গণহত্যাকারীদের রাজনীতি করার কোন অধিকার নেই
নিজস্ব প্রতিবেদক, খুলনা
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান আওয়ামীলীগকে ইঙ্গিত করে বলেছেন, গণহত্যাকারীদের রাজনীতি করার অধিকার নেই। কেননা রাজনীতি করতে হবে দেশের মানুষের আকাঙ্খাকে ধারণ করে, বাইরের কারও সাহায্য নিয়ে নয়।
বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলসহ সকল স্টেক হোল্ডারদের সাথে আলোচনা সাপেক্ষে সংস্কার ও নির্বাচনের রোডম্যাপ তৈরি করে যৌক্তিক সময়ের মধ্যে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দিয়ে সম্মানের সাথে সরকারকে বিদায় নিতে হবে। শিক্ষা সংস্কার কমিশনে আল্লাহকে স্বীকার করেন না এমন লোকদের অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, শিক্ষা সংস্কার কমিশনে কমপক্ষে একজন আলিয়া ও একজন কওমী নেসাবের আলেমকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। বিডিআর বিদ্রোহের নামে ৫৭জন চৌকস সেনা সদস্য হত্যাসহ দেশের সকল হত্যাকান্ডের বিচার এবং এর মাষ্টার মাইন্ডদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, তা’ না হলে আবারো জালিমদের আগমন হতে পারে, তৃতীয় শক্তির উদ্ভব হতে পারে।
তিনি শুক্রবার বেলা ১১ টায় নগরীর সোনাডাঙ্গাস্থ আল ফারুক সোসাইটিতে খুলনা মহানগর জামায়াত আয়োজিত রুকন সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন। বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার।
কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও খুলনা মহানগরী আমীর অধ্যাপক মাহফুজুর রহমানের সভাপতিত্বে রুকন সম্মেলনে বক্তৃতা করেন কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মোঃ মোবারক হোসাইন ও খুলনা অঞ্চল সহকারী পরিচালক মাওলানা আবুল কালাম আজাদ।
রুকন সম্মেলনে উদ্বোধনী বক্তৃতা করেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও খুলনা জেলা আমীর মাওলানা মুহাম্মদ এমরান হুসাইন। দারসুল কুরআন পেশ করেন কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সেক্রেটারি ও খুলনা অঞ্চল পরিচালক মুহাদ্দিস আব্দুল খালেক।
সাংগঠনিক রিপোর্ট পেশ করেন নগর সেক্রেটারী এড. শেখ জাহাঙ্গীর হুসাইন হেলাল ও জেলা সেক্রেটারী মুন্সি মিজানুর রহমান।
রুকন সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর খুলনা অঞ্চল টিম সদস্য অধ্যক্ষ মশিউর রহমান খান ও মাস্টার শফিকুল আলম, সাতক্ষীরা জেলা আমীর মুহাদ্দিস রবিউল বাশার, বাগেরহাট জেলা আমীর মাওলানা রেজাউল করিম, মহানগরী নায়েবে আমীর অধ্যাপক নজিবুর রহমান, খুলনা জেলা নায়েবে আমীর মাওলানা গোলাম সরোয়ার ও অধ্যক্ষ মাওলানা কবিরুল ইসলাম, সাতক্ষীরা জেলা নায়েবে আমীর অধ্যাপক শহীদুল ইসলাম, বাগেরহাট জেলা নায়েবে আমীর এডভোকেট শেখ আব্দুল ওয়াদুদ, সাতক্ষীরা জেলা সেক্রেটারি মাওলানা আজিজুর রহমান, বাগেরহাট জেলা সেক্রেটারি শেখ মো. ইউনুস, মহানগরী সহকারী সেক্রেটারি এডভোকেট শাহ আলম ও প্রিন্সিপাল শেখ জাহাঙ্গীর আলম, খুলনা জেলা সহকারী সেক্রেটারি মুন্সি মঈনুল ইসলাম, এডভোকেট মোস্তাফিজুর রহমান, অধ্যাপক মিয়া গোলাম কুদ্দুস ও প্রিন্সিপাল গউসুল আযম হাদী।
রুকন সম্মেলনে জামায়াতের আমীর ডা: শফিকুর রহমান আরও বলেন, বিগত পনের বছরের আওয়ামী শাসনামলে রাষ্ট্রের কোন নাগরিকই লুটপাট ও জুলুমের বাইরে ছিল না। হাজারো মানুষের, মা-বোনদের, শিশুর কান্নার রোল আল্লাহর আরশে পৌঁছে গেছে। যার ফলেই জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সৃষ্টি হয় দেশের ছাত্র-জনতার মাধ্যমে।
আওয়ামীলীগের শাসনামলের চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, বিডিআর হত্যার মধ্যদিয়ে ফ্যাসিবাদি শাসনের প্রথম ধাপ শুরু হয়। এরপর জামায়াতের ওপর স্টিম রোলার চালানো হয়। পর্যায়ক্রমে জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের ফাঁসি দিয়ে অথবা কারাগারে রেখে হত্যার মধ্যদিয়ে শেষ পর্যন্ত জামায়াতকে নিশ্চিহ্ন করার অপচেষ্টা চালানো হয়। যারা সারাজীবন ইসলামের দাওয়াত দিয়েছেন তাদের বিরুদ্ধেই ইসলাম অবমাননার কথিত অভিযোগ আনা হয়। কিন্তু ইতোমধ্যেই জামায়াতের বিরুদ্ধে অভিযোগকারীরা গ্রেফতার হতে শুরু করেছে। বর্তমান সরকার ওইসব ষড়যন্ত্রকারীদের বিচারের আওতায় এনে একটি বিচারিক সূচনা করবে বলেও তিনি আশা করেন।
সম্মেলনে জামায়াতের সেক্রেটারী জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার রুকনদের উদ্দেশ্যে বলেন, মুমিনের জান ও মাল আল্লাহর কাছে বিক্রির যে শপথ করা হয়েছে সেগুলোকে কাজে লাগিয়ে আল্লাহর জমিনে আল্লাহর দ্বীন কায়েমের জন্য জামায়াতের প্রতিটি রুকনকে কাজ করতে হবে। মু’মিনের প্রতিটি মুহূর্তই আল্লাহর হুকুমে চলবে এ শপথই নিয়েছেন রুকনরা। সুতরাং আল্লাহর হুকুমের বাইরে যাওয়ার কোন সুযোগ রুকনদের নেই।
সাম্প্রতিক দেশের ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান সম্পর্কে মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, বিগত পনের বছরের অনেক মজলুমের চোখের পানির ফসলই হচ্ছে জুলাই-আগষ্টের গণঅভ্যুত্থান। আওয়ামীলীগের ১৫ বছর আর মইনুদ্দিন-ফখরুদ্দিনের দু’বছর এই ১৭ বছরের জুলুম-নির্যাতনের পরও বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এদেশের মানুষের প্রিয় সংগঠনে পরিণত হয়েছে শুধুমাত্র আল্লাহর ওপর দৃঢ় বিশ্বাস আর আস্থার কারনে। ফ্যাসিবাদি সরকারের আমলে জামায়াতের ট্রাষ্টি সম্পত্তি আল-ফারুক সোসাইটি বেদখল করা হলেও আগষ্ট বিপ্লবের পর এই প্রথম ১৫ বছর পর এখানে রুকন সম্মেলন হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখানে জামায়াতের অনেক শীর্ষ নেতৃবৃন্দ এসেছেন। যাদের মধ্যে পাঁচ জনকে ফাঁসি দিয়ে হত্যা করেছে আ’লীগ আর বাকীদেরকে কারাগারে রেখে হত্যা করা হয়েছে। আজ দেশের যে স্বাধীনতা আমরা পেয়েছি এটিকে ধরে রাখতে প্রতিটি শপথের কর্মীকে চরম ধৈর্য্যরে মাধ্যমে দায়িত্ব পালন করতে হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।