খুলনায় ধীরে ধীরে হেলে পড়ছে চারতলাভবন : ঝুঁকিতে অর্ধশতাধিক পরিবার
নিজস্ব প্রতিবেদক, খুলনা
খুলনা মহানগরীর সোনাডাঙ্গাস্থ আলীর ক্লাব সংলগ্ন হাজী তমিজউদদীন রোডস্থ দারুল আমান মহল্লা’র ব্যবসায়ী অরুন সাহার মালিকানাধীন চারতলা ভবনটি ধীরে ধীরে হেলে পড়েছে। বিগত ৪/৫ বছরের ব্যবধানে ভবনটি প্রায় ১৮-২০ ইঞ্চি হেলে পড়েছে। ভবনটি লাগোয়া উত্তর দিকের (পিছনে) একটি টিনসেড বাড়িকে ঠেকে আছে। ফাঁটল ধরেছে বিভিন্ন অংশে। ইতিমধ্যেই কেডিএ ভবনটির নকশা বাতিল করলেও ভবনটি ঠাঁই দাঁড়িয়ে আছে। ফলে ঝুঁকিপূর্ণ এ ভবনটি যেকোনো মুহুর্তে ধসে পড়ে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশংকা করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, দ্রুত ভবনটি অপসারণ করা না হলে প্রাকৃতিক দুর্যোগ, ভূমিকম্প, বা অন্যকোন অনাকাংখিত ঘটনায় মুহুর্তের মধ্যে ঘটে যেতে পারে জীবনের শেষ পরিণতি মৃত্যু। এ আশংকায় সার্বক্ষনিক ভয় ও আতংকের মধ্যে বসবাস করতে হচ্ছে তাদের।
এদিকে, ঝুঁকিপূর্ণ এ ভবনটি অপসারণের জন্য প্রায় ৫ বছর আগে স্থানীয় বাসিন্দারা খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কেডিএ) বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন। কিন্তু দীর্ঘ দিনেও এ বিষয়ে তেমন কার্যকর কোন পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী। ফলে আতংকিত এ মানুষগুলোর চোঁখেমুখে শুধু আতংকের ছাপ। দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন আতংকিত ভুক্তভোগীরা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মহানগরীর সোনাডাঙ্গাস্থ ১৮ নং ওয়ার্ডের আলীর ক্লাব সংলগ্ন হাজী তমিজউদদীন রোডস্থ দারুল আমান মহল্লা এলাকাবাসীর পক্ষে শামীম বিন মাহফুজ, খালিদ বিন মাহফুজ ও মো. তৌফিক বিন মাহফুজ ২০১৯ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বরাবর পৃথকভাবে লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করেন- স্থানীয় বানরগাতি মৌজার ৩২/৩-ক নম্বরের হোল্ডিং’র চারতলা ভবনের স্বত্বাধিকারী মটর পার্টস ব্যবসায়ী অরুন সাহা চারতলার নকশা অনুমোদন নিয়েও তা লঙ্ঘণ করে বিল্ডিং কোড (ইমারত নির্মাণ বিধিমালা) না মেনে ইচ্ছামত গলির মধ্যে একটি পাঁচতলা বিশিষ্ট ভবন নির্মান করেন। যা নির্মানের পরপরই পিছনের দিকে ঝুঁকতে থাকে। প্রথম দিকে ৩-৪ ইঞ্চি হেলে পড়ে। তৎকালীন এলাকাবাসী এ বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানান। কিন্তু অভিযোগ করার পর কেডিএ’র তাৎক্ষনিক হন্তক্ষেপে অবৈধভাবে নির্মিত পঞ্চমতলার সামান্য অংশ (আংশিক) নামমাত্র অপসারণ করেই সবকিছু ধামাচাপা দেওয়া হয়। যদিও তাতে ভবনটি কোনভাবেই ঝুঁকিমুক্ত হয়নি। বরং ক্রমান্বয়ে ভবনটি পিছনের দিকে ঝুঁকছে। ইতিমধ্যে প্রায় ১৮-২০ ইঞ্চি হেলে পড়েছে- জানান এলাকাবাসী। অভিযোগ করেও কোন লাভ হয়নি- এমন মন্তব্য ভুক্তভোগী ওই এলাকার বাসিন্দাদের।
