ঠাকুরগাঁওয়ে কুয়াশায় ঢেকেছে , বাড়ছে শীতের তীব্রতাঘন কুয়াশায় কারণে হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করছে যানবাহন।

মোঃ মজিবর রহমান শেখ,
ঠাকুরগাঁও জেলা প্রতিনিধিঃ

ঠাকুরগাঁওয়ে ক্রমশই বাড়ছে শীতের তীব্রতা। ঠাকুরগাঁও জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে হিমেল হাওয়া। ঘন কুয়াশার চাদরে ঢাকা থাকছে চারপাশ।
এতে চরম দুর্ভোগে পড়ছেন দরিদ্র-শ্রমজীবী মানুষ, তবে ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসন বলছে- শীত মোকাবেলায় তারা সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিয়েছেন।
ঠাকুরগাঁও জেলায় আবহাওয়া অফিস না থাকলেও এখানে প্রতিদিন তাপ পরিমাপক যন্ত্র দিয়ে তাপমাত্রা রেকর্ড করে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।
তারা জানিয়েছে, ৫ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার সকাল ৬টার দিকে ঠাকুরগাঁও জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
এবার জেলায় শীতের তীব্রতা বেশি হতে পারে বলে আশঙ্কার কথা জানিয়ে ঠাকুরগাঁও জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, “যত দিন যাচ্ছে ঠাকুরগাঁওয়ে শীতের তীব্রতা বাড়ছে। দু দিন ধরে বেলা ৯টা থেকে ১০টার আগে সূর্যের দেখা মেলানি।”তিনি বলেন, কয়েকদিন ধরে ঠাকুরগাঁও জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১২-১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়। আর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ৫ ডিসেম্বর
বৃহস্পতিবার সকালে ঠাকুরগাঁও জেলা শহরের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, রাস্তা-ঘাট একেবারে ফাঁকা, মানুষজন নেই। কুয়াশার কারণে বিভিন্ন সড়কে হেডলাইট জ্বালিয়ে যানবাহন চলাচল করছে।
শীতের তীব্রতার জন্য নিম্ন আয়ের খেটে খাওয়া মানুষ কাজে যেতে পারছেন না। শ্রম বিক্রি করতে না পারায় দুর্ভোগে পড়েছেন তারা। শহরের হাজীপাড়া এলাকার আলম বলেন, “কয়েকদিন ধরে ঠাকুরগাঁও জেলায় শীতের তীব্রতা বেড়েছে; সারাদিনই কুয়াশায় ঢাকা থাকছে চারপাশ। ঠান্ডার কারণে আমি নিজেই জ্বর-সর্দিতে আক্রান্ত হয়েছি।” কালিতলা এলাকার রিকশাচালক বসির বলেন, “ঠান্ডার কারণে এখন মানুষজন রিকশায় উঠতে চায় না। এ কারণে আমাদের আয়-রোজগার কমে গেছে। সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।”এদিকে ট্রাক চালক আজাদ বলেন, “অন্যান্য বছরের মত এবারও ঘন কুয়াশায় ঢাকা থাকছে ঠাকুরগাঁওয়ের জনপদ। তাই দিনের বেলাতেও হেডলাইট জ্বালিয়ে গাড়ি চালাতে হয়। ঘন কুয়াশা ও শৈত্য প্রবাহের কারণে গাড়ি চালানো কষ্টকর হয়ে গেছে।“শহরের হঠাৎপাড়ার শামীমা ডিসিবস্তির ইসলাম, মুন্সিপাড়ার হোসেন, হাজীপাড়া এলাকার শফিকুল বলেন, কুয়াশার কারণে সকালে কিছুই দেখা যায় না। সূর্য ওঠে অনেক দেরিতে। এছাড়া সন্ধ্যার পরপরই প্রচণ্ড ঠান্ডা অনুভূত হয়। এতে টেকাই বড় মুশকিল হয়ে গেছে। তবে এখন পর্যন্ত কেউ তাদের শীতবস্ত্র দেয়নি। শীতের কারণে তাদের। অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এছাড়াও প্রতিদিনই শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। যার শিশু ও বৃদ্ধদের সংখ্যা বেশি বলে জানিয়েছেন ঠাকুরগাঁওয়ের ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ সাজ্জাদ হায়দার শাহীন। তিনি বলেন, প্রতিদিন শীতজনিত শ্বাসকষ্ট, ডায়রিয়া, জ্বর, সর্দি, কাশি, নিউমোনিয়া সহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে শিশু-বৃদ্ধ রোগীদের চাপ বেড়েছে। হাসপাতালে আসা রোগীদের মধ্যে ৭০ শতাংশই শিশু। সেবা দেওয়ার পাশাপাশি শিশুদের প্রতি বিশেষ যত্ন নিতে পরামর্শ দেন এই চিকিৎসক। ঠাকুরগাঁও জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, “এই ঠাকুরগাঁও জেলায় একটি আবহাওয়া অফিস দরকার, তাহলে আরও নির্ভুলভাবে তাপমাত্রা রেকর্ড করা যেত। তাহলে কৃষিপ্রধান ঠাকুরগাঁও জেলার কৃষকদেরকে আগাম সতর্কবার্তা প্রদান করা যেত।”শীত মোকাবেলায় প্রশাসনের পক্ষে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে জানিয়ে ঠাকুরগাঁওয়ের জেলা প্রশাসক ইশরাত ফারজানা বলেন, “ঠাকুরগাঁওয়ে আগাম শীত হওয়ার কারণে অগ্রিম ৮০ হাজার শীতবস্ত্রের জন্য মন্ত্রণালয়ে চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে। দু-একদিনের মধ্যে শীতবস্ত্র পাবো বলে আশা করি। ”
“এছাড়া এর মধ্যে বেসরকারিভাবে এক হাজার শীতবস্ত্র পাওয়া গেছে, সেগুলো ভাসমান অতিদরিদ্র ব্যক্তিদের মধ্যে বিতরণ করব।”