রুহিয়ায় বাল্যবিবাহ নিতে যাওয়া সময় বর অপহরণ, পুলিশ কতৃক উদ্ধার

মোঃ আনোয়ার হোসেন, ঠাকুরগাঁও জেলা প্রতিনিধি:
বাল্যবিবাহ নিয়ে যাওয়ার সময় রাস্তায় বর’কে অপহরণ করা হয়েছে। রবিবার ২৬ মে রাত ৮টায়, ঠাকুরগাঁও সদরের রুহিয়া ক্যাথলিক মিশনের সামনে এই ঘটনাটি ঘটে। অনুসন্ধানে জানা যায়, কিশোরীর মা নিজেই এই বিয়ের আয়োজনের সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিলেন। চালকের ৯৯৯-এ ফোনে রুহিয়া থানা পুলিশ তাৎক্ষণিক অভিযান চালিয়ে কিশোর-কিশোরীকে উদ্ধার করে। সদ্য এসএসসি পরীক্ষা দেওয়া এক কিশোর ও কিশোরীকে বাল্যবিবাহের উদ্দেশ্যে নিয়ে যাচ্ছিলেন মেয়েটির মা। তারা একটি মাইক্রোবাসে করে যাচ্ছিলেন। মাইক্রোবাসটির নাম্বার: ঢাকা মেট্রো চ- ১১-১৯৮৫। প্রত্যক্ষদর্শীদের সূত্রে জানা গেছে, রুহিয়া ক্যাথলিক মিশনের সামনে থেকে বহিষ্কৃত রুহিয়া থানা যুবদল নেতা আবু কালাম আজাদসহ সঙ্গে থাকা বিএনপির অঙ্গসংগঠনের কয়েকজন নেতা গাড়ির গতিরোধ করে কিশোরটিকে জোরপূর্বক মাইক্রোবাস থেকে নামিয়ে একটি মোটরসাইকেলে করে তুলে নিয়ে যান।মাইক্রোবাসের চালক তখন গাড়িতে অগ্নিসংযোগের আশঙ্কায় জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এ ফোন দেন। রুহিয়া থানা পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে মাইক্রোবাসসহ কিশোরী ও তার মাকে থানায় নিয়ে যায়। মাইক্রোবাসের চালক বিনয় চন্দ্র জানান, আটোয়ারী উপজেলার শ্যামল চন্দ্রের মাইক্রোবাসটি তিনি দীর্ঘদিন থেকে চালান। রবিবার সন্ধ্যায় পরিচিত একজন ড্রাইভার, প্রদীপ চেয়ারম্যানের বাড়ির এলাকা থেকে রুহিয়া পর্যন্ত গাড়িটি ভাড়া করে। রুহিয়া এসেই তো এ-ই ঘটনা। উপস্থিত প্রত্যক্ষদর্শী কাসেম আলী বলেন, একটি ছেলেকে নিয়ে মেয়েসহ মেয়েটির মা যাচ্ছিল। রাস্তায় স্থানীয় বড় ভাই কালাম গাড়িটি থামিয়ে ছেলেটিকে সঙ্গে নিয়ে যায়। মেয়ে ও মেয়ের মা এখানেই আছে। এনিয়ে চলছে গন্ডগোল। মাইক্রোবাসটির ভেতরে থাকা কিশোরী টুনির (ছদ্মনাম) মা আমেনা খাতুন জানান, গত শনিবার রাত ১১টার ঘটনা, আমাদের বাড়িতে ছেলে আমার মেয়ের সঙ্গে ধরা পড়ার পর থেকেই বলতে থাকে বিয়ে করবো বিয়ে করবো। আমরা গার্জিয়ান দুইজন বাসায় ছিলাম না। ননদের বাসায় গিয়েছিলাম। ছেলে আমার মেয়ের ঘরে ঢুকে বলে আমি তোমাকে বিয়ে করবো। কারণ তোমার বাবাও মেনে নেয় না আমার বাবাও মেনে নেয় না। এভাবে কাজ করলে সবাই মেনে নিবে। কিশোরী টুনির বাবা আটোয়ারী উপজেলা এলাকার রুহুল আমিন বলেন, আবু হাসান ও আবু কালাম ছেলেটিকে জোরকরে তুলে নিয়ে গেছে। কিশোরী টুনির চাচা হাসেম উদ্দিন জানান, গত শনিবার রাত ১২ টায় একটি মোটরসাইকেলে করে দুইজন ছেলে আমাদের বাসার সামনে যায়। একজন গাড়ি নিয়ে বাইরে থাকে একজন বাড়ির ভিতরে আসে। বাসায় কেউ ছিলনা শুধু একটা ছোট বাচ্চা ছিল আর আমার ভাতিজি টুনি। বাসায় একটি ছেলে ঢুকেছে জানতে পেয়ে এলাকার লোকজন বাড়িতে আসা ছেলেটিকে আটকে দেয়। রবিবার দুপুর বেলা ছেলের পক্ষ জানায়, আমরা যাচ্ছি আপস করবো। আপসের মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে তারা আমাদের নামে আটোয়ারী থানায় অপহরণের মিথ্যা অভিযোগ দেয়। থানার পিকআপ চলে আসে আমাদের বাড়িতে। আটোয়ারী উপজেলার বাসিন্দা, কিশোর টোনার (ছদ্মনাম) বাবা আব্দুল কাশেম বলেন, খোলাহাটির একটি প্রতিষ্ঠিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে তার ছেলে বাসায় ফিরেছে। পরিচিত মানুষ, বন্ধুবান্ধবের বাসায় যে কেউ যেতেই পারে। এসব আমার ছেলেকে ফাঁসানোর চক্রান্ত। পরে পুলিশি তৎপরতায় অভিযুক্ত আবু কালাম আজাদ কিশোরটিকে থানায় ফিরিয়ে আনেন।অনুসন্ধানে জানা যায়, জানা যায়, কিশোর-কিশোরীর কারোরই বয়স ১৮ বছর হয়নি এবং তারা সদ্য এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। কিশোর-কিশোরী অপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার কারণে নিজ এলাকা আটোয়ারীতে বিয়ে দেওয়া সম্ভব হয়নি। তাই পাশের উপজেলা ঠাকুরগাঁও সদরের রুহিয়ায় যাচ্ছিল অবৈধভাবে বিয়ে পড়ানোর উদ্দেশ্যে। মেয়েটির মা নিজেই বিয়ের উদ্যোক্তা ছিলেন, যা আইনত অপরাধ। কিশোর টোনা পার্বতীপুর খোলাহাটি এলাকার একটি প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠান থেকে এসএসসি পরীক্ষা শেষ করে। কিশোরী টুনিও এবার আটোয়ারী উপজেলার একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছে। রুহিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি নাজমুল কাদের জানান, কারো কোন অভিযোগ না থাকায়, রুহিয়া থানা বিএনপির সহ-সভাপতি আব্দুল মালেক মানিক ও থানা বিএনপির সাবেক বিশেষ সম্পাদক আবু শাহিনের উপস্থিতে ছেলে ও মেয়েকে তাদের পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।