সম্প্রতি সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, চারতলা বিশিষ্ট ভবনটিতে রয়েছে বেশ কয়েকটি পরিবারের বসবাস। এ ভবনটি হেলে পড়ায় ভবন লাগোয়া দু’পাশের সড়ক একাধিক স্থানে ফেঁটে দেবে গেছে। দেয়ালে ফাঁটলের একাধিক ছিন্নও রয়েছে। যদিও ভবনটি ফাঁটলের অংশগুলো সিমেন্ট-বালুর প্রলেপ দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছে। পেছনের দিকে হেলে পাশ্ববর্তী টিনসেডের ঘরের উপর ভর করেছে ভবনটি। আবার ভবনটির পেছনে ও আশপাশে অর্ধশতাধিক মানুষ বসবাস করছেন। তারা আতংকগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন।
সরেজমিনে গেলে ভবনের পাশে বসবাসরত ওই এলাকার বাসিন্দা সকিনা বেগম, আবু তাহের ও সুজনসহ আরো কয়েকজন বলেন, এ ঝুঁকিপূর্ণ ভবনটির মালিক অরুন সাহা। ঝুকিপূর্ণ ভবনটির অবস্থা খুব খারাপ। ভবনটি পিছনের দিকে ঝুঁকে পড়েছে প্রায় ১৮-২০ ইঞ্চি। ঝুকিপূর্ণ এ ভবনটিতে অনেক লোকের বসবাস থাকলেও দেখার যেন কেউ নেই। যেকোনো মুহুর্তে ঘটতে পারে বড় ধরণের দুর্ঘটনা। অতি জরুরি কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তারা।
এ বিষয়ে খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-কেডিএ’র বিল্ডিং ইন্সপেক্টর (পরিদর্শক) মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, ভবনটির মালিক অরুন সাহা চারতলার নকশা অনুমোদন নিয়েও তা ভঙ্গ করে পাঁচতলা ভবন নির্মান করেন। পরে এলাকাবাসীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে তাকে নোটিশ করে ভবনটি ‘ঝুকিমুক্ত’ করতে বলা হয়। একই সঙ্গে এ ধরণের সংশ্লিষ্ট কোন কনসার্টিং প্রতিষ্ঠান থেকে ‘ঝুকিমুক্ত’ সার্টিফিকেট কেডিএতে জমা দিতে বলা হয়। কিন্তু তিনি শুধুমাত্র পঞ্চমতলার খেলাপী অংশ অপসারণ করেন। এছাড়া কনসার্টিং প্রতিষ্ঠান থেকে ‘ঝুকিমুক্ত’ সার্টিফিকেট জমা দিতে বলা হলেও তিনি দেননি। ফলে প্রায় বছর খানেক আগে তার ভবনের নকশা বাতিল করা হয়েছে। পরবর্তী ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এ বিষয়ে ভবন মালিককে ডেকে বিষয়টি জানতে চাওয়া হবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
ভবনটির মালিক অরুন সাহা নকশা বহির্ভূত পঞ্চমতলা নির্মাণের কথা স্বীকার করে এ প্রতিবেদককে বলেন, কেডিএ’র সঙ্গে আপোষ করে বর্ধিত অংশ ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে। তবে কনসার্টিং প্রতিষ্ঠান থেকে ভবনটি ‘ঝুকিমুক্ত’ সার্টিফিকেট কেডিএতে জমা দেননি। এমনকি তার ভবনের নকশা বাতিলের বিষয়টিও তার জানা নেই বলেও উল্লেখ করেন ব্যবসায়ী অরুন সাহা।
তিনি নগরীর শেখ পাড়া বাগান বাড়ি এলাকার ‘অটো স্পীয়ার’ নামক পার্সের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক।