খুলনায় পৈত্রিক সম্পত্তি থেকে বোনকে বঞ্চিত করতে ভাই-ভাবির অত্যাচার-নির্যাতন ও ষড়যন্ত্রের অভিযোগ


নিজস্ব প্রতিবেদক:
খুলনা নগরীর মিয়াপাড়ায় ছোট বোন দিলারা নাসরিন ঝর্নাকে পৈত্রিক সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত ও জবর দখল করতে বড়ভাই জামিল হায়দার ও তার স্ত্রী বেপরোয়া অত্যাচার-নির্যাতন ও ষড়যন্ত্র করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এমনকি পিতার মৃত্যুর পর পারিবারিক সম্পত্তির ভাগ না দেওয়া, বোনকে না জানিয়ে জমি বিক্রি করা ও সম্পত্তি জবর দখলের পায়তারা করছে বড়ভাই জামিলগং। এ বিষয়ে কেসিসির ২৮নং ওয়ার্ড কাউন্সিলরের মাধ্যমে সালিশী বৈঠকের সিদ্ধান্ত ও পারিবারিক সমঝোতার কোনো সিদ্ধান্তই না মেনে বোন ঝর্ণার সম্পত্তি দখলে রীতিমতো চরম আগ্রাসী কর্মকান্ড করছে ভাই জামিল হায়দার ও তার স্ত্রী সোনিয়া আখতার রিতা। তাদের এ ধরনের অত্যাচার ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে চরম নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন ঝর্না এবং ভাড়াটিয়া পরিবার । ওয়ারিশ সূত্রে প্রাপ্ত সম্পত্তি জবর দখলের অভিযোগ এনে আইনগত ব্যবস্থার জন্য ইতিমধ্যেই বোন ঝর্ণা তার ভাই জামিল হায়দারকে উকিল নোটিশ পাঠিয়েছেন।
দিলারা নাসরিন ঝর্নার অভিযোগের সূত্রে জানা গেছে, খুলনা সদরের ০৭নং মিয়াপাড়া প্রথম গলির বাসিন্দা মৃত রশিদ মোল্লার মৃত্যুর পর তার রেখে যাওয়া বাড়ি ভাই-বোনদের মধ্যে ভাগাভাগি হয়। বাড়ির তৃতীয় তলার অধিকার পান দিলারা নাসরিন ঝর্না। ঝর্নার প্রাপ্ত তৃতীয় তলায় ভাটিয়া হিসেবে বসবাস করে আসছেন ভাড়াটিয়া বিধানচন্দ্র ঘোষ ও তার পরিবার। ওয়ারিশ হিসেবে বাড়ি ভাগাভাগি হওয়ার পর থেকে ঝর্নার বড়ভাই জাপানি একটি ফার্মে কর্মরত জামিল হায়দার ও তার স্ত্রীর অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে ভাড়াটিয়া পরিবারটি। তাদের চলাচল ও বাসায় ওঠা-নামার সিড়িতে মালপত্র রেখে পথ বন্ধ করে দেওয়া, কারনে অকারনে পানির লাইন বন্ধ করা, চুরি করে বিদ্যুৎ লাইন কেটে দেওয়া ও মলমূত্র ফেলে রাখাসহ বিভিন্ন রকম অত্যাচার-নির্যাতন শুরু করে। এমনকি সামান্য বিষয় নিয়ে ঝর্না ও তার ভাড়াটিয়াকে হুমকি-ধামকি ও অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে জামিল হায়দার ও তার পরিবার। এভাবে জামিল হায়দার ও তার পরিবারের সদস্যরা প্রতিনিয়ত অত্যাচার-নির্যাতনের মাধ্যমে অতিষ্ঠ করে তুলেছে ঝর্না ও তার ভাড়াটিয়াকে। এছাড়া, পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া গ্রামের বাড়ির সম্পত্তির ভাগ থেকেও বড়ভাই জামিল বঞ্চিত করার পায়তারা করছে বলেও অভিযোগ করেছেন ঝর্না।
