যশোরে বাবার মরদেহ বাড়িতে রেখে দাখেলী পরীক্ষা দিতে হলো ছেলেকে

মোঃ আবু সাইদ শওকত আলী,
খুলনা প্রতিনিধিঃ
সকালে দাখিল পরীক্ষা আশিকের। পরিবার জুড়ে ছেলের পরীক্ষা উপলক্ষে তোড়জোড়, প্রস্তুতি। মুহূর্তে বিষাদের ছায়া। পিতা মাসুদুর রহমান মাসুদের হার্ট অ্যাটাক, শেষ পর্যন্ত মৃত্যু।
ঘটনাটি ঘটেছে বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) ভোরে যশোর সদরের কাশিমপুর ইউনিয়নের দৌলতদিহি গ্রামে। তাই বাবার লাশ বাড়িতে রেখেই চোখ ভরা জল নিয়ে পরীক্ষার কেন্দ্রে যেতে হলো ছেলে আশিককে। পরীক্ষা শেষ করে এসেই বাবার জানাযায় অংশ নেয় আশিক। এমন হৃদয় বিদারক দৃশ্য দেখে চোখের পানি ধরে রাখতে পারেনি কেউ।
আশিক চুড়ামনকাটির ছাতিয়ানতলা কে আই আলিম মাদ্রাসা কেন্দ্রে আল কোরআন বিষয়ে পরীক্ষা দিচ্ছে। মৃত মাসুদ যশোর সদর উপজেলার কাশিমপুর ইউনিয়নের দৌলতদিহি গ্রামের মৃত আব্দুস সাত্তারের ছেলে।
মৃতের স্বজনরা জানিয়েছেন, আশিক কাশিমপুরের মিরাপুর ইসলামিয়া দাখিল মাদরাসার ছাত্র। ছেলের পরীক্ষা তাই তাকে সাথে নিয়ে পরীক্ষার কেন্দ্রে যাবেন বাবা এমন কথা রাতে বলে ঘুমাতে যান মাসুদ। কিন্তু ভোরে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে নিজ বাড়িতে মারা যান মাসুদ। তিনি চুড়ামনকাটি বাজারে লিবার্টি সু এর ব্যবসা করতেন।
একদিকে বাবার লাশ বাড়িতে অন্যদিকে আশিকের পরীক্ষা। বাবাকে হারানোর কঠিন শোক নিয়েই বাড়িতে বাবার লাশ রেখে সকালে পরীক্ষা দিতে যায় আশিক। দুপুর ১ টায় পরীক্ষা শেষে বাড়িতে ফিরে জানাযা নামাজ শেষে বাবার লাশ পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।
প্রাইভেট শিক্ষক রাব্বি হাসান জিহাদ জানান, আশিক একজন মেধাবী ছাত্র। তার বাবার মৃত্যুর খবরে তিনি সকালে তাদের বাড়িতে যান। বাবার মৃত্যুতে আশিক মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছে। তাকে সান্ত্বনা দেওয়ার পর সাথে করে কেন্দ্রে নিয়ে যান।
ছাতিয়ানতলা কে আই আলিম মাদ্রাসা কেন্দ্রের সচিব মোহাম্মদ হাফিজুর রহমান জানান, বাড়িতে বাবার লাশ রেখে পরীক্ষা দিচ্ছে ছেলে আশিক। কিন্তু তার মনটা খারাপ। ঘটনাটি কষ্টদায়ক হলেও তাকে মনযোগ সহকারে পরীক্ষা দিতে বলা হয়েছে। শিক্ষকরা তার দিকে আলাদাভাবে খেয়াল রাখছেন।
আশিক পরিক্ষা শেষে বাড়িতে গেলে সেখানে হৃদয় বিদারক দৃশ্যের সৃষ্টি হয়। পরিবারের আহাজারিতে কেউ চোখের পানি ধরে রাখতে পারেনি। সবাই কেঁদেছে অঝোরে।