গাজীপুরে তুষকা গ্রুপের ১৬৭ শ্রমিক বহিষ্কার

মাহাবুল ইসলাম পরাগ গাজীপুর
গাজীপুরে অবস্থিত তুষকা গ্রুপের ছয়টি কারখানায় শ্রমিকদের আন্দোলনের কারণে গত পাঁচ দিন ধরে উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। কর্মস্থলে বিভিন্ন দাবিতে শ্রমিকরা আন্দোলন শুরু করলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, এবং শেষ পর্যন্ত কর্তৃপক্ষ অনির্দিষ্টকালের জন্য কারখানাগুলো বন্ধ ঘোষণা করতে বাধ্য হয়।

বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) সকালে, তুষকা গ্রুপের পক্ষ থেকে কারখানার মূল ফটকে একটি নোটিশ টানানো হয়, যেখানে শতাধিক শ্রমিকের বহিষ্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। নোটিশে ১৬৭ জন শ্রমিকের নাম, পরিচিতি নম্বর এবং মোবাইল নম্বর উল্লেখ করা হয়েছে, যা তাদের শৃঙ্খলা ভঙ্গ এবং কর্ম পরিবেশ বিঘ্নিত করার জন্য দায়ী করা হয়েছে।

জানা যায়, গত কয়েকদিন ধরে তুষকা গ্রুপের শ্রমিকরা বেতন বৃদ্ধিসহ কর্মস্থলের নিরাপত্তা ব্যবস্থা শক্তিশালী করা এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির দাবিতে আন্দোলন করছেন। এই দাবিগুলো পূরণের লক্ষ্যে তারা কর্মবিরতি পালন করেন, যার কারণে কারখানার উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের সঙ্গে একাধিকবার আলোচনা করেও কোনো কার্যকর সমাধানে পৌঁছাতে পারেনি। পরিস্থিতি আরো জটিল হয়ে পড়ায়, কারখানা কর্তৃপক্ষ শেষমেষ এই ছয়টি কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়।

শ্রমিকদের আন্দোলনের কারণে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির আশঙ্কা দেখা দিলে, গাজীপুরের পুলিশ এবং স্থানীয় প্রশাসন উভয় পক্ষের সঙ্গে আলোচনা চালায় এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করে। তবে কোনো সমঝোতা না হওয়ায় পুলিশ ও প্রশাসন বর্তমানে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করতে সর্বোচ্চ তৎপর রয়েছে।

তুষকা গ্রুপের কারখানাগুলো বন্ধ থাকায় স্থানীয় অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। একদিকে কারখানাগুলোতে উৎপাদন বন্ধ হওয়ায় প্রতিষ্ঠানটি আর্থিক মন্দার সম্মুখীন হচ্ছে, অপরদিকে অসংখ্য শ্রমিক তাদের আয়ের উৎস হারিয়ে চরম সংকটে পড়েছেন। কর্মসংস্থানের অনিশ্চয়তার মুখোমুখি হওয়া শ্রমিক ও তাদের পরিবার দুশ্চিন্তায় রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারাও পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছেন এবং বিকল্প কর্মসংস্থানের চিন্তা করছেন। তবে মালিকপক্ষ থেকে এ বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

তুষকা গ্রুপের পরিচালক মো. তারিকুল হাসান জানান, শ্রমিকদের শৃঙ্খলা ভঙ্গ এবং আইন লঙ্ঘন ও অনিয়মে যুক্ত থাকার কারণে তাদের বহিষ্কার করা হয়েছে। তবে শ্রম আইন অনুসারে তাদের সব পাওনাদি পরিশোধ করা হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, প্রতিটি শ্রমিকের বেতন এরইমধ্যে ব্যাংক একাউন্টে পাঠানো হয়েছে, এবং তারা বেতন তুলে নিচ্ছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে কারখানাগুলো পুনরায় চালু করা হবে।

বর্তমান পরিস্থিতিতে কীভাবে সমাধান আসবে এবং শ্রমিকদের ভবিষ্যৎ কর্মসংস্থানের কী হবে, তা সময়ই বলে দেবে। তবে স্থানীয় প্রশাসন এই সংকট মোকাবিলায় সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিয়েছে এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছে।