নিত্যপণ্য ডিম, আলু, খুলনায় সরকারি মূল্য মানছেন না ব্যবসায়ীরা, প্রভাব নেই বাজারে 

পেঁয়াজ প্রতি কেজি ৬৪/৬৫ টাকা হলেও বিক্রি হচ্ছে ৮০/৯০ টাকা

এস আর সোহেল
নিত্যপণ্য আলু, পেঁয়াজ ও ডিমের মূল্যের উর্দ্ধগতির লাগাম টানতে মূল্য নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। বৃহস্পতিবার্তেএ তিন পণ্যের দাম নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু খুলনার বাজারে নির্ধারিত এ মূল্য কার্যকর হয়নি। তবে বাজার নিয়ন্ত্রণে মনিটরিং করা হচ্ছে বলে দাবি করেছেন ভোক্তা অধিকার খুলনার সহকারী পরিচালক মোঃ অলিদ বিন হাবিব।

বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি কেজি আলুর দাম খুচরা পর্যায়ে ৩৫-৩৬ টাকা নির্ধারণ করা হলেও বিক্রি হচ্ছে ৪৫-৫০ টাকা। পেঁয়াজের দাম খুচরায় প্রতি কেজি ৬৪-৬৫ টাকা বেঁধে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বিক্রি হচ্ছে ৮০-৯০ টাকায়। আর প্রতি পিস ডিম ১২ টাকা বেঁধে দেওয়া হলেও বিক্রি হচ্ছে ১৩-১৪ টাকা। অর্থাৎ সরকারের আদেশের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ভোক্তার পকেট কাটছেন ব্যবসায়ীরা।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অসাধু ব্যবসায়ীরা ৩০ টাকা কেজি আলু ২০ টাকা দাম বাড়িয়ে ৫০ টাকা করার পর সরকার ১৫ টাকা কমিয়েছে। আর প্রতি পিস ডিমে অতি মুনাফা রোধে ১২ টাকা নির্ধারণ করেছে। কিন্তু বাজারে কার্যকর নেই। সা¤প্রতিক সময় একাধিকবার একাধিক পণ্যের দাম সরকার নির্ধারণ করে দিলেও তা কার্যকর করা সম্ভব হয়নি।
রোববার খুলনা মহানগরীর বিভিন্ন খুচরা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিকেজি আলু ৫০ টাকা, দেশি পেঁয়াজ ৮০ থেকে ৮৫ টাকা ও ব্রয়লার মুরগির ডিম প্রতিহালি ৫২ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। অথচ সরকার গত তিনদিন আগে ঘোষণা দেন প্রতিকেজি আলু ৩৫-৩৬ টাকা, পেঁয়াজ ৬৪-৬৫ টাকা ও প্রতিহালি ডিম ৪৮ টাকা দরে বিক্রি করতে হবে। এছাড়া নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোজ্য সয়াবিনের দাম রয়েছে এখনো ক্রেতাদের নাগালের বাইরে। রবিবার নগরীর বিভিন্ন খুচরা বাজারে ভোজ্য সয়াবিন ফ্রেশ (৫ লিটার) ৮৫০ টাকা, তীর (৫ লিটার) ৮৫০ টাকা, বসুন্ধরা (৫ লিটার) ৮৪০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।
নিত্যপ্রয়োজনীয় রসুনের দাম হু-হু করে বেড়েই চলেছে। রোববার নগরীর বিভিন্ন খুচরা বাজারে প্রতিকেজি রসুন ২৮০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। অথচ দুই মাস আগেও প্রতিকেজি রসুন বিক্রি হয়েছে ১০০ থেকে ১২০ টাকা দবে।
দিনদিন বেড়েই চলেছে ব্রয়লার মুরগির দাম। নগরীর বিভিন্ন খুচরা বাজারে প্রতিকেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হয়েছে ১৮০ টাকা দরে। ব্রয়লার মুরগির মূল্য অস্বাভাবিক গওয়ায় বিপাকে নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষ। কারণ বাজরে গরুর গোশ বিক্রি হয় চড়া দামে। বাজারে প্রতিকেজি গরুর গোশ ৭৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। যা নিম্ন আয়ের মানুষের পক্ষে ক্রয় করা খুবই কষ্টের।  
