ্টা সময় দিয়েছে। এখন আমরা এতো গুলো মানুষ কোথায় যাবো, রাতে কোথায় থাকমো।’

আদালতের আদেশ অনুযায়ী, ২০১৭ সালে পৌর শহরের সওদাগর মহল্লার বাসিন্দা ফৌজিয়া ইসরাইল পুরাতন বাজার এলাকার পৌর পশুহাট চত্বরে ১২১ নম্বর দাগে ১ একর ৫৮ শতাংশ জমির মালিকানা দাবি করে আদালতে মামলা করেন। মামলায় তাঁর স্বামী, দেবর ও দুই ননদকে বিবাদী করা হয়। গত ২২ মে আদালতের যুগ্ম জেলা জজ দেলোয়ার হোসেন মামলার বাদীকে ১২ জুনের মধ্যে জমির দখল বুঝিয়ে দিতে জেলা প্রশাসন ও পুলিশকে নির্দেশ দেন।
এরপর গতকাল সকালে নাজির মো. শাহিন ও উপপরিদর্শক (এসআই) আবদুর রহিমের নেতৃত্বে ৩০ জন পুরুষ কনস্টেবল ও ১০ জন নারী কনস্টেবল ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে উচ্ছেদ অভিযান চালান।

বস্তির বাসিন্দা ইসাহাক আলী (৫২) বলেন, ‘আমি জন্মের পর থেকে এখানে থাকি আনুমানিক ৭০ ৮০ বছর যাবত আমরা এখানে বসবাস করছি, আজ জবরদস্তি করে আমার বাড়িঘর উচ্ছেদ করে দিল। আমি বাজারে দোকানে কাজ করি। বাড়িঘর সব হারালাম। এখন বউ-বাচ্চা নিয়ে কোথায় থাকব। রাতে ফাঁকা মাঠে থাকবো এ কেমন দেশ এ কেমন স্বাধীনতা।’

পুরাতন বাজারের বাসিন্দা ও পৌর পশুহাটের অংশীদার আবদুর রব ওরফে তোতা বলেন, ‘আমি পৌর পশুহাটের একজন অংশীদার। হাটের স্থাপনা উচ্ছেদ হবে আমরা কেউ জানি না। হাটের অবকাঠামো ও শেড ভেঙেছে, হাটের চত্বরে পাঁচটি বটগাছ ও পাকুড়গাছ কেটে ফেলেছে। কোনো নোটিশ ছাড়াই কাপুরুষ প্রশাসনের লোকজন এসব সরকারি সম্পদ নষ্ট করেছে। আর মামলার বাদী তাঁর স্বামী, তাঁর ভাসুর ও বোনদের বিবাদী করে মামলার রায় নিজের পক্ষে নিয়েছে। এটি আবার কেমন মামলা? এটি তো শুভংকরের ফাঁকি কতো টাকার বিনিময়ে এ রায় বহাল করেছে আদালত তাই জানতে চায় ৫০০ শোর ও অধিক মানুষ। জায়গা দখল করে আছে বস্তিবাসী, পৌর কর্তৃপক্ষ ও পশুহাট কর্তৃপক্ষ। মামলায় তাদের বিবাদী না করে পরিবারের লোকজনকে বিবাদী করা হয়েছে।’

উচ্ছেদের সময় পৌর পশুহাটের অফিস কক্ষ, টোল আদায়ের ঘর ও গরুর ছাউনি ভেঙে ফেলা হয়। পশুহাট চত্বরে থাকা পাঁচটি বট ও পাকুড়গাছ কেটে ফেলা হয়।এ বিষয়ে জেলা আদালতের নাজির মো. শাহিন বলেন, ‘আদালতের নির্দেশনা মোতাবেক মামলার বাদীকে জমির দখল বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য আমরা এসেছি। এ জমিতে পশুহাট বসে, সেটি আদালতের রায়ে উল্লেখ নেই। আর আমিও জানতাম না। আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা কাজ করব।’ উচ্ছেদের আগে বস্তিবাসী ও পৌর কর্তৃপক্ষকে নোটিশ দেওয়া হয়েছিল কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘না, দেওয়া হয়নি।’

বিরামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পৌর প্রশাসক নুজহাত তাসনীম আওন সাংবাদিকদের বলেন, ‘আদালতের নির্দেশনায় তাঁরা (আদালত) পৌর পশুহাট এলাকায় উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করেছেন। পৌর প্রশাসক হিসেবে আমাকে বিষয়টি আদালত থেকে জানানো হয়নি। আর মামলায় পৌর কর্তৃপক্ষকেও বিবাদী করা হয়নি। হাটটি প্রতিবছর সরকারিভাবে ইজারা দেওয়া হয়। সেখানে উচ্ছেদ অভিযানের মাধ্যমে হাটের স্থাপনা ও গাছ নষ্ট করা হয়েছে। এ জন্য পৌরসভার পক্ষ থেকে আইনি প্রক্রিয়ায় আদালতে আপিল করা হবে। সরকার প্রধান ডাক্তার মোঃ ইউনুস স্যারের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হইলো ১৯৭৫ সালে যে জুলুম চলমান ছিলো তা ২০২৪,২০২৫ শে মানুষ আবার অনুভব করছে।