নির্দলীয় ঐক্যবদ্ধ বার আন্দোলন নেতৃবৃন্দের সংবাদ সম্মেলন
মো: আমিরুল ইসলাম :
জুলাই বিপ্লবের কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সংবাদ সম্মেলন করেছেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী নির্দলীয় ঐক্যবদ্ধ বার আন্দোলনের নেতারা। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের শামসুল হক হলে গতকাল বুধবার বিকাল তিনটায় সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সংবাদ সম্মেলনে সিনিয়র আইনজীবী এডভোকেট ইব্রাহিম মোল্লার সভাপতিত্বে এডভোকেট শিব্বির আহমেদের পরিচালনায় অন্যানের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সিনিয়ার আইনজীবী এডভোকেট আবু সাঈদ সাগর, এডভোকেট আব্দুল মজিদ, এডভোকেট রুবাইয়া পারভীন, এডভোকেট খলিলুর রহমান, এডভোকেট আলম দুলাল, সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন অ্যাডভোকেট সুরাইয়া বেগম।
সংবাদ সম্মেলনে নেতৃবৃন্দ বলেন, রাজনীতি মুক্ত বার গড়তে না পারলে দুর্নীতিমুক্ত দেশ গড়া সম্ভব নয়। জুলাই বিপ্লবের বিয়োগন্তুক ঘটনা বাংলাদেশকে কঠিন এক বাঁকে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। আর সেটা করতে প্রধান প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে রাজনীতি ও দলীয় পৃষ্ঠপোষকতা। যার পিছনে পড়ে রয়েছে বিচার বিভাগসহ রাষ্ট্রের সর্বস্তরে সর্বগ্রাসি দলবাজী, প্রতিহিংসা প্রতিশোধ, লুটতরাজ, দুর্নীতি অপরাজনীতি এবং প্রহসনের বিচার ব্যবস্থা এক কঠিন উপাখ্যান আর এই বিল্পবের সম্মুখে আছে হাজার শহীদের রক্তে রাঙ্গানো এক সম্ভবনাময় বাংলাদেশ। এ বিপ্লবে আহত ও নিহতদের প্রতি আমরা গভীর শোক ও সমবেদনা জানাচ্ছি। আহতদের দ্রুত সুস্থ্যতা কামনাসহ শহীদের আত্মার মাগফেরাত প্রার্থনা এবং আহতদের পুর্নবাসন দাবী করছি। এই চেতনায় বাংলাদেশের আপামর জনতা ন্যায় ভিত্তিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় আজ দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। এই লক্ষ্যে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠায় সর্বাগ্রে প্রয়োজন দলীয় রাজনীতি ও দুর্নীতিমুক্ত একটি স্বাধীন বিচার ব্যবস্থা। কিন্তু দুঃখ জনক হলেও সত্য যে, ৭১’এর মহান স্বাধীনতা লাভের পর থেকে বাংলাদেশ বলতে গেলে কখনও স্বাধীন বিচার ব্যবস্থা দেখতে পায়নি জাতি। দেখেনি দুর্নীতি মুক্ত বিচার ব্যবস্থা। সরকারী দলের দুষ্ট চক্রের অপস্বার্থ চরিতার্থে বিচার ব্যবস্থা কম বেশী সব সময়ই ক্ষমতাসীন বা সরকারের হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এই প্রসঙ্গে মহামান্য আপিল বিভাগের বিষয়ক Civil Appeal No.06 of 2017 (Sixteenth Amendment) এর রায়ের উল্লেখিত কিছুটা অংশ তুলে ধরেন নেতৃবৃন্দ।
নেতৃবৃন্দ অভিযোগ করে বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধানের ষষ্ঠ বিভাগে বর্ণিত বিচার বিভাগের বিধানসমূহ বিগত ৫৩ বছরে স্বাধীন বাংলাদেশে কখনো পূর্ণাঙ্গ কার্যকর হয়নি। এই প্রেক্ষাপটে মহামান্য আপিল বিভাগে ১৯৯৫ সালে দায়ের করা মাজদার হোসেনের ২৪ ২৪/১৯৯৫ নং রিট পিটিশন নিষ্পত্তিকালে ১২ দফা নির্দেশনা ও তুলে ধরে বলেন, উত্তরায় বর্ণিত ১২দফার ২ নং ৪ নং ৫ নং ও ৬ নং দফায় বর্ণিত বিধিমালা আজ পর্যন্ত কোন সরকারি কার্যকর করেন নাই ৭ নং দফায় বর্ণিত নির্দেশনা ৭২ এর মূল সংবিধানের 116 অনুচ্ছেদ অনুযায়ী জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটসহ অধস্থন আদালতের নিয়ন্ত্রণ বিচারবিভাগের হাতে আসে নাই। উক্ত নির্দেশনার ৯ নং দফা মতে জুডিশিয়ারির বার্ষিক বাজেট প্রণয়ন ক্ষমতা বিচার বিভাগের হাতে নাই। ১০ নং দফার নির্দেশনা মতে প্রধান বিচারপতির অধীন বিচার বিভাগের একটি আলাদা সচিবালয় সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গনে প্রতিষ্ঠা করা নাই। উক্ত নির্দেশনার ১২ নং দফা বাস্তবায়িত হলেই জুডিশিয়ারের সার্বিক নিয়ন্ত্রণ প্রধান বিচারপতির অধীনে প্রতিষ্ঠিত হবে। নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, বারে একজন আইনজীবীর পরিচয় হবে শুধুমাত্র একজন আইনজীবী হিসাবে, কোন রাজনীতির নেতা বা ব্যক্তিত্ব হিসেবে নয়। রাজনীতি প্রতিটা মানুষের ব্যক্তিগত ভালোলাগা ও অভিরুচির ব্যাপার যদি কেউ রাজনীতি করতে চায় রাজনৈতিক পরিচয় থাকে, থাকতে পারে সেটার ব্যবহার হবে কোর্ট এরিয়ার বাহিরে। তবেই যুগে যুগে বিচার ব্যবস্থা প্রদান করা সম্ভব হবে। লিখিত বক্তব্যে বলেন, শুধুমাত্র আইনসংস্কার এবং বিচার প্রশাসনের সংস্কার টেকসই বিচারব্যবস্থা নিশ্চিত করতে পারে না যতক্ষণ না সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতিসহ দেশের সকল আইনজীবী সমিতি সমূহে দলীয় নমিনেশন এবং দলীয় প্যানেল মুক্ত নির্বাচন নিশ্চিত করা না যাবে। এই অর্থে আইনজীবী সমিতি সমূহে অবস্থিত রাজনীতির দলীয় পরিচয় ভিত্তিক সংগঠনসমূহ বন্ধ ঘোষণা করে একটি স্বাধীন আর্থিক ক্ষমতা সম্পন্ন নির্বাচন কমিটি গঠন করতে হবে যারা একবার এক ভোট নীতিতে ভোটার লিস্ট তৈরি করবেন এবং ষষ্ঠ নির্ভরভাবে নির্বাচন পরিচালনা করবেন। সম্প্রতি বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে নিয়োগকৃত মাননীয় বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মমিনুর রহমানকে আমরা স্বাগত জানাই। আমরা মনে করি যে বিচার বিভাগীয় সর্বোচ্চ সংস্কারের জন্য তিনি অত্যন্ত সঠিক এবং নির্ভরযোগ্য ব্যক্তিত্ব। আমরা আইনজীবীগণ এই কাজে তাকে সার্বিক সহযোগিতা করতে বদ্ধপরিকর। এমতাবস্থায়ও লিখিত বক্তব্যে নয় দফা বিচার বিভাগীয় সংস্কার দাবি পেশ করেন নেতৃবৃন্দ। সংবাদ সম্মেলনে সুপ্রিম কোর্টের আরো অন্যান্য আইনজীবী ও বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।