পায়ে নূপুর পরে আর ছোটাছুটি করবে না ছোট্ট আবিরা
আমির হোসেন মাসুম : তিন বছরের ছোট্ট আবিরা। ঘরের সবার আদরের পুতুল ছিল যেন সে।হাতে চুড়ি আর পায়ে নূপুর পরে সারা বাড়ি ছোটাছুটি করতো। রিনিঝিনি শব্দ তোলা চুড়ি আর নুপুর পরেই আবিরা তার দাদার সঙ্গে গিয়েছিল বাড়ির পাশেই দোকানে, তার প্রিয় ‘মজা’ (খাবার) কিনতে। কিন্তু সেই ‘মজা’ আর কেনা হলো না। সড়কে বেপরোয়া গতির এক অটোরিকশা কেড়ে নিয়েছে তার প্রাণ।
বুধবার (১৭ এপ্রিল) বিকেল ৪টার দিকে নারায়ণগঞ্জ আড়াইহাজারের খাসেরকান্দি ইব্রাহিম ইভুর বাড়ির সামনের সড়কে ওই অটোরিকশার ধাক্কায় গুরুতর আহত হয় ছোট্ট মেয়েটি। তৎক্ষণিকভাবে পরিবারের লোকজন তাকে উদ্ধার করে নিয়ে যায় স্থানীয় হাসপাতালে। সেখানে শিশুটির অবস্থা অবনতি হলে তাকে আনা হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে। তবে বাঁচানো যায়নি। এখানে চিকিৎসকরা আবিরাকে রাত পৌনে ৮টার দিকে মৃত ঘোষণা করেন।
আবিরা খাসিরকান্দি গ্রামের সৌদি প্রবাসী মোশারফ হোসেন ও তাইমা খাতুন দম্পতির একমাত্র মেয়ে। তার বাবা দুই বছর ধরে সৌদি আরবে থাকছেন।
শিশুটির দাদা ইব্রাহিম ইভু বলেন, বিকেলে আবিরা বায়না করে, দোকান থেকে মজা খাবে। তার জন্য মজা এনে দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু সেটা সে খাবে না। আবিরা পুনরায় বাসার সামনে দোকানে মজা কিনতে যায়। আমি তার পাশেই দাঁড়িয়েছিলাম। হঠাৎ চোখের পলকেই একটি অটোরিকশা আমার নাতনিকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। পরে তাকে উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালের নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে ঢাকা মেডিকেল আনলেও বাঁচাতে পারিনি।
আবিরার মৃত্যুতে হাসপাতালে আহাজারি করছিলেন তার মা ও দাদি। তাদের বুকফাটা চিৎকারে হাসপাতালে আসা অন্যদেরও চোখ মুছতে দেখা যায়।
শিশুটির দাদা আরও বলেন, তিন দিন ধরে আবিরা হাতে চুড়ি আর পায়ে নূপুর পরে সারা বাড়ি দৌড়াদৌড়ি করছে। বাসার লোকজন আবিরার হাত ও পা থেকে সেগুলো খুলতে গেলে সে কান্নাকাটি করতো। কাউকে খুলতে দিতো না চুড়ি-নূপুর। ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে ট্রলির ওপরে যখন আমার নাতনির মরদেহ রাখা হয় তখন আশেপাশের লোকজন বলেছে, বাচ্চার চুড়ি-নূপুর খুলতে। তখনই তার চুড়ি ও নূপুর খুললাম, বুকটা ফেটে যাাচ্ছিল।
ঢামেক হাসপাতাল পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ (পরিদর্শক) বাচ্চু মিয়া জানান, শিশুটির মরদেহ হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে। বিষয়টি আড়াইহাজার থানাকে অবগত হয়েছে।