জাদু মিয়ার হক কথা-১প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস কাকার কাছে গণমানুষের প্রত্যাশা

বিশেষ প্রতিনিধ

শ্রদ্ধেয় কাকাশ্রদ্ধেয় কাকা,
আসসালামু আলাইকুম। আপনি কেমন আছেন? অনেক দিন যাবত ভাবছি আপনার কাছে একটা চিঠি লিখবো, তা লিখবো লিখবো করে লেখাই হয়ে ওঠে না, সাংসারিক নানা ব্যস্ততায়। রোজার ইদের আগে থেকে ভাবছি লিখবো, কিন্তু রোজা রাখা, তারাবীহ পড়ার কারণে আর সময় করতে পারিনি। অনেক বছর পর ইদে লম্বা ছুটি কাটালাম, কাজের ব্যস্ততাও একটু কম তাই ভাবলাম এখন লিখে ফেলি। কাকা, আমি দেশের একজন নালায়েক বান্দা হয়তো আমার এ লেখা আপনার কাছে পৌঁছাবে না তারপরও ব্যর্থ প্রচেষ্টা।
কাকা,
গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ সাহেবের মেয়ে হাসিনা আপা ক্ষমতা ছেড়ে ভারতে যাওয়ার পর শুনেছি পোলাপান আপনাকে একরকম ধরে এনে ক্ষমতার মসনদে বসিয়ে দিলো। অবশ্য কেউ কেউ বলে এই আন্দোলনের মেটিকুলাস ডিজাইনটা আপনিই নাকি করেছিলেন। যাক এটা, আপনাদের মতো মান্যিগন্যি মানুষের ব্যাপার স্যাপার ওটা নিয়ে আমি মাথা ঘামাতে চাইনা। উপদেষ্টার চেয়ারে বসার পর থেকে আপনার পরিচিতি ও মান-মর্যাদা আরও বাড়িয়া গিয়াছে। এমনিতেই আপনি একজন বরেণ্য অর্থনীতিবিদ ও বিশ্বের একজন স্বনামধন্য ব্যক্তি, এখনতো ব্যক্তি থেকে নেতায় পরিণত হলেন। অবশ্য আপনিতো নেতার নেতা, শান্তিতে নোবেল বিজয়ী। চেনা বামনের যেমন পৈতা লাগেনা, আপনার অবস্থাও তেমন। একদিন আপনার প্রোফাইল দেখেতো আমারতো ভিমরি খেয়ে পড়ার উপক্রম। এতসব গুণ পৃথিবীতে খুব কম মানুষেরই আছে,আমরা ধন্য আপনার জন্য।
তবে কাকা একটা কথা বলি, আপনি শান্তিতে নোবেল ঠিকই পেয়েছেন কিন্তু উপদেষ্টার চেয়ারে বসেছেন নয় মাস হলো, ৫৬ হাজার বর্গমাইলের ছোট্ট বাংলাদেশটা যেন অশান্তির দাবানলে জ্বলে পুড়ে ছারখার হয়ে যাচ্ছে। দেশময় চুরি,ডাকাতি, হত্যা, খুন, ধর্ষণ,লুটতরাজ, দখলদারিত্ব, অগ্নিসংযোগ এত বেড়েছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। যা এদেশের জন্ম থেকে কখনো হয়নি। দেশের পরিস্থিতির কথা বলতে গিয়ে একজন নাট্যাভিনেতা বলেছেন, দেশের অবস্থা এতো খারাপ যে বিগত ৫৩ বছরেও এতো খারাপ হয়নি। এদিকে যেন আপনার কোন খেয়াল নাই। সংস্কার বলতে বিগত সরকারের সময় সকল নিয়োগ বাতিলসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানগুলোর নাম পরিবর্তন করে নিজস্ব ধ্যানধারনার লোক নিয়োগ করা। মব জাস্টিসের নামে দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাসহ বিভিন্ন মানুষের বাড়িঘর ভেঙে ফেলা ও কোথাও পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। হাজার হাজার লোককে হত্যা করা হয়েছে। মানুষ এখন বিচার চাইতেও ভয় পাচ্ছে। কখনো কখনো অস্ত্রের মুখে আসামি ছিনতাই হতে শুনেছি, কিন্তু সম্প্রতি একটি ভিডিওতে দেখলাম কুষ্টিয়াতে জঙ্গীরা জেল থেকে আসামী ছাড়িয়ে নেয়ার জন্য গুলি ছুড়ছে আর কারারক্ষীরাও তার প্রতিবাদে গুলি ছুড়ছে।
এই আট নয় মাসে হাজারের কাছাকাছি নারীও শিশু ধর্ষিত হয়েছে । একথা মিছা না শেখ হাসিনার শাসনামলে অনেক দুর্নীতি হয়েছে তাইবলে কি এমন বিচারহীন নৃশংসতা কোন সভ্য সমাজ মেনে নিতে পারে? তারা দুর্নীতি করেছে তার বিচার করুন কিন্তু বিচারবহির্ভূত হত্যা ও দমন পীড়ন কিভাবে চলতে পারে?
