কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরে ২৭হাজার ২০৭টির মধ্যে পদ শূন্য ১৮ হাজার ৯৭টি
কাজি সোহেল রানা : কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর ও এর অধীন প্রতিষ্ঠানগুলোতে দীর্ঘদিন ধরেই শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীর সংকট রয়েছে। এ নিয়ে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের পরও এখনো ৬৬ শতাংশের বেশি পদ শূন্যই রয়ে গেছে। অধিদপ্তর ও প্রতিষ্ঠানগুলোতে রাজস্ব খাত, রিজার্ভ, খণ্ডকালীন ও আউটসোর্সিংসহ মোট পদ রয়েছে ২৭ হাজার ২০৭টি। এর মধ্যে শূন্য পদের সংখ্যা ১৮ হাজার ৯৭টি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শূন্য পদ পূরণে দেরি হওয়ায় কারিগরি শিক্ষায় দীর্ঘমেয়াদি সংকট সৃষ্টি হয়েছে। অন্যদিকে কারিগরি শিক্ষা প্রশাসন বলছে, শূন্য পদ পূরণে সরকার কাজ করছে।
জানা গেছে, জাতীয় সংসদের শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির তৃতীয় বৈঠক হয় গত ২৩ মে। বৈঠকে কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের সার্বিক কার্যক্রমের বিষয়ে কমিটিকে অবহিত করা হয়। সেখানে কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর ও এর অধীন প্রতিষ্ঠানগুলোতে শূন্য পদ এবং সেগুলো পূরণে বাস্তব অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর ও এর অধীন ২৩০টি প্রতিষ্ঠানে মোট পদ রয়েছে ২৭ হাজার ২০৭টি। এর মধ্যে রাজস্ব খাতের পদ ২৬ হাজার ৩০৮টি। এ ছাড়া রিজার্ভ, খণ্ডকালীন, আউটসোর্সিংসহ মোট পদ রয়েছে ৮৯৯টি। রাজস্ব খাতে শূন্য পদের সংখ্যা ১৭ হাজার ৭৬৫টি। এর মধ্যে ১২ হাজার ৫০৮টি পদে সরাসরি নিয়োগ হবে। এ ছাড়া ৫ হাজার ২৫৭টি পদে পদোন্নতির মাধ্যমে পূরণ করতে হবে। অন্যদিকে রিজার্ভ, খণ্ডকালীন ও আউটসোর্সিং খাতে শূন্য পদ রয়েছে ৩৩২টি।
রাজস্ব খাতে কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীর মোট পদ ১৪৮টি। কর্মরত রয়েছেন ২৫ জন শিক্ষক ও কর্মকর্তা এবং ৬৫ জন কর্মচারী। অধিদপ্তরে শূন্যপদ ৫৮টি। এর মধ্যে ৩৫টি পদ সরাসরি নিয়োগযোগ্য এবং ২৩টি পদ পদোন্নতির মাধ্যমে পূরণযোগ্য। অধিদপ্তরের অধীন আঞ্চলিক পরিচালকের কার্যালয় রয়েছে ৮টি। এগুলোতে মোট পদ ৬৮টি। কর্মরত রয়েছেন ১০ জন শিক্ষক ও কর্মকর্তা এবং ২০ জন কর্মচারী। শূন্য পদ ৩৮টি। শূন্য পদের ১৭টি সরাসরি নিয়োগযোগ্য এবং ২১টি পদোন্নতির মাধ্যমে পূরণযোগ্য। ৪টি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে মোট পদ ২৪২টি। এর মধ্যে কর্মরত রয়েছেন ৭৯ জন শিক্ষক ও কর্মকর্তা এবং ৫৫ জন কর্মচারী। শূন্য পদ ১০৮টি। এগুলোর মধ্যে ৫৯টি সরাসরি নিয়োগযোগ্য এবং ৪৯টি পদোন্নতির মাধ্যমে পূরণযোগ্য।
একটিমাত্র টেকনিক্যাল টিচার্স ট্রেনিং কলেজে (টিটিটিসি) পদ রয়েছে ৬৩টি। এতে কর্মরত রয়েছেন ১২ জন শিক্ষক ও কর্মকর্তা এবং ২১ জন কর্মচারী। শূন্য পদ ৩০টি। শূন্য পদের ১০টি সরাসরি নিয়োগযোগ্য এবং ২০টি পদোন্নতির মাধ্যমে পূরণযোগ্য। একটিমাত্র ভোকেশনাল টিচার্স ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে (ভিটিটিআই) পদ রয়েছে ১১১টি। এতে কর্মরত রয়েছেন মাত্র ৩ জন শিক্ষক ও কর্মকর্তা এবং ২৯ জন কর্মচারী। শূন্য পদ ৭৯টি। শূন্য পদের ৪৯টি সরাসরি নিয়োগযোগ্য এবং ৩০টি পদোন্নতির মাধ্যমে পূরণযোগ্য।
৫০টি পলিটেকনিক বা মনোটেকনিক ইনস্টিটিউটে মোট পদ রয়েছে ১৪ হাজার ৩০০টি। এগুলোতে কর্মরত রয়েছেন ১ হাজার ৮৩১ জন শিক্ষক ও কর্মকর্তা এবং ৩ হাজার ৪১৯ জন কর্মচারী। শূন্য পদ ৯ হাজার ৫০টি। এর মধ্যে ৫ হাজার ৮৮৩টি সরাসরি নিয়োগযোগ্য এবং ৩ হাজার ১৬৭টি পদোন্নতির মাধ্যমে পূরণযোগ্য। ১৬৪টি সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজে মোট পদ রয়েছে ১১ হাজার ৩৪৪টি। এর মধ্যে কর্মরত রয়েছেন শিক্ষক ও কর্মকর্তা ২ হাজার ৭০ জন এবং কর্মচারী ৮৯২ জন। শূন্য পদ ৮ হাজার ৩৮২টি। এর মধ্যে ৬ হাজার ৪৪০টি সরাসরি নিয়োগযোগ্য এবং ১ হাজার ৯৪২টি পদোন্নতির মাধ্যমে পূরণযোগ্য। ৮টি সেন্ট্রাল স্টোর কাম-সার্ভিস ওয়ার্কশপে পদ রয়েছে ৩২টি। এর মধ্যে শিক্ষক বা কর্মকর্তা পদে ১ জন এবং কর্মচারী রয়েছেন ১১ জন। শূন্য পদ ২০টি। এর মধ্যে ১৫টি সরাসরি নিয়োগযোগ্য এবং ৫টি পদোন্নতির মাধ্যমে পূরণযোগ্য।
কারিগরি শিক্ষা প্রশাসন থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, অধিদপ্তরের ২২টি, ৮টি আঞ্চলিক পরিচালকের কার্যালয়ের ১০টি, ৪টি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ২০টি, টেকনিক্যাল টিচার্স ট্রেনিং কলেজে ৫টি, ভোকেশনাল টিচার্স ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে ১৯টি, ৫০টি পলিটেকনিক বা মনোটেকনিক ইনস্টিটিউটে ২ হাজার ৩১৩টি এবং ১৬৪টি সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজে (টিএসসি) ৪ হাজার ১৮৯টি পদে নিয়োগ প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। সব মিলিয়ে এই সংখ্যা সাড়ে ৬ হাজারের বেশি।
এ ছাড়া ১৩তম থেকে ২০তম গ্রেডের বিভিন্ন ক্যাটাগরির ৫৮৫টি পদের প্রশাসনিক অনুমোদন পাওয়া গেছে। যার মধ্যে সরকারি টিএসসির ৫৬৯টি পদ রয়েছে। দ্রুতই এর নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হবে। তবে কারিগরি শিক্ষা প্রশাসন বলছে, কয়েকটি কারণে বেশকিছু পদে নিয়োগ দেওয়া যাচ্ছে না। যেমন—ষষ্ঠ ও দশম গ্রেডের বিভিন্ন ক্যাটাগরির ৬১০টি পদ নিয়োগবিধিতে অন্তর্ভুক্ত নেই। তাই এসব পদে নিয়োগ কার্যক্রম গ্রহণ করা যায়নি। এ ছাড়া বিভিন্ন ক্যাটাগরির ১ হাজার ৮৯০টি পদ নিয়োগবিধিতে অন্তর্ভুক্ত না থাকায় নিয়োগ কার্যক্রম গ্রহণ করা