দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন, খুলনা-২ :আওয়ামী লীগে বঙ্গবন্ধু’র ভ্রাতুষ্পুত্র, বিএনপি’র ২


মুহাম্মদ নূরুজ্জামান, খুলনা
আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে খুলনা-২ (সদর ও সোনাডাঙ্গা) আসনে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগে একক প্রার্থীতার আভাস পাওয়া গেছে। বঙ্গবন্ধু’র ভ্রাতুষ্পুত্র, বর্তমান সংসদ সদস্য সেখ সালাহউদ্দিন জুয়েলের এবারও দলের মনোনয়ন পাওয়ার বিষয়টি অনেকটাই নিশ্চিত। তবে, নির্বাচনে অংশ নিলে বিএনপি’র ২জন সম্ভাব্য প্রার্থী’র নাম আলোচনায় রয়েছে। এছাড়াও নির্বাচনে অংশগ্রহণ সাপেক্ষে এ আসনে জাতীয় পার্টি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, জাকের পার্টি ও গণফ্রন্টও নির্বাচনে প্রার্থী দিতে পারে বলে শোনা যাচ্ছে।
খুলনা সিটি করপোরেশনের ১৬ থেকে ৩১ নম্বর ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত হয়েছে খুলনা-২ আসন। রূপসা নদী আর ভৈরব ও ময়ূর নদের তীরের মহানগরী খুলনা।
এটি দেশের ১০০তম সংসদীয় আসন। বলা হয় সংসদ নির্বাচনে জেলার সবচেয়ে মর্যাদার আসন এটি। মেট্রোপলিটন সদর এবং সোনাডাঙ্গা থানার পাশাপাশি লবণচরা এবং হরিণটানা থানার কিছু অংশ রয়েছে এই আসনের মধ্যে।
আন্দোলন-সংগ্রাম থেকে শুরু করে জেলা ও বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ দফতরগুলোর অবস্থানও এই সংসদীয় এলাকায়। ফলে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির লক্ষ্য থাকে এ আসনটি দখলের। একসময়ে মুসলিম লীগের আস্তানা হিসেবে খ্যাত ছিল আসনটি। পরবর্তী সময়ে একটানা বিএনপির দখলে ছিল। সর্বশেষ বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট ২০১৪ সালের ৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচন বয়কট করলে ১৯৭৩ সালের পর আসনটি ফিরে পায় আওয়ামী লীগ। বর্তমানে আসনটির সংসদ সদস্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছোট ভাই শেখ আবু নাসেরের মেজো ছেলে সেখ সালাহউদ্দিন জুয়েল। এর আগে ছিলেন মহানগর আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান মিজান। অবশ্য ২০০৮ সালের সংসদ নির্বাচনে সে সময়কার নগর বিএনপির সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু আওয়ামী লীগের মিজানুর রহমান মিজানকে পরাজিত করেছিলেন এক হাজার ৬৭০ ভোটের ব্যবধানে। ওই নির্বাচনে মঞ্জু পেয়েছিলেন ৯০ হাজার ৯৫০ ভোট। আর মিজান পেয়েছিলেন ৮৯ হাজার ২৮০ ভোট।
২০০১ সালে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এ আসন থেকে এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। পরে তার ছেড়ে দেওয়া আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন বিএনপি নেতা আলী আসগার লবী। তারও আগে ১৯৯৬ ও ১৯৯১ সালের নির্বাচনে সাবেক স্পিকার শেখ রাজ্জাক আলী এ আসন থেকে বিএনপির টিকেটে নির্বাচিত হয়েছিলেন। এরও আগে ১৯৭৩ সালের নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছিলেন আওয়ামী লীগের শেখ আবদুর রহমান, ১৯৭৯ সালে বিএনপির আবু সালেহ মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান, ১৯৮৬ সালে জাতীয় পার্টির মোহম্মদ মোহসিন এবং ১৯৮৮ সালে মিয়া মুসা হোসেন জাতীয় পার্টি থেকে জয়লাভ করেছিলেন।সর্বশেষ ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে অংশ নেওয়ার মাধ্যমে রাজনীতিতে প্রথম সরব হন শেখ পরিবারের সন্তান সেখ সালাহউদ্দিন জুয়েল। ওই বছর নির্বাচনে আরও ছয় প্রার্থী অংশ নিয়েছিলেন। তারা হলেন বিএনপির তৎকালীন নগর সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু, সিপিবি মহানগরের সাবেক সভাপতি শ্রমিক নেতা এইচএম শাহাদাৎ, জাকের পার্টির কেএম ইদ্রিস আলী বিল্টু, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির মাওলানা আবদুল আউয়াল এবং গণফ্রন্ট থেকে মনিরা বেগম। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের শেখ সালাহউদ্দিন জুয়েল বিজয়ী হন।
