খুলনার দুটি আসনে স্বতন্ত্রের পাল্লা ভারী : চারটিতে নৌকা বিজয়ের সম্ভাবনা

Exif_JPEG_420

# নির্বাচনের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন

# দুই নারীসহ লড়ছেন ৩৯ প্রার্থী

# আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিরাপত্তা বলয়

# ভোট পর্যবেক্ষণে ১১৫ টিম

মুহাম্মদ নূরুজ্জামান, খুলনা

বিএনপি-জামায়াতসহ সমমনা জোটের বয়কটের মধ্য দিয়ে আজ রোববার মহানগরীর দুটিসহ খুলনা জেলার ছয়টি আসনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এ নির্বাচনে দুজন নারীসহ ৩৯জন প্রার্থী  চূড়ান্ত লড়াইয়ে অংশ নিয়েছেন। নির্বাচনের পরিবেশ সুষ্ঠু ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে গড়ে তোলা হয়েছে স্তরেস্তরে নিরাপত্তা বলয়।

এদিকে, খুলনায় অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। শনিবার দুপুরে খুলনা সার্কিট হাউস  মিলনায়তনে নির্বাচনের প্রস্তুতি সম্পর্কে এক প্রেস ব্রিফিং এ তথ্য জানান রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক খন্দকার ইয়াসির আরেফিন।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে খুলনার ছয়টি সংসদীয় আসনের মধ্যে দুটি আসনে স্বতন্ত্র পরিচয়ে আওয়ামী লীগের দুই নেতার বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আসন দুটি হচ্ছে খুলনা-৪ (রূপসা, তেরখাদা ও দিঘলিয়া) এবং খুলনা-৬ (পাইকগাছা ও কয়রা) এ দুটি আসনের মধ্যে খুলনা-৪ আসনে লড়ছেন ক্ষমতাসীন দলের হয়ে নৌকা প্রতীক নিয়ে বর্তমান সংসদ সদস্য আব্দুস সালাম মূর্শেদী এবং স্বতন্ত্র পরিচয়ে কেটলি প্রতীক নিয়ে লড়ছেন এস এম মোর্ত্তজা রশিদী দ্বারা। 

অপরদিকে, খুলনা-৬ আসনে পাইকগাছা উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান মোঃ রশীদুজ্জামান মোড়ল নৌকা প্রতীক নিয়ে এবং স্বতন্ত্র পরিচয়ে জেলা আওয়ামী লীগ নেতা ইঞ্জিনিয়ার মাহবুবুর রহমান প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এ দুটি আসনে স্বতন্ত্রের পাল্লা ভারী রয়েছে বলে সাধারণ ভোটারদের অভিমত। তবে খুলনা-৫ (ফুলতলা ও ডুমুরিয়া) আসনেও নৌকার প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য নারায়ণ চন্দ্র এবং স্বতন্ত্র পরিচয়ে প্রার্থী হওয়া ফুলতলা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আকরাম হোসেনের মধ্যে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস রয়েছে।

এর বাইরে খুলনা-১ (বটিয়াঘাটা ও দাকোপ), খুলনা ২ (সদর ও সোনাডাঙ্গা) এবং খুলনা-৩ (খালিশপুর, দৌলতপুর ও খানজাহান আলী থানা) এ তিনটি আসনে নৌকার প্রার্থীরাই বিজয় লাভ করবেন বলে ভোটাররা প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত করেছেন।

রিটার্নিং কর্মকর্তা  খন্দকার ইয়াসির আরেফিন জানান, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে খুলনা জেলার ৬টি সংসদীয় আসনে ১২২টি আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ১১৫টি পর্যবেক্ষক টিমকে ভোট পর্যবেক্ষণের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। ভোট চলাকালে ভারতের নির্বাচন কমিশনের প্রিন্সিপ্যাল সেক্রেটারি এম ডি ওমর একটি আসনের ভোটকেন্দ্র পরিদর্শন করবেন।

ইয়াসির আরেফিন বলেন, খুলনা জেলার ৬টি আসনে ৫ হাজার ২২৫ জন পুলিশ,  ৯ হাজার ৫১৬ জন আনসার, ৯৬ জন র‌্যাব সদস্য, ১৯ প্লাটুন বিজিবি, ৫৯৬ জন কোস্টগার্ড সদস্য, ৬৪৬ জন দফাদার আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় দায়িত্ব পালন করছে। এছাড়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় তাদের পাশাপাশি নৌ পুলিশের সদস্যরাও রয়েছে। তাছাড়া মহানগরী ও উপজেলা পর্যায়ে সেনাবাহিনীর ৬০০ সদস্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় দায়িত্ব পালন করছে। 

তিনি বলেন, নির্বাচনে ৪৬ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও ১৫ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করছেন। জেলায় মোট ভোটকেন্দ্র রয়েছে ৭৯৩টি। এরমধ্যে পাঁচ শতাধিক কেন্দ্র গুরুত্বপূর্ণ (ঝুঁকিপূর্ণ) হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। এ সকল কেন্দ্রে বেশি সংখ্যক পুলিশ বাহিনী সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবেন বলেও তিনি জানান। 

রিটার্নিং কর্মকর্তা  খন্দকার ইয়াসির আরেফিন আরো বলেন, ভোটের পরিবেশ ভালো রয়েছে। ভোট কেন্দ্রগুলোতে সরঞ্জামাদি দেওয়া হচ্ছে। আজ রবিবার ভোর রাত থেকে কেন্দ্রে কেন্দ্রে ব্যালট পেপার সরবরাহ করা হবে।

রিটানিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক জানান, নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তির্পূ করতে সবধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। 

এদিকে, খুলনার ছয়টি সংসদীয় আসনের ৭৯৩ টি ভোটকেন্দ্রে প্রিজাইডি কর্মকর্তাদের কাছে শনিবার ভোট গ্রহণ সামগ্রী হস্তান্তর করা হয়। কেন্দ্রগুলোর নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছে পুলিশ ও আনসার সদস্যরা। এছাড়া ৬০০ সেনা সদস্য, ১৯ প্লাটুন বিজিবি ও র্যাব টহল টীম দায়িত্ব পালন করছে।

খুলনা পুলিশ কমিশনার মোঃ মোজাম্মেল হক ও পুলিশ সুপার সাইদুল ইসলাম সব ধরনের ভয়ের ঊর্ধ্বে থেকে দায়িত্ব পালনের জন্য পুলিশ সদস্যদের নির্দেশনা দিয়েছেন। 

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে খুলনা জেলার ৬টি আসনে ভোটার বেড়েছে ১ লাখ ৯৮ হাজার ৮৭৯ জন। এবারের নির্বাচনে খুলনার ৬টি আসনে মোট ভোটার রয়েছে ১৯ লাখ ৯৯ হাজার ৮৮১ জন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটার ছিল ১৮ লাখ ১ হাজার ২ জন। এ বছর জেলার ৬টি আসনে ৭৯৩টি ভোট কেন্দ্র ও ৪ হাজার ৭২০টি ভোট কক্ষ থাকবে। ৬টি আসনে এবার গুরুত্বপূর্ণ (ঝুঁকিপূর্ণ) কেন্দ্রের সংখ্যা ৬৩১টি। 

এদিকে নির্বাচনের সকল প্রকার প্রচার-প্রচারণা শেষ হওয়ার পর প্রতিটি এলাকায় জয়-পরাজয়ের হিসাব নিকাশ শুরু হয়েছে।