কুড়িগ্রাম ফুলবাড়ী থানার একটি মামলার এক বৃদ্ধ ভিকটিমের ক্ষোভ – কাইও যেন থানাত যায়া মামলা না করে।

মোঃএরশাদুল হক
বিশেষ প্রতিনিধি

কুড়িগ্রাম ফুলবাড়ী থানার একটি মামলার এক বৃদ্ধ ভিকটিমের ক্ষোভ – কাইও যেন থানাত যায়া মামলা না করে
কুড়িগ্রাম ফুলবাড়ী থানার একটি মামলার এক বৃদ্ধ ভিকটিমের ক্ষোভ – কাইও যেন থানাত যায়া মামলা না করে
ট্যাকা- পইস্যা নাই- গরীব মাইনষ্যক কাই কত মারে মারুক। মারিমারি শ্যাষ করি দেউক, মারি ফেলাউক, ঘরবাড়ি ভাংচুর করি ফেলাউক, দখল করুক, লুটপাট করুক তার পরেও কাইও যেন থানাত যায়া মামলা না করে। ট্যাকা নাইগব্যার নয় মনে করি থানাত মামলা করলোং আর ট্যাকাওয়ালা মামলার ৬ নম্বর আসামি এলাকার নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের কাশিপুর ইউনিয়নের যুগ্ম আহবায়ক সোহেল মিয়ার নেতৃত্বে অন্যান্য আসামিরা হামার বিরুদ্ধে কাউন্টার মামলা করিল। পুলিশ হামাকে ধরি নিয়া যায়া জেল খাটাইল আর থানাত দায়ের করা হামার মামলার আসামি থানাত বসি বিড়িটানে আর হুমকি দেয় থানাত মামলা করার শখ মিটি দিমো।

আজ ৩১ মে শনিবার কুড়িগ্রাম জেলা ফুলবাড়ী থানার মামলা নং- ২৬/ জিআর নং-২৬ তাং- ৩০/১/২৫ ইং এর বাদী মাইদুল ইসলামের বৃদ্ধ পিতা ভিকটিম ইব্রাহিম আলী(৫৫) কুড়িগ্রাম শহরে সাংবাদিকের কাছে অভিযোগ করতে এসে উপরোল্লিখিত আক্ষেপের কথা বলেন। ভিকটিম ইব্রাহিম আলী অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আক্ষেপের কথা বলতে গিয়ে আরও বলেন, ট্যাকা দিয়া হাসপাতাল থাকি চিকিৎসার কাগজপত্রও উল্টাপাল্টা করা যায় কোনদিনও ভাবি নাই।

এ ব্যাপারে ভিকটিম ইব্রাহিম আলী ঘটনার বিবরণ দিতে গিয়ে বলেন, গত ২৭ জানুয়ারি সকাল ৮ টার দিকে পূর্ব শত্রুতার জের ধরে উল্লেখিত মামলার আসামিরা পরিকল্পিত ভাবে তার নিজ বাড়ি যাওয়ার পথ আটকিয়ে মাথায় রামদা দিয়ে কোপ দিয়ে তাকে রক্তাক্ত জখম করে। এ সময় তার পুত্র হাফিজুরকে ছোরা দিয়ে মাথায় কোপ দিলে সেও রক্তাক্ত হয় এবং অপর দুই পুত্র মামলার বাদী মাইদুল ও মফিজুলকে লাঠি দিয়া মারতে- মারতে অজ্ঞান করে।

পরে আসামিরা ভিকটিম ইব্রাহিম আলীর বাড়িতে অনধিকার প্রবেশ করে ঘরের আসবাবপত্র ভাংচুর, অর্থ, স্বর্ণ লুটপাট করে। এসময় বাধা দিতে গেলে তার কন্যা রেজিয়ার বাম হাতের হাড় ভেঙ্গে দেয়া হয় এবং স্ত্রী মমিনার ডান পায়ের গোড়ালিতে মাছ মারার কোচা দিয়া রক্তাক্ত জখম করা হয়। এ সময় ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয়রা ভিকটিম সকলকে উদ্ধার করে কুড়িগ্রাম সদর হাসপাতালে ভর্তি করায়। সকলে ২৭-৩০ জানুয়ারি/২৫ইং চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফিরে গেলে ভিকটিম ইব্রাহিমের ছেলে মাইদুল ফুলবাড়ী থানায় ঘটনার সাথে জড়িত ১১ জনকে আসামি করে মামলার এজাহার দায়ের করে।