গত ৫ আগস্টের আগে যে ছাত্রের পকেটে এক বেলা খাওয়ার টাকা কিংবা কারো মানিব্যাগই ছিলোনা আজ তারা ৫/৬ কোটি টাকা দামের গাড়িতে চলে, অনেক সমন্বয়ক, উপদেষ্টা হাজার হাজার কোটি টাকার মালিকও বলে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ, ইতোমধ্যে তারা জাতীয় নাগরিক পার্টি নামে দলও গঠন করেছে, কোটি কোটি টাকা খরচ করে দলীয় শোডাউন করেছে। কয়েকদিন আগে এক ছাত্রনেতা বিশাল গাড়ির বহর নিয়ে রাজনৈতিক সফর করেছেন,সেই জমিদার নাতির বাবার এত সম্পদ যা থেকে তিনি ভাগে পাবেন দেড়-দুই লক্ষ টাকা, অথচ এক দিনের সফরের গাড়ি ভাড়াই তিন লক্ষ টাকার বেশি। শোনা যায় কোনএক উপদেষ্টা নাকি ৫ কোটির নিচে কোন তদবির করেন না। ছাত্র সমন্বয়কদের অনেকে ইতোমধ্যে বিলাসবহুল জীবনযাপন শুরু করেছে। ক’দিন আগে পত্রপত্রিকায় নিউজ এসেছে ছাত্র নেতারা নাকি হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের ১০ টি রুম দখল করে রেখেছে দীর্ঘ ৮ মাস। যার আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ দাড়িয়েছে ৬১ কোটি টাকা, বিভিন্ন সমন্বয়কের সুপারিশে ওয়াসায় ১৫০ লোক নিয়োগ দেয়া হয়েছে, কোন ট্রেনিং ও নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ছাড়া পুলিশে হাজার হাজার লোক নিয়োগ দেয়া হলো। এরকম আর্থিক অনিয়ম, দুর্নীতি এবং এতো কোটি কোটি টাকার মালিক এরা এতো অল্প সময়ের মধ্যে হয়। তাহলে আগামী ৫ বছরে দেশটাতো গিলে খাবে। কোটা আন্দোলনের নামে আজ তারা দল গঠন করে যেনো দেশটার ইজারা নিয়ে বসেছে তাদের কথাই যেনো আইন, আপনিও অবোধ্য শিশুর মতো অর্পিত দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন।
যারা ৮ মাসেই এতসব দুর্নীতি করেছে, কিভাবে বুঝবো এরা দেশের জন্য ভালো কিছু করবে, তাহলে ঐ কথাটা বললে ভুল হবে “সকালের সূর্যই বলে দেয় দিনটা কেমন যাবে”। এছাড়াও ঐসব ছাত্র সমন্বয়কদের মুখে এমন এমন কথা শোনা যায় এইটা ভেঙে ফেলবো, ঐটা ধুলায় মিশিয়ে দেবো। কেউ বলে দেশের নাম পরিবর্তন করে ফেলবে। এমনকি দেশের সংবিধানকে বঙ্গোপসাগরে ছুঁড়ে ফেলার মতো ধৃষ্টতা দিখিয়ে কথা বলে। এটা কিন্তু দেশের জন্য অশনিসংকেত। আমরা চাই আপনার নেতৃত্ব সুন্দর একটি আলোকিত ও সোনায় মোড়ানো শান্তিপূর্ণ দেশ।
অবশ্য কেউ কেউ আপনার কথাও বলেন, বিগত সরকারের সময় আপনার ৬০০ কোটি টাকা ট্যাক্স ফাঁকির মামলাও খালাস করে নিয়েছেন, আপনার প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণ ব্যাংকের ২০২৯ সাল পর্যন্ত কর মওকুফ করে নিয়েছেন। ইতোমধ্যে আপনি নাকি কয়েকটি নতুন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও খুলেছেন,ব্যবসা করা ভালো কিন্তু সেটা যদি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা র‍্যবহার করে হয় তাহলে আর নিরপেক্ষতা আর থাকলো কই। যাই হোক, এসব আমি আবার বলতে যাই কেনো‼️
জুলাই আন্দোলনে যারা শহিদ হয়েছে তাদের পরিবারের লোক ও আহতদের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরি দেয়া হলো এগুলো কি কোটা নয়। তাহলে আপনিই বলেন যে কোটার জন্য আন্দোলন করা সেই কোটাইতো রয়ে গেলো। দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের ফলে যারা স্বাধীনতা এনে দিলো তাদের সাথে কি ১৮ দিনের সরকার পতনের আন্দোলন এক হতে পারে আপনিই বলুন।

