মদনে জমি বিরোধে বোরো আবাদ অনিশ্চিত, ৫০ একর জমি অনাবাদি থাকার আশঙ্কা
মোঃ রাসেল আহমেদ,নেত্রকোনা প্রতিনিধিঃ
নেত্রকোনার মদন উপজেলায় জমি সংক্রান্ত বিরোধকে কেন্দ্র করে প্রায় ৫০ একর বোরো জমিতে চাষাবাদ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। বোরো মৌসুমের শেষ সময়ে এসেও জমিতে চাষ শুরু করতে না পারায় কৃষক পরিবারগুলো চরম উদ্বেগে দিন কাটাচ্ছে। পরিস্থিতি ঘিরে এলাকায় ব্যাপক উত্তেজনা বিরাজ করছে এবং যেকোনো সময় বড় ধরনের সংঘর্ষের আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
জানা গেছে, মদন উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের বিরাশি মৌজার বিভিন্ন দাগে অবস্থিত প্রায় ৫০ একর জমি দীর্ঘ ৪২ বছর ধরে চাষাবাদ করে আসছেন বিরাশি হাসনপুর গ্রামের লুচু মিয়ার ছেলে আবু তাহের গংরা। সম্প্রতি একই এলাকার জিতু মিয়ার ছেলে আনোয়ার গংরা উক্ত জমির মধ্যে ২ একর ৮৩ শতাংশ জমির মালিকানা দাবি করায় উভয় পক্ষের মধ্যে বিরোধের সৃষ্টি হয়।
গত ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫ তারিখে আবু তাহের গংরা বোরো চাষের উদ্দেশ্যে জমিতে গেলে আনোয়ারের লোকজন বাধা দেয়। এতে উভয় পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হলে স্থানীয়দের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি সাময়িকভাবে শান্ত হয়। পরবর্তীতে আবু তাহেরের ভাই জাকির হাসান জাহের কিবরিয়াসহ ৯ জনকে অভিযুক্ত করে মদন থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
এদিকে জমির দখল ও শান্তি রক্ষার দাবিতে আবু তাহের নেত্রকোনা বিজ্ঞ অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৪৫ ধারায় আনোয়ারসহ দশজনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন। আদালত উভয় পক্ষকে শান্ত থাকার নির্দেশ দিয়ে ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫ তারিখে নোটিশ জারি করেন এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ ২৫ জানুয়ারি ২০২৬ তারিখে আদালতে উপস্থিত থাকার নির্দেশ প্রদান করেন।
এ বিষয়ে জমির একাংশের মালিকানা দাবিদার আনোয়ার বলেন,
“আমরা ময়মনসিংহের মোক্তাগাছা জমিদারের ছেলের কাছ থেকে ক্রয়সূত্রে ২ একর ৮৩ শতাংশ জমির মালিক হয়েছি। বোরো চাষ করতে গেলে লুচু মিয়ার ছেলেরা বাধা দেয়। পরে এলাকার সালিশে দেড় একর জমি আমাদের দেওয়ার সিদ্ধান্ত হলেও তারা তা মানেনি। বিষয়টি বর্তমানে আদালতে বিচারাধীন।”
অন্যদিকে দখলকারী পক্ষের আবু তাহের বলেন,
“আমরা এই জমিতে দীর্ঘ ৪২ বছর ধরে চাষাবাদ করে আসছি। সম্প্রতি বিরাশি গ্রামের জিতু মিয়ার লোকজন আমাদের বোরো চাষে বাধা দিচ্ছে। এমনকি সেচের মেশিন চালু করতেও দিচ্ছে না। বোরো আবাদের সময় প্রায় শেষ। আগামী দুই-তিন দিনের মধ্যে পানি দিতে না পারলে প্রায় ৫০ একর জমি অনাবাদি থেকে যাবে, এতে আমাদের পরিবারগুলো চরম সংকটে পড়বে।”
এ বিষয়ে মদন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ হাসনাত জামান বলেন,
“আমি সদ্য থানায় যোগদান করেছি। অভিযোগটি গুরুত্বের সঙ্গে পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
মদন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বেদবতী মিস্ত্রী জানান,
“বিষয়টি এখনও আমার নজরে আসেনি। লিখিত অভিযোগ পেলে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