যায়নি। ১৫টি সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজের একাডেমিক কার্যক্রম শুরু না হওয়ায় ৬৪৫টি পদে নিয়োগ কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়নি। আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকায় ৩৫টি পদে নিয়োগ কার্যক্রম গ্রহণ করা যায়নি। অবশিষ্ট সব শূন্য পদে দ্রুতই নিয়োগ কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছে কারিগরি শিক্ষা প্রশাসন।
পদোন্নতিযোগ্য শূন্য পদের বিষয়ে বলা হয়েছে, ফিডার পদে কর্মরত জনবল পদোন্নতিযোগ্য হলে তাদের পদোন্নতি দেওয়া হবে। তবে পলিটেকনিক বা মনোটেকনিক ইনস্টিটিউটে পর্যাপ্ত ফিডার পদ না থাকায় নিয়োগবিধি অনুযায়ী পদ শূন্য রয়েছে। এসব শূন্য পদে দ্রুতই নিয়োগ কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে। আর সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজে ৯০টি পদ নিয়োগবিধিতে অন্তর্ভুক্ত করা যায়নি।
এর বাইরে রিজার্ভ, খণ্ডকালীন ও আউটসোর্সিংয়ের ৮৯৯টি পদের মধ্যে শূন্য পদ ৩৩২টি। এর মধ্যে কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরে ১টি, ৮টি আঞ্চলিক পরিচালকের কার্যালয়ে ৪টি, ৪টি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ৫৫টি, একটি টেকনিক্যাল টিচার্স ট্রেনিং কলেজে ১৩২টি পদের সব, একটি ভোকেশনাল টিচার্স ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে ৮৫টি পদের সবই এবং ৫০টি পলিটেকনিক বা মনোটেকনিক ইনস্টিটিউটে ৯১টি পদের মধ্যে ৫৫টি পদ শূন্য রয়েছে।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আ স ম আহছান উল্লাহ কালবেলাকে বলেন, কারিগরিতে শিক্ষক ও কর্মচারীর সংকট প্রকট। বিষয়টি নিয়ে একাধিকবার সাংগঠনিকভাবে বললেও সমাধান হয়নি। এখন যে পদগুলো পূরণের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে, তাতে শিক্ষকের সংকট কিছুটা হয়তো কমবে। তবে কর্মচারী না থাকলে প্র্যাকটিক্যাল ক্লাস করা কঠিন। বর্তমানে কর্মরত শিক্ষক ও কর্মচারীদের ওপর চাপ বেড়েছে। শিক্ষার্থীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তাই সরকারের উচিত সরাসরি নিয়োগ করা যায় এমন সব পদে নিয়োগ কার্যক্রম ত্বরান্বিত করা।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব ড. ফরিদ উদ্দিন আহমদ কালবেলাকে বলেন, যে পদগুলো শূন্য রয়েছে সেগুলো দুইভাবে পূরণ হবে। যেসব পদ সরাসরি নিয়োগ হবে সেগুলোর নিয়োগ প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। পিএসসিতে (সরকারি কর্ম কমিশন) রিকুইজিশন দেওয়া আছে। অন্যদিকে পদোন্নতিযোগ্য পদগুলোতে যোগ্যতা অর্জন না করলে তো পাঁচ থেকে ছয় বছর ফাঁকাই থাকবে। এ সময়ের মধ্যে যেসব পদ শূন্য হবে, সেসব পদেও একই প্রক্রিয়ায় নিয়োগ হবে