খুলনায় ইফতার, তারাবি-সেহরিতেও বিদ্যুৎ থাকছে না # প্রচন্ড তাপদাহ এবং ঘন ঘন লোডশেডিংয়ে নাভিশ্বাস
মুহাম্মদ নূরুজ্জামান, খুলনা
চলছে পবিত্র মাহে রমজান। ইবাদত-বন্দেগীর মাস। কিন্তু স্বস্থি নেই। ইফতার, তারাবি এমনকি সেহরির সময়ও বিদ্যুৎ থাকছে না। চলছে লোডশেডিং। একদিকে চৈত্রের খরতাপ, অন্যদিকে বিদ্যুৎ বিভ্রাটে নগরবাসীর যেন নাভিশ্বাস উঠছে। গত কয়েকদিনের েএ চিত্রে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্করা গরমে নাকাল অবস্থায় রয়েছে।
বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে রোজাদার না রাতে ঘুমাতে পারছেন, না দিনে। সাহরি, ইফতার এবং তারাবীতেও নেই শান্তি। শহরের বিভিন্ন স্থানের ঈদ মার্কেট গুলোতে মানুষের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে । এছাড়া লোডশেডিং’র কারণে মটর চালাতে না পেরে পানিও উঠাতে পারছেন না অনেকেই। যদিও পানির স্তর নেমে যাওয়ায় সাব-মার্সিবল ছাড়া সাধারণ ডিপটিউবলেও পানি উঠছেনা নগরীর অনেক এলাকায়।
ওজোপাডিকোর সূত্রমতে, ২ এপ্রিল খুলনা সাউথ ডিভিশনে বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ৪০ কিলোওয়াট। কিন্তু সরবরাহের জন্য প্রস্তুত ছিল মাত্র ২০ কিলোওয়াট। ৩ এপ্রিল এই ডিভিশনে বিদ্যুতের একই চাহিদা থাকলেও সরবরাহের জন্য প্রস্তুত ছিল ৩০ কিলোওয়াট। প্রায় অর্ধেক পরিমান বিদ্যুৎ ঘাটতি থাকায় এই বিভ্রাট হচ্ছে বলে জানিয়েছে সুত্রটি। আগামী ৪ থেকে ৫ দিন এমন লোডশেডিং থাকতে পারে বলেও এই সূত্র জানিয়েছে।
এদিকে, কেউ কেউ আইপিএস বা জেনারেটরের সাহায্যে বিদ্যুতের অভাব মেটালেও সাধারণ মানুষের পক্ষে মোমবাতি জোগাড় করাই কষ্টসাধ্য। বিদ্যুৎ সংকটে বিভিন্ন শিল্প-কারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। এতে লোকসানের মুখে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। অপরদিকে, প্রচন্ড গরমে হিটস্ট্রোক, ডায়রিয়া, শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগবালাই দেখা দিয়েছে। লোডশেডিংয়ের কারণে হাসপাতালে রোগীদের সেবায় হিমশিম খেতে হচ্ছে চিকিৎসক ও নার্সদের।
খুলনার একটি বেসরকারী হাসপাতালের চিকিৎসক বলেন, সারাক্ষণ বিদ্যুৎ যাওয়া-আসার কারণে রোগীদের ঠিকমতো সেবা দিতে পারছি না।
খুলনা চিত্রালী সুপার মার্কেটে ঈদের কেনাকাটা করতে আসা জামাল মোড়ল জানান, “গতরাতে সর্বমোট বিদ্যুৎ ১ ঘন্টা করে থাকছে। এতে ঘুমে মারাত্মক ব্যাঘাত ঘটেছে। সকাল থেকে আবারও লোডশেডিং শুরু। ঈদের কেনাকাটা করতে এসেও গরমে শান্তিতে কেনাকাটা করা যাচ্ছে না”।
খুলনার মোহাম্মদনগর এলাকার বাসিন্দা মোশাররফ আলী জানান, “মাস শেষে আমরা ঠিকই বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করি, কিন্তু বিদ্যুৎ ঠিকমত থাকছে না। এ ভোগান্তি আর কতদিন- প্রশ্ন করেন তিনি।
বাইতুল ফালাহ জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা আবুল হারেস জানান, “মাত্রাতিরিক্ত লোডশেডিং এর কারণে সাহরি ও ইফতার ঠিকমতো করতে পারিনা। তারাবি কিংবা তাহাজ্জুদে একটু প্রশান্তি নিব তাও সম্ভব হয় না। শুধু মাহে রমজান আসলেই কেন এমনটা হয় কর্তৃপক্ষের কাছে আমাদের প্রশ্ন।
স্থানীয় অটোচালক মোঃ রাকিবুল ইসলাম জানান “আমাদের রিজিক অন্বেষণ এর একমাত্র পথ এ ইজিবাইক। রাতে চার্জ না হওয়ার কারণে দিনের বেলা অটো নিয়ে বের হতে পারি না। ফলে দৈনন্দিন বাজার করা বন্ধ। ইফতারও করতে পারিনা, ঈদের কেনাকাটাও করা হয়নি”।
এ ব্যাপারে ওজোপাডিকোর কর্মকর্তা মাহামুদুল হক জানান, বিদ্যুৎ ঘাটতির কারণে ঘন ঘন লোডশেডিং দেওয়া হচ্ছে । তবে ঈদের পূর্বমুহূর্তে কমে যাবে লোডশেডিং।