ভিকটিম ইব্রাহিম আলী অভিযোগ করে বলেন, ঘটনা বেগতিক মনে করে মামলার আসামিরা আদালতের গিয়ে আমাদের বিরুদ্ধে উল্টা অভিযোগ করলে আদালতের আদেশ ক্রমে ফুলবাড়ি থানার মামলা নং-৯, জি আর নং-৩৬ এবং গত ১৭ মার্চ/২৫ ইং তারিখে ফুলবাড়ি থানায় ৬৪/২৫ কাউন্টার দুটি মামলা করে আমাদের হয়রানি করা হচ্ছে। উক্ত কাউন্টার মামলায় থানার পুলিশ আমাদের ধরে নিয়ে গেলে বিজ্ঞ আদালত গত রমজান মাসে আমার ছেলে মাইদুলকে ২৬ দিন জেল হাজতে রাখে। পরে আমরা জামিনে মুক্ত হই।

অপরদিকে আমার ছেলের দায়ের করা থানার মামলায় সুবিধা বা জামিন পাবার আশায় আসামিরা মেডিকেল রিপোর্ট যাতে ৩২৬ না আসে এর জন্য হাসপাতালে গিয়ে টাকার জোরে আমার মাথার সিটি স্ক্যান এর ফ্লিম জনৈক মুসলিম নামের অজ্ঞাত ব্যক্তির একটি সিটি স্কেনের ফ্লিম উল্টাপাল্টা করে আমার প্রকৃত রিপোর্টকে আড়াল করার ব্যবস্থা করা হয় এবং অন্যান্য ভিকটিমদের এ পর্যন্ত কোন মেডিকেল রিপোর্ট থানা থেকে চাওয়া বা হাসপাতাল থেকে প্রস্তুত করা হয় নি।

এরই ফাঁকে আসামিরা থানায় দায়ের করা আমার ছেলের মামলায় আদালত থেকে জামিন নিয়ে পূনঃরায় হুমকি দিচ্ছে। ওই মামলার জামিন না নেয়া ৩ নং আসামি ঢাকায় চাকুরিতে অবস্থান করলেও জামিন না নেয়া অপর ১ নাম্বার আসামি নুরুল হক থানাতেই বসে বিড়ি ফুকাচ্ছে আর আমার ছেলে থানায় কেন মামলা করেছে মামলা করার শখ মিটিয়ে দেবে বলে সকল ভিকটিমকে হুমকি দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেন।

ভিকটিম ইব্রাহিম আলী তার জখমি মাথার সিটি স্ক্যানের ফ্লিম উল্টাপাল্টা করার বিষয় স্পষ্ট করতে গিয়ে বলেন, হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর দায়িত্বরত চিকিৎসক আমার মাথার সিটি স্ক্যান করার নির্দেশ দিলে কুড়িগ্রাম সদর হাসপাতালে সিটি স্ক্যান না থাকায় পরদিন ২৮ জানুয়ারি কুড়িগ্রাম সদর হাসপাতাল সংলগ্ন সেন্ট্রাল ক্লিনিক ইউনিট-২ তে সিটি স্ক্যান করা হয়। যার সিরিয়াল আইডি নং- ১৬৪৭৯।