অভিযোগে ঝর্না আরও জানায়, পৈত্রিক বাড়ীর জবর দখলের চেষ্টা ও অত্যাচার-নির্যাতনের বিষয়ে কেসিসির ২৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলরের নিকট অভিযোগ দিলেও সেই শালিস মানেনি বড় ভাই জামিল হায়দার। ওয়ার্ড কাউন্সিলরের দেয়া শালিস বৈঠকের সিদ্ধান্ত ও পারিবারিকভাবে সমঝোতার কোনো সিদ্ধান্তই মানছে না তারা। জামিল হায়দার ও তার স্ত্রী সোনিয়া আখতার রিতা আপন বোন ঝর্ণার সম্পত্তি দখলের নেশায় বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। তাদের হুমকি ও ভয়ভীতির কারনে এখন চরম নিরাপত্তাহীণতায় রয়েছেন ঝর্না ও তার বাড়াটিয়ারা।জামিল হায়দার ও তার স্ত্রীর অথ্যাচার-হয়রানির শিকার ভুক্তভোগী ভাড়াটিয়া বিধানচন্দ্র ঘোষ জানান, আমি পরিবারসহ এই বাড়িতেই বিগত ১৫ বছর যাবত বসবাস করে আসছি। বাড়ির মূল মালিক রশিদ মোল্লার মৃত্যুর পর সন্তানদের মধ্যে বাড়িটি ভাগাভাগি হয়ে যায়। আমার বসবাসরত তৃতীয় তলা ওয়ারিশ হিসেবে পান বাড়িওয়ালার মেয়ে দিলারা নাসরিন ঝর্ণা। ভাগাভাগি হওয়ার পর থেকে বাড়িওয়ালার বড়ছেলে জামিল হায়দার, তার স্ত্রী ও পরিবারের সদস্যরা আমাদের উপরে নির্যাতনমূলক আচরণ শুরু করে। চলা ফেরায় বাসার পথে ও সিঁড়িতে উঠতে নামতে বিভিন্ন প্রকার ব্যাঘাত সৃষ্টি করে কোন কিছু বললে বা জানতে চাইলে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও মারতে উদ্যত হয়। ১৫টি বছর বসবাস করার পরও এ বাড়িতে আজ আমরা অসহায়ের মত বসবাস করছি। তিনি আরো বলেন, এ সমস্যা সমাধানের জন্য ২৮ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কাছে একটা লিখিত অভিযোগ করলে দুই পক্ষকে ডেকে কাউন্সিলর সমাধানের চেষ্টা করেন। তখন কাউন্সিলরের দেয়া সব সিদ্ধান্ত ও শর্ত মেনে নেয় জামিল হায়দার। কিন্তু বাসায় আসার পর থেকে আরো বেপরোয়া হয়ে ওঠে। সে যেকোন সময় হামলা করে ক্ষতি করতে পারে। এজন্য চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।
ওয়ারিশ সূত্রে প্রাপ্ত মালিক বাড়িওয়ালার মেয়ে দিলারা নাসরিন ঝর্ণা জানান, পিতার মৃত্যুর পরে নিয়ম অনুযায়ী সম্পত্তি ভাগাভাগিতে বাড়ির তৃতীয় তলাটি আমার ভাগে আসে। দীর্ঘ ১৫ বছর যাবত ভাড়াটিয়া হিসেবে বসবাস করে আসা বিধান চন্দ্র ঘোষ ও তার পরিবারের সাথে আমাদের সম্পর্ক ভালো হওয়ায় আমি ভাড়াটিয়া হিসেবে তাদেরকে রেখে দেই। কিন্তু আমার বড় ভাই জামিল হায়দার ও তার স্ত্রী সোনিয়াসহ তার পরিবারের সদস্যরা ভাড়াটিয়াদের উপরে বিভিন্ন রকম অসৌজন্যমূলক আচরণ, চলাচলের পথ বন্ধ, সিঁড়িতে ময়লা রাখাসহ বিভিন্ন ভাবে হয়রানি করে আসছে। এমনকি বিধানচন্দ্র ঘোষ, তার স্ত্রী ও মেয়েরা বাইরে বের হলে আমার বড় ভাইয়ের স্ত্রী সোনিয়া আফরিন রিতা তাদের সাথে বাজে অশ্লীল, অসৌজন্যমূলক ও রুচিহীন আচরণ করে।যা সত্যি খুবই দুঃখজনক ও আমাকে খুব মর্মাহত করেছে।
