ঝিনাইদহের পোতাহাটী গ্রামের গ্রামীণ সড়কের বেহাল দশায় জন দূর্ভোগ চরমে

মোঃ আবু সাইদ শওকত আলী,
খুলনা বিভাগীয় প্রতিনিধিঃ
ঝিনাইদহ সদর উপজেলার সাধুহাটী ইউনিয়নের পোতাহাটী গ্রামের গ্রামীণ সড়কের বেহাল দশায় জন দূর্ভোগ চরমে। গ্রামীণ এই সড়কটি খানাখন্দে ভরা, প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ ঝুকি নিয়ে চলাচল করছে। প্রতিনিয়ত কৃষি পণ্য বোঝায় ট্রলি ট্রাক্টরসহ বিভিন্ন যানবাহ চলালচ করে জীবনের ঝুকি নিয়ে। ঝিনাইদহ-চুয়াডাঙ্গা মহাসড়কের কোল ঘেষে ডাকবাংলা বাজার ও সাধুহাটী বাসস্ট্যান্ডে মাঝে মহাসড়কের উত্তর দিকে গ্রামটির অবস্থান। গ্রামে রয়েছে একটি ঐতিহ্যবাহী কলেজ আব্দুর রউফ ডিগ্রি কলেজ, পাশে বৃহত্তম সাধুহাটী কৃষি বীজ উৎপাদন খামার।
এছাড়াও গ্রামের পাশে রয়েছে ঝিনাইদহ জেলার বৃহত্তম কৃষি বাজার, ডাকবাংলা বাজার ও চাল উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত ডাকবাংলার ত্রীমহোনী বাজার। গ্রামটি অবস্থানের দিক থেকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ হলেও দীর্ঘদিন ধরে গ্রামীণ সড়কগুলোর পাকাকরণ, সংস্কার বা উন্নয়ন কিছুই হয়নি। গ্রামে ৪ হাজারের অধিক লোকের বসবাস এবং এই গ্রামের উপর দিয়ে প্রতিদিন পার্শ্ববর্তী দৌলতপুর ইউনিয়নসহ হরিণাকন্ডুু উপজেলার হাজার হাজার মানুষ ডাকবাংলা বাজরে পণ্য পরিবহন ও যাতায়াত করে। গ্রামের পূর্ব পশ্চিম ও মধ্যপাড়া মিলে প্রায় ৪ কি: মি: এর অধিক আধাঁপাকা ও কাঁচা গ্রামীণ সড়ক রয়েছে।
বিগত ২০০৬ সালে তৎকালীন বিএনপির সরকারের সময়ে ঝিনাইদহ-২ আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য মরহুম আলহাজ্ব মশিউর রহমান গ্রামের ২ কি: মি: সড়ক পাকা করেছিলেন। তারপর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসারপর দীর্ঘদিন গ্রামটি চরম বৈষম্যের শিকার হয়েছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ইউনিয়ন পরিষদ ও জেলা পরিষদের বরাদ্দ থেকে কিছু অংশে মাটি ও ম্যাকাডামের কাজ করেছে। তারপর দীর্ঘসময় পার হয়ে যাওয়ায় রাস্তাগুলো নষ্ট হয়ে খানাখন্দে পরিনত হয়েছে। এদিকে গ্রামের গৃহবধু, ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক, কৃষক, চাকুরীজীবী, সাংবাদিকসহ সকলেই ক্ষোভ ও দুঃখ প্রকাশ করেছে।
এবিষয়ে সাধুহাটী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কাজী নাজির উদ্দীন জানান, পোতাহাটী গ্রামের সড়কগুলোর অবস্থা আসলেই বেহালদশা। আর ইউনিয়নের সক্ষমতা নেই এই সড়কগুলো সংস্কার করার। আমি স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান ছিলাম বলে আমার সাথে সম্পর্ক ভাল না থাকায় স্থানীয় সাবেক এমপি তাহজীব আলম সিদ্দিকী সমি পক্ষপাতিত্ব করে আমার ইউনিয়নে উন্নয়ন কাজের বরাদ্দ দেয়নি এমনকি কোন রাস্তা ঘাট করেনি। এই গ্রামের সড়কগুলো পাকা করা অত্যান্ত জরুরী হয়ে দাঁড়িয়েছে।
অপরদিকে ঝিনাইদহের সুনামধন্য সাংবাদিক ও জজ আদালতের এপিপি ঐ গ্রামের কৃতিসন্তান আলা উদ্দীন আজাদ জানান, আমার জন্মের পর থেকেই দেখছি গ্রামের পোতাহাটী নাম করণের স্বার্থকতা রয়েছে। কারণ বর্ষা মৌসূম  এলেই গ্রামটি পানিতে তলিয়ে বা পুতে যায়, এই গ্রামের পেশাজীবী, কৃষিজীবী, শ্রমজীবী, ব্যবসায়ী, চাকুরীজীবিসহ অনেক সুনামধন্য লোকের বসবাস কিন্তু গ্রামটি অত্যন্ত অবহেলিত। গ্রামে কোন পাকাসড়ক নেই। যা একটু ছিল দীর্ঘদিন সংস্কারের অভাবে তাও ভেঙ্গেচুরে খানাকন্দে পরিনত হয়েছে। বর্ষার সময় মানুষ বের হতে পারেনা গ্রামের প্রসূতী মা ভগ্নিরা প্রয়োজনমত এ্যম্বুলেন্স ও চিকিৎসা সেবার অভাবে প্রতিনিয়ত দুভোর্গের শিকার হচ্ছে। কোন গাড়ি ঘোড়া গ্রামে আসতে চাইনা। তাছাড়া কৃষি পণ্য পরিবহনেও কৃষকরা পড়ে মহা বিপদে।
এবিষয়ে (অবঃ) সহকারী অধ্যাপক আব্দুল কাদের গ্রামের সড়ক নিয়ে একবুক কষ্টে নিয়ে বলেন, দীর্ঘ ১৫ বছর আওয়ামী লীগের আমলে আমরা বৈষম্যের শিকার হয়েছি। এখন দেশ থেকে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়েছে আমরা আর বৈষম্য চাইনা। বৈষম্যহীন বাংলাদেশে বৈষম্য দূর করে গ্রামের সড়কগুলো দ্রুত সংস্কার এবং নতুন সড়ক নির্মাণ করার দাবি জানাচ্ছি কর্তৃপক্ষের কাছে।
এ বিষয়ে ঝিনাইদহ সদর উপজেলা এলজিইডি প্রকৌশলী আবুল কালাম আজাদ বলেন, সাধুহাটী ইউনিয়নের পোতাহাটী গ্রামের তিনটি সড়কের মধ্যে একটি সড়ক আইডি ছিলনা। তবে বিগত ২০২৪ সালের গেজেটে সেটা তালিকা ভূক্ত হয়েছে। তাছাড়া বাকি দুটি সড়কের মধ্যে একটি সড়ক যশোর অঞ্চল গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প ২য় পর্যায় (ডিপিপি)’তে অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। অনুমোদন পেলেই ঐ সড়কটির কাজ শুরু হবে। বাকি দুইটি সড়কের কাজ নতুন পকল্পের মাধ্যমে পাঁকা করা হবে।