কাকা, আপনিতো নিরপেক্ষ, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান, আপনি কিভাবে এই নয় মাসে সংস্কার সংস্কার করে মাথা খারাপ করে ফেলেছেন।
দেশের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি চরম অবনতি ঘটেছে গত নয় মাসে খোদ পুলিশের উপর ৩০০ বার আক্রমণ ঘটেছে, পুলিশকে মেরে আসামী ছিনতাইয়ের ঘটনাও ঘটেছে বহু বার। ৫ আগস্টের পর ৩/৪ মাস পুলিশ রাতে বের হতো না। এমনকি সন্ত্রাসীদেরকে আর্মিদের উপরও চড়াও হতে দেখা গিয়েছে। লুট হওয়া পুলিশের অস্ত্র আজও দুষ্কৃতকারীদের হাতে তাই দিয়ে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, হত্যাসহ বিভিন্ন অপকর্ম করে যাচ্ছে। ৫ আগস্টের পর চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের জামিনের নামে সকল আসামীকে ছেড়ে দেয়া হলো এটা কি ঠিক হয়েছে বলুন?

একটা বিষয় সবচেয়ে বেশি আশ্চর্য লেগেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দেশের রক্ষাকবচ, দেশের সকল বিপদে ঢাল হিসেবে কাজ করেছে কয়েক যুবক গুজবের কান দিয়ে সেই সেনানিবাস উড়িয়ে দেয়ার কথা বলেছে অথচ আপনি সেইসব অর্বাচীন বালকদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রের পক্ষথেকে কোনই ব্যবস্থা নেননি।
কাকা, এই সংস্কার সংস্কার নাটক বেশ জমে উঠেছে। যাদের বহাল করছেন আর যাদের চাকরিতে ঢুকাচ্ছেন কেউই কিন্তু অন্য দেশের নয়। তাছাড়া এই ভাংচুর, লুটপাট, দখলদারিত্ব, খুনখারাবি, কারো স্মৃতি মুছে ফেলা কোন ভাবে ভালো নয়, ক্ষমতা কিন্তু কোন কালে কারো কাছে চিরস্থায়ী নয়। আপনার ক্ষমতাও কিন্তু চিরস্থায়ী নয় তখন আপনার স্মৃতি স্থাপনাও ভাংচুর হতে পারে। কাদা মাটির এই দেশ এই নরম,এই শক্ত।
একজন ক্ষমতা থেকে চলে যাবে সেটা জোর করে হোক আর নিয়মের মধ্যেই হোক তাই বলে তার সমস্ত বাড়িঘর লুটপাট, আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে ফেলা এই সংস্কৃতি কিন্তু বাংলাদেশ ৭১ এর পর প্রথম দেখলো।

সুপ্রিয় কাকা,
আপনি বিশাল জ্ঞানের ভান্ডার, আমরা নগন্য মানুষ আপনাকে কোন উপদেশ, জ্ঞান দেয়া কি সাজে? সংস্কারের টালবাহানা না করে একটি সুন্দর নির্বাচন কমিশন গঠন করে সকল দলের অংশগ্রহণে একটি নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন তাহলে এ জাতি আপনাকে মনে রাখবে আজীবন।

সর্বশেষ একটি কথা বলবো বিগত ৯ মাস হলো আপনি ক্ষমতায় আছেন।
এই সময়ে কয়েকটি শীতকালীন সবজির দাম কমানো ছাড়া কোন সফলতা চোখে পড়েনি, অবশ্য অন্য সকল পণ্যের দাম তুঙ্গে। ইদের ছুটি কাটতে না কাটতেই সবজির দাম ঊর্ধ্বমুখী। তাই সফলতার ঢেঁকুর তোলার আশা না করে, এসব অর্বাচীন বালকদের কথায় ওদেরকে অথবা এদেশের স্বাধীনতা বিরোধী কোন অপশক্তিকে ক্ষমতায় বসানোর পায়তারা না করে,একটি নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দিন আপনার কাছে ওই মোর নিবেদন।
তাছাড়া কোন দলকে মানুষ ক্ষমতায় চায় কোন দলকে চায়না এটা জনগণের ভোটের উপর নির্ভর করে, কোনো দলকে বাদ দিলে আপনার দেয়া নির্বাচনও প্রশ্নবিদ্ধ হবে‼️ তাই আপনি কারো কু-পরামর্শ, ক্ষমতার মসনদে বসে থাকার লোভ পরিহার করে একজন সুবিবেচক ও একজন সুনাগরিকের ভূমিকা পালন করা, যুক্তিযুক্ত কাজ হবে বলে আমি মনে করি।
পরিশেষে আপনার মঙ্গলময়,দীর্ঘায়ু ও সুস্থ জীবন কামনা করে এই লেখা শেষ করছি।
আপনার স্নেহাশিস টপ
নালায়েক বান্দা জাদু মিয়া