তিনি আরও জানান, বড় ভাই জামিল হায়দার আমাকে আমার ভাগের তৃতীয় তলাটি তাকে লিখে দিতে প্রস্তাব দেয়। পরে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে ২০ লক্ষ টাকার বিনিময়ে লিখে দেয়ার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়। তবে লিখে দেয়ার সময় নগদ ১৪ লক্ষ টাকা এবং বাকী ৬ লক্ষ টাকা পরবর্তীতে দেয়ার কথা হলেও আজ পর্যন্ত কোন টাকাই দেননি সে। বরং অবৈধভাবে বাড়িটি সম্পূর্ণ দখল করার পায়তারা চালিয়ে যাচ্ছে। এছাড়া আমাদের গ্রামের বাড়ি বটিয়াঘাটা উপজেলা ঝালবাড়িয়ায় পৈতৃক সম্পত্তির অংশ আমাদেরকে বুঝিয়ে না দিয়ে সম্পূর্ণটা জমি বড়ভাই জামিল একাই জবর দখল করার পায়তারা চালাচ্ছে। এমতাবস্থায় একই বাবার সন্তান হয়ে আমি আমার প্রাপ্য সকল সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। এমনকি আমার মেয়ে ও মেয়ের জামা য়ের কাছ থেকে কয়েক লক্ষ টাকা ধার নিলেও সে টাকা ফেরত দেয়নি জামিল হায়দার। টাকা ফেরত চাইতে গেলে বিভিন্ন বাহানায় এড়িয়ে গিয়ে হুমকি-ধামকি দিয়ে যাচ্ছে। তার আগ্রাসী কর্মকান্ডের কারনে আমরা চরম নিরাপত্তাহীনতায় দিন কাটাচ্ছি। সে কারনে আইনগত ব্যবস্থা নিতে বড়ভাই জামিল হায়দারকে ইতিমধ্যেই উকিল নোটিশ পাঠিয়েছি।
অভিযুক্ত জামিল হায়দার জানান, বিল্ডিংয়ের তৃতীয় তলার ফ্লাট আমার বোনের প্রাপ্য। সেখানে তার ভাড়াটিয়া আছে, সে নিয়মিত ভাড়াও নিচ্ছে। তবে একই ভবনে থাকতে হলে অনেক সময় টুকটাক সমস্যা হতেই পারে। আমাদের মধ্যে একটু আধটু ঝামেলা হলেও আবার ঠিক হয়ে যায়। গ্রামের সম্পত্তি জবর দখলের বিষয় জানতে চাইলে তিনি জানান, গ্রামে যা সম্পত্তি আছে আমার বোনের অংশ আমার বোন বুঝে পেয়েছে। সে তার ভাগ নিয়ে যাচ্ছেন, প্রতি বছর জমি বাবদ টাকা পাচ্ছে। আর আমার কাছে টাকা পাবে এটা ঠিক আছে। তাই বলে টাকা চাইলেই কি পাওয়া যায়, টাকা কাছে থাকা লাগবে না? ভাড়াটেদের অত্যাচার-নির্যাতনের কথা এক পর্যায়ে স্বীকার করে তিনি বলেন, আমাদের ভাই-বোনের ভিতরে যে ঝামেলা হয়েছিল আমি তার সাথে কথা বলছি। আমরা সমাধান করে নিচ্ছি। তবে আমি কোন উকিল নোটিশ এখনো পাইনি। আমি বাড়িতে থাকি না উকিল নোটিশ পেলে আমি তার জবাব দেবো। কিন্তু এসব কথা শোনা ও জানার আপনি কে? আমি এখনই আমার বোনের সাথে কথা বলছি দেখি সে কেন আমার নামে উকিল নোটিশ পাঠিয়েছে বলে ফোনের লাইন কেটে দেন। ##