বিএনপি থেকে নাম আসছে বর্তমান নগর কমিটির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট এসএম শফিকুল আলম মনা এবং সাবেক এমপি ও সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু’র। খুলনা বিএনপির যেকোনো আন্দোলন-সংগ্রামে একসময় রাজপথের সামনের সারিতে দেখা যেত নজরুল ইসলাম মঞ্জুকে। প্রায় ৩০ বছরের রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের মধ্যে এক যুগ বিএনপি খুলনা মহানগরের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। একই সঙ্গে তিনি দলের খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকের পদটিও ধরে রেখেছিলেন। কিন্তু গেল কয়েক মাস আগে তিনি দল থেকে বহিষ্কৃত হয়ে ঘরবন্দি সময় কাটাচ্ছেন। কেউ কেউ বলছেন, নির্বাচনের আগে ঘুচে যাবে সব মান-অভিমান। তবে নজরুল ইসলাম মঞ্জু যদি ফ্রন্ট লাইনে আসতে না পারেন সে ক্ষেত্রে প্রার্থী হতে পারেন বিএনপির বর্তমান নগর কমিটির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট এসএম শফিকুল আলম মনা, যিনি দীর্ঘদিন জেলা বিএনপির সভাপতি ছিলেন।
আর জাতীয় পার্টি থেকে প্রার্থী হতে পরেন দলের মহানগরের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট মহানন্দ সরকার কিংবা যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট অচিন্ত্য কুমার দাস। আর সিপিবি থেকে নাম শোনা যাচ্ছে দলের খুলনা মহানগর শাখার সাবেক সভাপতি শ্রমিক নেতা এইচএম শাহাদাতের। এ ছাড়া ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুল আউয়াল এবং জাকের পার্টি ও অন্যান্য দল থেকেও প্রার্থী হতে পারেন।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের নগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক এমডিএ বাবুল রানা বলেন, আমরা প্রত্যাশা করছি এই আসনে পুনরায় প্রার্থী হবেন শেখ সালাহউদ্দিন জুয়েল। দল তাকে মনোনয়ন দিলে আমরা বরাবরের মতোই তার পক্ষে একত্রিত হয়ে কাজ করব।
বিএনপির নগর সভাপতি অ্যাডভোকেট এসএম শফিকুল আলম মনা বলেন, এ বিষয় নিয়ে এখন কোন আলোচনা করতে চাই না। পরে কথা হবে।
বিএনপির নগর কমিটির সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু বলেন,  সরকারবিরোধী আন্দোলন করতে গিয়ে আমাদের তৃণমূলের কর্মীরা মামলা, হয়রানি, নির্যাতন সহ্য করছে। তবে মানুষ ভোটের অধিকার ফিরে পেলে খুলনায় আবারও বিএনপিকে ভোট দেবে বলে আমি বিশ্বাস করি।
জাতীয় পার্টির জেলা কমিটির সভাপতি শফিকুল ইসলাম মধু বলেন, এই মুহূর্তে আমরা দুুজন প্রার্থীর নাম তালিকায় রেখেছি। এর মধ্যে দল যাকে মনোনয়ন দেবে তিনিই দলীয় প্রার্থী হবেন।
সব মিলিয়ে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জেলার এলিট আসন খ্যাত খুলনা-২ সবসময় আলোচনায় থাকবে। বর্তমানে এই আসনে ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ২০ হাজার ২১৯ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৫৯ হাজার ২৭০ ও নারী ভোটার ১ লাখ ৬০ হাজার ৯৪৯ জন।