এক-দফা এক-দাবি এক, শেখ হাসিনার পদত্যাগ : খুলনায় ফকরুল
নিজস্ব প্রতিবেদক, খুলনা
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফকরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, দেশ আজ ভয়াবহ সংকটে পড়েছে। ইতিপূর্বে দেশে যত সংকট এসেছে- তার চেয়েও সবচেয়ে বড় সংকট এখন চলছে। এই সংকট থেকে উত্তোরণই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। ভোটের অধিকার এবং গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরিয়ে দিতেই আমরা যুদ্ধে নেমেছি। আর তরুণরাই গণতন্ত্র রক্ষার ‘ভ্যানগার্ড’ হিসেবে ভূমিকা পালন করছে। তিনি বলেন, দফা এক-দাবি এক, শেখ হাসিনার পদত্যাগ। আর তা নাহলে ফয়সালা হবে রাজপথে। রাজপথে ফয়সালা করে আমরা একটি নতুন বাংলাদেশ গঠন করবো।
ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক আয়োজিত খুলনা বিভাগীয় ‘তারুণ্যের সমাবেশে’ প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি এ কথা বলেন। সোমবার (১৭ জুলাই) বিকাল পৌনে ৪টার দিকে নগরীর সোনালী ব্যাংক চত্বরে এ সমাবেশ শুরু হয়।
মির্জা ফকরুল বলেন, দেশে গণতন্ত্র ও নির্বাচন ব্যবস্থা ধংস করে দিয়েছে হাসিনা সরকার। তাদের হাতে দেশ নিরাপদ নয়। এর আগে তার বাবা দেশে এক নায়কতন্ত্র ও একদলীয় শাসন ব্যবস্থা চালু করেছিল। এ অবস্থায় একমাত্র বিএনপিই দেশে নিরাপদ নির্বাচন ব্যবস্থা ফিরিয়ে দিতে পারবে।
তিনি বলেন, যদি তত্বাবধায়ক সরকার না থাকে তাহলে দেশে কোন নির্বাচন হবে না। আমরা নির্বাচনে যাব না। উদাহরণ হিসেবে তিনি ‘ন্যাড়া বার বার তালতলায় যায় না’ বলে উল্লেখ করে বলেন, পরিস্কার কথা : হবে না, শেখ হাসিনার সরকারের অধিনে কোন নির্বাচন হবে না। এ কারণে সময় নষ্ট না করে তিনি শেখ হাসিনাকে দ্রæত পদত্যাগের দাবি জানান।
তিনি বর্তমান নির্বাচন কমিশনের সমালোচনা করে বলেন, এই নির্বাচন কমিশন দিয়ে নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়। তারা নিজেদের অধিকার পর্যন্ত আদায় করতে পারে না, প্রার্থীদের কোন নিরাপত্তা দিতে পারে না। এ কারণে একটি নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে। যারা যোগ্য তাদের আনতে হবে। নতুন নির্বাচনের মধ্যদিয়ে নতুন একটি পার্লামেন্ট তৈরি করতে হবে।
তিনি আরো বলেন, আওয়ামী লীগ রাজনৈতিকভাবে দেউলিয়া হয়ে গেছে। তারা হিরো আলমকে পর্যন্ত সহ্য করতে পারছে না। আজ হিরো আলম ভোটকেন্দ্রে গেলে তাকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা তাকে বের করে দেয় এবং মাটিতে ফেলে মারধর করেছে। দেশে ডেঙ্গুতে মানুষ ৭৬ জন মারা গেছে। অথচ মানুষকে বিপদে ফেলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বিদেশ সফর করছেন। তাদের দেশের মানুষের প্রতি কোন দায়বদ্ধতা নেই। অধিকার আদায়ের জন্য সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে।
ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণের সভাপতিত্বে প্রধান বক্তা ছিলেন যুবদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু। বিশেষ অতিথি ছিলেন স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস এম জিলানী। বক্তব্য দেন বিএনপির খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, খুলনা নগর বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট শফিকুল আলম মনা, জেলা আহ্বায়ক আমীর এজাজ খান প্রমুখ। সমাবেশে খুলনা বিভাগের বিভিন্ন স্থানে গুম, খুনের শিকার দলীয় নেতাকর্মীদের স্বজনরা তাঁদের বক্তব্য তুলে ধরেন।
সমাবেশ পরিচালনা করেন যুবদলের কেন্দ্রীয় ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম মিল্টন ও ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল।
খুলনায় তারুণ্যের সমাবেশে বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের জন্য দুটি চেয়ার ফাঁকা রাখা হয়। চেয়ার দুটিতে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের ছবি রাখা হয়।
এদিকে, বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতারা অভিযোগ করেছেন, সমাবেশ যাতে সফল না হয় সে জন্য বাধা দেয়া হচ্ছে। ক্ষমতাসীনরা খুলনার পাইকগাছা ও কয়রা উপজেলায় বাস বন্ধ করে দিয়েছে।
মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক শফিকুল আলম মনা অভিযোগ করেন, ক্ষমতাসীন দলের নেতারা রোববার (১৬ জুলাই) কয়রা ও পাইকগাছা উপজেলায় বাস চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে।
এর আগে পূর্বনির্ধারিত এই সমাবেশ উপলক্ষে সকাল থেকেই গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি উপেক্ষা করে সমাবেশস্থলে জড়ো হন দলটির নেতাকর্মীরা। খÐ খÐ মিছিল নিয়ে যোগদেন যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। এর মধ্যে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি ঝরছে খুলনাজুড়ে। এর ফলে শহরের বিভিন্ন অলিগলিতে অবস্থান করেন তারা। বিএনপি নেতাকর্মীরা খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিসহ বিভিন্ন ¯েøাগান দেয়। খুলনায় বিএনপির সহযোগী সংগঠন যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে সমাবেশস্থলে জড়ো হন। নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত করতে সমাবেশমঞ্চে চলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
উল্লেখ্য, বিএনপির গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনে তরুণ ভোটারদের অংশ নেয়ার জন্য উজ্জীবিত করতেই এই কর্মসূচি পালনে ঘোষণা দেয় দলটির তিন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন। দেশের ছয় বিভাগে এই সমাবেশ করবে। এরমধ্যে চট্টগ্রাম বিভাগে, রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের একত্রে বগুড়ায় এবং সিলেটে এই কর্মসূচি পালন করেছে।