খুলনার রূপসা ভূমি অফিস অনিয়ম-দুর্নীতির আঁখড়া


# সার্ভেয়ার আতিকের বিরুদ্ধে ঘুষ লেনদেনের অভিযোগ
# ঘুষ দাবির কথোপকথনের রেকর্ড ফাঁস
# বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসক বরাবর অভিযোগ

কাজি সোহেল রানা : মালিকানাধীন জমি সরকারি বলে ভয় দেখিয়ে ঘুষ দাবি, জমির মিউটেশনে হয়রানি, ফাইল প্রতি টাকা দাবি, এমনকি টাকা না দিলে ফাইল পড়ে থাকছে দীর্ঘকাল- এসব ঘটনা খুলনার রূপসা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) অফিসের নিত্যদিনের। বিশেষ করে এ অফিসের সার্ভেয়ার আতিকুর রহমান ঘুষ লেনদেনের ক্ষেত্রে অগ্রগামী ভূমিকা পালন করে থাকেন। সম্প্রতি সার্ভেয়ার আতিক একটি জমির মিউটেশন বাবদ দেড় লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেছেন। এমনকি ঘুষ দাবির ক্ষেত্রে তিনি সহকারী কমিশনার, ভূমি (এসিল্যান্ডের) নামও ব্যবহার করেছেন। যার অডিও রেকর্ড ফাঁস হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে এলাকায় সমালোচনার ঝড় বইছে। এর বাইরেও সার্ভেয়ার আতিকের বিরুদ্ধে অসংখ্য ব্যক্তির অভিযোগ রয়েছে।
অপরদিকে, ঘুষের দাবিকৃত অর্থ না পাওয়ায় সংশ্লিষ্টর জমির মিউটেশন আবেদন খারিজ করা হয়েছে। এ বিষয়ে প্রতিকার চেয়ে ভূক্তভোগী দু’জন জমির মালিক বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছেন। এ বিষয়ে তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণের আশ^াস দিয়েছেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব)।
অভিযোগ রয়েছে, উপজেলা ভূমি অফিসে মিউটেশনসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাজ করতে গিয়ে নানা জটিলতায় পড়ে দিশেহারা হচ্ছেন জমির মালিকরা। যারা অফিসের অর্থের চাহিদা মিটাতে পারছেন, কেবল তাদের কাজ করে দেওয়া হচ্ছে তড়িঘড়ি করে। আর যারা অর্থ দিতে পারছে না, তাদের ফাইল পড়ে থাকছে দিনের পর দিন। এমনকি ‘জমিতে ঝামেলা আছে’, ‘সরকারি জমি’ ইত্যাদি বলে বিভ্রান্ত করে অনেককেই হয়রানি করে ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
সূত্রে জানা গেছে, রূপসা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) অফিসে ঘুষ দাবি ও হয়রানির প্রতিকার চেয়ে গত ৭ ফেব্রুয়ারী ভূক্তভোগী রহমান এইচ শেখ ও এস এম খানজাহান আলী খুলনা বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসক বরাবর পৃথকভাবে লিখিত অভিযোগ করেছেন। লিখিত অভিযোগে বলা হয়েছে, তাদের মিউটেশন আবেদনের ক্ষেত্রে সার্ভেয়ার রির্পোট না করে নামজারি নামঞ্জুর করেন। কারণ দেখানো হয়, সংশ্লিষ্ট খতিয়ান ভিপি তালিকাভূক্ত। এ সময় ভূক্তভোগী ও তার প্রতিনিধিরা যোগাযোগ করলে সার্ভেয়ার আতিক ‘প্রতি কেচে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা দিতে হবে’ বলে প্রস্তাব দেন। তা নাহলে উক্ত জমি সরকারি করে দেওয়ার ভয়ভীতি দেওয়া হয়। যার অডিও রেকর্ড রয়েছে।
ফাঁস হওয়া কল রেকর্ডে এসিল্যান্ডকে ইঙ্গিত করে সার্ভেয়ার আতিককে বলতে শোনা যায়, ‘স্যারকে বলবো আমার ভাগে একটু কম দিয়েন। এই কথা বলে আমি বড়জোর ৫-১০ হাজার টাকা কমাতে পারি। আর যদি না হয় তাহলে আমার কাছে যেটা আছে (অগ্রীম গ্রহণকৃত) ওইটা নিয়ে যান। মানুষের টাকা রাখলে গায়ে জ্বালা হয়।’  
এসিল্যান্ডকে ইঙ্গিত করে রেকর্ডে আরও বলতে শোনা যায়, আগে মেহেরপুরে ছিলো এবং ম্যান হলো চুয়াডাঙ্গার (বাড়ি)। জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী উনার আত্মীয় হয়- উল্লেখ করে আব্দুল্লাহ আল বাকী টাকা ছাড়া কিছুই চেনেনা’। এ সময় ভূক্তভোগীরা এক লাখ টাকা করে দিতে চাইলেও আতিক দেড় লাখের কমে হবে না বলে সাফ জানিয়ে দেন। আবেদনে ভূক্তভোগীরা প্রতিকারের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণে উর্ধতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
ঘুষ দাবির অভিযোগের বিষয়টি রূপসা উপজেলা ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার আতিকুর রহমান অস্বীকার করে বলেন, তার একটি কল রেকর্ডের কথা তিনিও শুনেছেন। তবে রেকর্ডি তার নয় বলে দাবি করেন তিনি।
রূপসা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আব্দুল্লাহ আল বাকী বলেন, নামজারিতে পেশকার কর্তৃক অর্থ দাবির বিষয়টি তার জানা নেই। তবে তার নাম ব্যবহার করে সার্ভেয়ার টাকা দাবি করে থাকলে তার কারণ জানতে চাইবেন তিনি। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে খুলনার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মুকুল কুমার মৈত্র বলেন, সার্ভেয়ার অতিকুর রহমানের বিরুদ্ধে ঘুষ দাবি সংক্রান্ত একটি অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে তদন্ত পূর্বক যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রসঙ্গত, এর আগে আরও এক ভূক্তভোগী জমি মালিক রূপসা উপজেলার আইচগাতি মৌজার সেনের বাজার এলাকার একটি জমির মিউটেশনের বিষয়ে হয়রানির অভিযোগে সম্প্রতি সার্ভেয়ার আতিকুর রহমানের বিরুদ্ধে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হয়।