শিক্ষিকার লম্পট পুত্রের লালসার শিকার কলেজ ছাত্রী অন্তঃসত্বা

রামপালে শিক্ষিকার লম্পট পুত্রের লালসার 

শিকার কলেজ ছাত্রী অন্তঃসত্বা 
# মামলা হলেও  গ্রেপ্তার করছে না পুলিশ
# অর্থের জোর ও প্রভাবশালীদের চাপের মুখে আতঙ্কে ভুক্তভোগী পরিবার

# মামলা তুলে নিতে হুমকি  

খুলনা ব্যুরো

বাগেরহাটের রামপালে এক স্কুল শিক্ষিকার লম্পট পুত্রের লালসার শিকার কলেজ ছাত্রী (১৭) এখন অন্তঃসত্বা হয়ে পড়েছে। এ ঘটনা ফাঁস হলে ধর্ষক পরিবারের অর্থের জোর ও স্থানীয় এক নারী জনপ্রতিনিধিসহ প্রভাবশালীদের চাপের মুখে আতঙ্কে রয়েছে ভুক্তভোগী পরিবারটি। এ ঘটনায় শিক্ষিকার লম্পট পুত্র ধর্ষক তারেক হাসান বাপ্পিকে আসামি করে মামলা দায়ের করা হলেও তাকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। সর্বশেষ গত ০৫ নভেম্বর ভিকটিম অন্তঃসত্ত্বা তরুণীর ২২ ধারায় জবানবন্দি গ্রহণ করেন বাগেরহাটের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (রামপাল) আদালত।

এদিকে, আদালতে মামলা দায়ের করে বিপাকে পড়েছেন ওই ছাত্রীর পিতা। আসামীর প্রভাবশালী পিতা ও তাদের সাঙ্গ-পাঙ্গরা মামলা তুলে নিতে হুমকি দিচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। অসহায় ভিকটিমের পরিবারটি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বলে জানা গেছে। 

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, রামপাল উপজেলার গৌরম্ভা ইউনিয়নের বর্ণি ছায়রাবাদ গ্রামের জনৈক ব্যক্তির কলেজ পড়ুয়া মেয়ে (১৭) কে ধর্ষণ করে একই ইউনিয়নের গৌরম্ভা গ্রামের ইকবাল গাজী ও ছায়রাবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি  শিক্ষিকা ফুরজাহান বেগমের একমাত্র ছেলে তারেক হাসান বাপ্পি নামের এক লম্পট। এ ঘটনায় ওই কলেজ ছাত্রীর পিতা বাদী হয়ে গত ১২ অক্টোবর বাগেরহাটের বিজ্ঞ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালত-২ এ মামলা দায়ের করেন। আদালতের বিচারক ১২ অক্টোবর শুনানি শেষে রামপাল থানার ওসিকে এজাহার করে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন। রামপাল থানার ওসি আদেশের কপি পেয়ে ১ নভেম্বর মামলাটি রেকর্ড করে গৌরম্ভা ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. নাসির উদ্দীনকে তদন্তের দায়িত্ব দেন। তদন্তকারী কর্মকর্তা রবিবার (০৫ নভেম্বর) দুপুরে বাগেরহাটের বিজ্ঞ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (রামপাল) আদালতে ভিকটিম তরুণীকে হাজির করলে আদালত ২২ ধারায় তার জবানবন্দি গ্রহণ করেন।

বাদী তার এজাহারে উল্লেখ করেন, কলেজে যাওয়া আসার পথে ভিকটিমের সঙ্গে পরিচয়ের সূত্র ধরে উপজেলার গৌরম্ভা গ্রামের ইকবাল গাজীর ছেলে তারেক হাসান বাপ্পি তার কাছ থেকে ৪ হাজার টাকা ধার নেয়। আসামি বাপ্পী টাকা ফেরত দেওয়ার কথা বলে গত ১০ এপ্রিল সন্ধ্যা ৭ টায় তাদের বাড়ির পাশে স্থাপিত গ্রামীণ ফোনের টাওয়ারের ফাঁকা পাহারাদারের রুমে নিয়ে যায়। টাকা দিতে একটু দেরি হবে বলে ভিকটিমকে অপেক্ষা করতে বলে। এদিকে সন্ধা গড়িয়ে রাত হয়ে যায়। আসামি বাপ্পী ভিকটিমকে জড়িয়ে ধরে বিভিন্ন প্রলোভন দেওয়ার এক পর্যায়ে তাকে ধর্ষণ করে। এতে ভিকটিম কান্না করতে থাকলে তাকে বিবাহ করবে বলে সান্ত্বনা দেয়। এরপরে সে বলে একথা কাউকে বললে ‘তোমার মা বাবার ক্ষতি হবে’ বলে ভয় দেখায়। আর বেশী বাড়াবাড়ি করলে ‘সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তোমার ভিডিও ছেড়ে দিবো’ বলে হুমকি দেয়। এতে কলেজ পড়ুয়া ওই তরুণী ভীত হয়ে পড়ে। ওইদিন রাত ৯ টায় বাড়িতে গিয়ে ভিকটিম তার মাকে ঘটনা খুলে বলে। পরে ভিকটিমের পিতাকে ঘটনাটি জানালে সে হতবিহ্বল হয়ে পড়ে। পরে আসামী বাপ্পির পিতার কাছে গিয়ে অভিযোগ করেন। আত্ম সম্মানের চিন্তা করে আসামী বাপ্পী ও তার পিতা ইকবাল গাজীকে বিষয়টি জানিয়ে গোপনে মিমাংসার চেষ্টা করেন। লম্পট আসামীর পিতা-মাতা তাদের তাড়িয়ে দেন। এমনকি গরীবের বাচ্চার সঙ্গে তার ছেলের বিবাহ দেবেন না বলেও শাসান। পরবর্তীতে ২৮ আগষ্ট খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে ভিকটিমকে পরীক্ষা করালে ২১+ সপ্তাহের গর্ভবতী বলে ডাক্তার রিপোর্ট দেন। বর্তমানে ভিকটিম ২৯ সপ্তাহের গর্ভবতী। গরীব ও অসহায় বাদী আসামীর বাড়িতে গিয়ে তার কন্যাকে বিবাহের প্রস্তাব দেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে আসামীর পিতা তাদের তাড়িয়ে দেন।

এরপর সমাজপতিদের দ্বারেদ্বারে ধর্ণা দিয়ে কোন ফয়সালা না পেয়ে অবশেষে বাগেরহাটের বিজ্ঞ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালত-২ এ মামলা দায়ের করেছেন।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত তারেক হাসান বাপ্পীর বাড়িতে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। তবে তার পিতা ইকবাল গাজীকে পাওয়া গেলেও তিনি সাংবাদিকদের বসতে বলে গা ঢাকা দেন, যে কারণে তাঁদের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
রামপাল থানার ওসি এস, এম আশরাফুল আলমের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক গত ইংরেজি ২৬ অক্টোবর বিজ্ঞ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালত-২ এর পাঠানো কপি হাতে পেয়েই মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করা হয়েছে।  ভিকটিম কে বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করে ইতিমধ্যে ২২ ধারার জবানবন্দি গ্রহণ করা হয়েছে। আসামী আটকের জোর চেষ্টা করছি।