কমছে না মসুর ডালের দাম। রবিবার বিভিন্ন খুচরা বাজারে প্রতিকেজি মসুর ডাল (সরু) ১৪০ টাকা, মসুর ডাল (মোটা) ১০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।  
কমছে না নিত্যপ্রয়োজনীয় সবজির দাম। বাজারে ৪০ থেকে ৫০ নিচে মিলছে না সবজি। নগরীর স্ট্যান্ড রোডস্থ কেসিসি সুপার মার্কেট ও ময়লাপোতা কেসিসি সন্ধ্যা বাজারে প্রতিকেজি বেগুন ৬০ টাকা, উচ্ছে ৫০, কাঁচামরিচ ১২০ টাকা, পটল ৪০ কাকরল ৫০ টমোটো ৭০, রসুন ২৮০, ঝিঙে ৪০ টাকা, পেঁপে ৩০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।
নগরীর ময়ালাপোতা কেসিসি সন্ধ্যা বাজারে মায়ের দোয়া ভেজিটেবল শপের ব্যবসায়ী মোঃ রবিউল ইসলাম বলেন, সবজির দাম উঠা-নামা করছে। তিনি বলেন, বাজার পর্যাপ্ত সবজি আছে।
অপর ব্যবসায়ী মোঃ মিজানুর রহমান বলেন, প্রতিকেজি আলু ৫০ টাকা দরে বিক্রি করা হচ্ছে। তিনি বলেন, প্রতিকেজি আলু ৪০ টাকা দরে পাইকারি কিনতে হয়েছে।  
আরেক ব্যবসায়ী মোঃ কাওসার আলী বলেন, প্রতিকেজি দেশে পেঁয়াজ ৮০ টাকা দরে বিক্রি করা হচ্ছে। ব্যবসায়ী মোঃ শফিকুল ইসলাম বলেন, সবজির দাম কখনো কমছে, কখনো বাড়ছে।
ময়লাপোতা কেসিসি সন্ধ্যা বাজারে আসা ক্রেতা মোঃ আনোয়ার হোসেন বলেন, সরকার আলু, পেঁয়াজ ও ডিমের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে। কিন্তু সরকার নির্ধারণ মূল্যে বিক্রি হচ্ছে না। পূর্বের দামেই কিনতে হচ্ছে। তিনি বলেন, এসব ব্যবসায়িদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর খুলনা’র সহকারী পরিচালক মোঃ অলিদ বিন হাবিব বলেন, সরকার নির্ধারিত মূূল্যে যাতে পণ্য বিক্রি করা হয় এজন্য ইতোমধ্যে উপ-পরিচালক স্যার অভিযান পরিচালনা করেছেন। অভিযান অব্যাহত আছে। তিনি বলেন, আলু, পেঁয়াজ ও ডিমের বাজার নিয়ন্ত্রণে মনিটরিং করা হচ্ছে। সরকার নির্ধারণ মূল্যে এসব পণ্য বিক্রি না করলে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তিনি বলেন, আমি নিজেও ছুটির দিনে (শুক্রবার ও শনিবার) ১২টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালিয়ে প্রতিষ্ঠান মালিককে ১৮ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
ক্যাব খুলনা জেলার সাধারণ সম্পাদক নাজমুল আলম ডেভিড এ প্রতিবেদককে বলেন, ক্যাব জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সাথে কাজ করে থাকে। সরকার যেটা বলেন, ব্যবসায়িরা তা সহজে মেনে নিতে চায় না। এটা একপ্রকার সামাজিক ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে। আমাদের সকলের সচেতন হতে হবে। মুষ্টিমেয় কয়েকটি বাজারে অভিযান চালানো হয়ে থাকে। তিনি বলেন, সরকারি ব্যবস্থাপনা খুবই দুর্বল। আইন আছে কিন্তু সঠিকভাবে প্রয়োগ হচ্ছে না। আইনের যথাযত প্রয়োগ হলে সকল সমস্যা সমাধান করা সম্ভব।