সেদিনই সিটি স্ক্যানের ফ্লিম নিয়ে হসপাতালে গেলে সেখানে দায়িত্বগত চিকিৎসক সিটি স্ক্যানের ফ্লিম অনুযায়ি চিকিৎসা চালাতে থাকেন এবং ৩ দিন পর ৩০ জানুয়ারি সকল ভিকটিমকে ছাড়পত্র প্রদান করেন। বাড়িতে যাওয়ার পর ভিকটিম ইব্রাহিম আলী নিজেকে অসুস্থ মনে করায় ভিকটিমের ছেলে মাইদুল ভিকটিম ইব্রাহিম আলীকে ঢাকায় নিয়ে গিয়ে ইবনে সিনা হাসপাতালে ২১ মে/২৫ইং ডাঃ মো: শাহাদাত হোসেন এবং ২৪ মে/২৫ইং অধ্যাপক ডাঃ মো: আব্দুল্লাহ আলমগীর- এর চিকিৎসা নিতে গিয়ে জানতে পারেন তার মাথার সিটি স্ক্যানের ফ্লিমটি জনৈক মুসলিম নামের অন্যজনের যেটি কুড়িগ্রাম সেন্ট্রাল ক্লিনিক ইউনিট- ২ এর সিটি স্ক্যান আইডি নং-১৬৪৮৪ তাং ২৮ জানুয়ারি/২৫ তারিখে প্রদান করা হয়েছে।

বিষয়টি জানার পর ভিকটিম ইব্রাহিম আলী কেন তার সিটি স্ক্যানের ফিল্মটি অন্য জনের প্রদান করা হয়েছে এবং সেই হিসেবে তার ভুল চিকিৎসা করা হলো কিনা এবং উক্ত ঘটনার পুলিশ কেসে ভুল সার্টিফিকেট প্রদান করা হলো কিনা জানতে গিয়ে কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের ডাক্তার ও সেন্ট্রাল ক্লিনিক ইউনিট-২ এর কতৃপক্ষের কাছে গিয়ে বিড়ম্বনার স্বীকার হন।

এব্যাপারে সেন্ট্রাল ক্লিনিকের ব্যাবস্থাপক আক্তার ফারুকের সাথে কথা হলে তিনি সাফ জানিয়ে দেন যার সিটি স্ক্যানের ফ্লিম তাকেই দেয়া হয়েছে সম্ভবত হাসপাতালের ডাক্তার রোগির ফ্লিম দেখার সময় উল্টাপাল্টা হলে হতেও পারে তবে তিনি এও বলেন, হাসপাতালের ডাক্তার ফ্লিম দেখার সময় ইব্রাহিমের স্থলে জনৈক মুসলিম নামের ব্যক্তির
ফ্লিম আমাদের ভুল বসত দেয়া হয়েছে এমনটি হলে ডাক্তার আমাদের মোবাইল করতেন তেমনটি করা হয়নি। কিভাবে সিটি স্ক্যানের ফ্লিমটি উল্টাপাল্টা হয়েছে সেটা তিনি জানেন না বলে জানান।

ভিকটিম ইব্রাহিম আলী আরও আক্ষেপ করে বলেন, যদি চিকিৎসায় ভুল স্ক্যান দেখে ডাক্তার ভুল রিপোর্ট প্রদান করেন সেক্ষেত্রে থানায় দায়ের করা মামলায় তিনি সঠিক বিচার পাবেন না বলে আশংকা করেন এবং একই সাথে তিনি অভিযোগ করে বলেন, থানার পুলিশ হাসপাতাল থেকে কেন অন্যান্য ভিকটিমদের মেডিকেল রিপোর্ট তলব করেননি জানতে চান। এসময় তিনি তার কাছে রক্ষিত তাদের উপর আসামিদের হামলায় শারীরিক আঘাত জনিত চিত্র তুলে ধরেন।

এব্যাপারে ভিকটিম ইব্রাহিম আলীর পুত্র মাইদুলের দায়েরকৃত মামলায় জামিন না হওয়া আসামি থানায় বসে বিড়ি টানছে আর বাদীপক্ষকে হুমকি দিচ্ছে জানতে চাইলে উক্ত মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ফুলবাড়ি থানার এস আই জনাব মোহাম্মদ সুফিয়ান ছাওরী জানান, বাদীর অভিযোগ মিথ্যা। যেকোন সময় আসামিদের গ্রেপ্তার করা হবে।

মোঃএরশাদুল হক