খাদ্য পরিদর্শক সমিতির মানববন্ধন ও অবস্থান কর্মসূচী পালন:


#খুলনায় খাদ্য পরিদর্শককে মারপিটে অভিযুক্ত ডিলার আইয়ুব আলীকে গ্রেফতার,বিচার ও ডিলারশীপ বাতিলে ৭২ঘন্টার আলিটমেটাম, তদারকি কার্যক্রম বন্ধের হুশিয়ারী
মো : আ‌মিরুল ইসলাম বাবু খুলনা ব্যুরো ।।
খুলনায় খাদ্য পরিদর্শক ওএমএস তদারকি কর্মকর্তা মোঃ নাজমুল হাসানকে সরকারী কাজে বাধাদান ও মারপিটের ঘটনায় ওএমএস ডিলার মোঃ আইয়ুব আলী মুন্সীকে গ্রেফতার, কঠোর শাস্তি ও ডিলারশীপ বাতিলে ৭২ঘন্টার আল্টিমেটাম দিয়েছে খাদ্য পরিদর্শক সমিতির। অন্যথায় খুলনাসহ বিভাগের সকল ওএমএস তদারকি কার্যক্রম বন্ধ করার হুশিয়ারী দিয়েছেন পরির্দশক সমিতির নেতৃবৃন্দ। রবিবার দুপুরে খুলনা বিভাগীয় বাংলাদেশ খাদ্য পরিদর্শক সমিতির মানববন্ধন, অবস্থান কর্মসূচী ও সমাবেশ থেকে এ ঘোষনা দেয়া হয়। খুলনা আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ের সামনের খুলনা-যশোর মহাসড়কে মানববন্ধন এবং কার্যালয় চত্বরে অবস্থান কর্মসূচী ও সমাবেশ করে। খুলনা বিভাগীয় বাংলাদেশ খাদ্য পরিদর্শক সমিতির সহসভাপতি শেখ মনিরুল ইসলামের সভাপতিত্বে মানববন্ধন, অবস্থান ও সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন খুলনা জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো: তাজুল ইসলাম। সমাবেশে বক্তৃতা করেন বাংলাদেশ খাদ্য পরিদর্শক সমিতির বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মো: আশরাফুজ্জামান,খুলনা সিএসডির ব্যবস্থাপক মো: কামরুজ্জামান, মহেশ্বরপাশা সিএসডির ব্যবস্থাপক মো: মোশাররফ হোসেন, অতিরিক্ত আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো: জহিরুল ইসলাম, সিএমএস শেখ মশিয়ার রহমান, উপখাদ্য নিয়ন্ত্রক শেখ আনোয়ারুল করীম, সহকারী খাদ্য নিয়ন্ত্রক বাদল কুমার বিশ্বাস, খাদ্য পরিদর্শক মো: রবিউল ইসলাম, মো: ইসমাইল আদম, রাশেদ আলী রিপনসহ খুলনা বিভাগের বিভিন্ন জেলা-উপজেলার খাদ্য পরির্দশকবৃন্দ।
সমাবেশে খুলনা বিভাগীয় বাংলাদেশ খাদ্য পরিদর্শক সমিতির সহসভাপতি শেখ মনিরুল ইসলাম বলেন, সরকারের খাদ্য বান্ধন কর্মসূচীর অন্যতম ওএমএস কার্যক্রমের জন্য খাদ্য পরিদর্শকবৃন্দ খুবই ঝুঁকি নিয়ে কাজ করে থাকেন। অনেক পরিদর্শককে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করতে হয়। তারপরেও ওএমএস ডিলার, স্থানীয় রাজনৈতিক ও প্রভাবশালীদেও দ্বারা প্রতিনিয়ত সরকারী কাজে বাধা, হামলার শিকার হচ্ছেন। কিন্তু খাদ্য পরিদর্শকরা কোন প্রতিকার ও সুষ্ঠ বিচার পাচ্ছেন না। এজন্য ঝুঁকি ও হুমকির মাত্রা দিন দিন বাড়ছে। গত ২৫এপ্রিল খুলনা নগরীর বানরগাতী বাজার সংলগ্ন ডলফিন ভিডিও মোড়ে ২৫নং ওয়ার্ড আ’লীগের সভাপতি সরকারী ওএমএস ডিলার মোঃ আইয়ুব আলী মুন্সীর মেসার্স প্যারাডাইস এন্ড কোম্পানীর বিক্রয় কার্যক্রম পরির্দশনকালে তদারকি কর্মখর্তা নাজমুল হাসানের উপর যেভাবে হামলা ও মারপিটের ঘটনা ঘটেছে তা দু:খজনক। একটি ভিডিওতে সেটা স্পষ্ট হয়েছে ডিলার আইয়ুব আলী জঘন্য অপরাধ করেছেন। কাজেই আগামী ৭২ঘন্টার মধ্যে হামলাকারী আইয়ুব আলীর ডিলারশীপ বাতিল, তাকে গ্রেফতার ও উপযুক্ত শাস্তির দাবী জানাচ্ছি। তা না হলে খাদ্য পরিদর্শকরা আর ওএমএস তদারকির কাজ করবে না। প্রয়োজনে অনির্দিষ্টকালের জন্য অবস্থান ও ধর্মঘট চালিয়ে যাবে বলেও ঘোষনা দেন তিনি।
মানববন্ধন ও সমাবেশের প্রধান অতিথি জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. তাজুল ইসলাম বলেন, ঘটনাটি জানার পরপরই ভিডিওসহ সকল প্রমান পাওয়ায় ডিলার মো. আইয়ুব আলী মুন্সির দোকান সিলগালাসহ সোনাডাঙ্গা মডেল থানায় সংশ্লিষ্ট ডিলারের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ জঘন্য ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে তিনি আরও বলেন, জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ের পক্ষ থেকে খুলনা আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক ও খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে সুপারিশসহ প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে। অভিযুক্ত আইয়ুব আলীর ডিলারশীপ বাতিলসহ তাকে গ্রেফতারের দাবীর সাথে একাত্বতা প্রকাশ করে খাদ্য পরিদর্শকদের আন্দোলন-সংগ্রামে তিনি সব সময় থাকবেন বলেও ঘোষনা দেন।
এদিকে,
উল্লেখ্য, গত ২৫এপ্রিল দুপুরের দিকে সরকারের খাদ্য বান্ধব কর্মসূচীর আওতায় বৃহস্পতিবার জেলা খাদ্য বিভাগের পরিদর্শক মোঃ নাজমুল হাসান তদারকি কর্মকর্তা হিসেবে নগরীর বানরগাতী বাজার সংলগ্ন ডলফিন ভিডিও মোড়ে ওএমএস ডিলার ২৫নং ওয়ার্ড আ’লীগের সভাপতি আইয়ুব আলী মুন্সির দোকান মেসার্স প্যারাডাইস এন্ড কোম্পানীর বিক্রয় কার্যক্রম পরিদর্শনে যান। এ সময়ে তিনি বিক্রয় কেন্দ্রে ৩৩টি বস্তায় এক মেট্রিক টন চাল এবং ১০টি বস্তায় ৫০০ কেজি আটা দেখতে পান। বরাদ্ধ দেয়া অবশিষ্ট ১০ বস্তা বা ৫০০ কেজি আটা আনতে বলেন এবং অবশিষ্ট আটা বিক্রয় পয়েন্টে না আনা পর্যন্ত ওএমএস বিক্রয় কার্যক্রম শুরুর অনুমতি দিতে পারবেন না বলে জানান খাদ্য পরিদর্শক নাজমুল হাসান। পরে তিনি বিক্রয় কেন্দ্রের বিপরীত দিকের একটি গ্যাসের দোকানের সামনে অবস্থান করতে থাকেন। এ সময় তিনি ৫০০ কেজি আটা কম থাকার বিষয়টি জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো: তাজুল ইসলামকে মোবাইলে অবহিত করতে গেলে ওএমএস ডিলার আইয়ুব আলী মুন্সী তার উপর ক্ষিপ্ত হয়ে তেড়ে এসে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। এক পর্যায়ে খাদ্য পরিদর্শক নাজমুল হাসানকে গলা ধাক্কা দিয়ে গ্যাসের দোকানের ভিতরে নিয়ে এলোপাতাড়ি মারপিট করেন ওএমএস ডিলার আইয়ুব আলী মুন্সী। পরে খবর পেয়ে মহানগর খাদ্য পরিদর্শক লিটন কুমার বিশ্বাসসহ অন্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে তাকে উদ্ধার করে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেন। ##