মোরেলগঞ্জে ১৯শ প্রান্তিক কৃষকের হাতে বিনামূল্যে বীজ–সার বিতরণ

IMG-20251125-WA0015

মোঃ ফিরোজ আহমেদ।মোরেলগঞ্জ (বাগেরহাট) প্রতিনিধি:

দক্ষিণাঞ্চলের কৃষিপ্রধান এলাকা বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে আবারও দেখা গেল কৃষকের প্রাণচাঞ্চল্য।
দরিদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের মুখে ফুটে উঠল স্বস্তির হাসি। সরকারি কৃষি প্রণোদনার অংশ হিসেবে সোমবার (২৪ নভেম্বর) উপজেলার ১৬টি ইউনিয়ন ও পৌর এলাকার মোট ১৯ শতাধিক কৃষকের হাতে বিনামূল্যে বিতরণ করা হলো উফশী ও হাইব্রিড ধানের উন্নতমানের বীজ এবং রাসায়নিক সার।

সকাল থেকেই মোরেলগঞ্জ অফিসার্স ক্লাব চত্বরে ভিড় জমাতে থাকেন বিভিন্ন গ্রামের কৃষকরা। হাতে চাষের ক্যালেন্ডার, মনে নতুন মৌসুমের স্বপ্ন। দীর্ঘ অপেক্ষার পর পরপর ডাক পড়তেই একে একে বীজ–সার সংগ্রহ করে বাড়ির পথে ফেরেন তারা। অনুষ্ঠানের পুরো পরিবেশ জুড়ে ছিল উৎসবের আমেজ।

কৃষকদের মাঝে যে সহায়তা পৌঁছে দেওয়া হলো
উপজেলা কৃষি বিভাগের পাওয়া তথ্য অনুসারে-
১,৭০০ কৃষককে ২ কেজি করে উফশী ও হাইব্রিড ধানের উন্নতমানের বীজ প্রদান।

২০০ প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র কৃষককে ১০ কেজি এমওপি সার ও ১০ কেজি ডিএপি সার বিতরণ।

কৃষকদের বড় অংশই জানিয়েছেন, এ ধরণের সহায়তা তাদের জন্য শুধু আর্থিক প্রণোদনা নয়; বরং চাষাবাদের প্রতি নতুন প্রেরণা।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথির বক্তব্য
প্রধান অতিথি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হাবিবুল্লাহ কৃষকদের হাতে বীজ–সার তুলে দিয়ে বলেন—
“প্রান্তিক কৃষককে শক্তিশালী করা ছাড়া দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। সরকার চায়, এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদী না থাকে। তাই প্রতিটি কৃষকের কাছে বীজ–সার পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যেই আমরা কাজ করছি। আশা করি, এই সহায়তা আপনাদের নতুন মৌসুমের আবাদে বড় ভূমিকা রাখবে।”

তার বক্তব্যে কৃষকদের মধ্যে উচ্ছ্বাস লক্ষ্য করা যায়।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার তথ্যসমৃদ্ধ বক্তব্য
অনুষ্ঠানের স্বাগত বক্তব্য রাখেন, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সাইফুল ইসলাম। তিনি বলেন—
“মোরেলগঞ্জে প্রতি বছর কৃষকেরা উন্নতমানের ধান উৎপাদন করে দেশের খাদ্যভাণ্ডারকে সমৃদ্ধ করেন। এই বীজ–সার বিতরণ তাদের উৎপাদন বাড়াতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে। কৃষি অফিস সবসময় কৃষকের পাশে আছে এবং থাকবে ।”

তিনি আরও জানান, সরকারি এই বিনামূল্যের বীজ–সার সাধারণ বাজারের তুলনায় অনেক উন্নতমানের হওয়ায় কৃষকরা উচ্চ ফলন পান এবং উৎপাদন খরচও কমে যায়।

উপস্থিত কর্মকর্তাদের অংশগ্রহণ অনুষ্ঠানকে আরও প্রাণবন্ত করে তোলে অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন—
উপজেলা প্রকৌশলী মো. আরিফুল ইসলাম,
উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. তারেক হাসান,
উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা রনজিত কুমার বিশ্বাস,
উপজেলা প্রানী সম্পদ কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম,
কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. আশিকুর রহমান
সহকারী কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. আলী আশরাফ প্রমুখ।

তাঁদের উপস্থিতি ও উৎসাহমূলক বক্তব্য কৃষকদের মধ্যে আশাবাদ সৃষ্টি করে। কৃষকদের অনুভূতি—‘এই সহায়তা আমাদের নতুন আশার আলো’

বীজ–সার সংগ্রহ করে বাড়ি ফেরার পথে কথা হয় কয়েকজন কৃষকের সঙ্গে। গোলবুনিয়া গ্রামের কৃষক মফিজুল ইসলাম বলেন—
“বর্তমান বাজারে সার–বীজের দাম অনেক বেশি। সরকারের এই সহায়তা না পেলে ঠিকমতো আবাদ শুরুই করতে পারতাম না। এখন নিশ্চিন্তে জমিতে নামতে পারব।”

আরেক কৃষক রফিকুল মল্লিক জানান
“হাইব্রিড বীজ পেয়ে আমরা খুবই খুশি। এগুলো থেকে ভালো ফলন পাওয়া যায়। আমাদের মতো প্রান্তিক কৃষকের জন্য এটা বড় সহায়তা।”

কৃষি প্রণোদনা—মোরেলগঞ্জ উপজেলা ও পৌরসভায় ধানের উৎপাদনে ইতিবাচক পরিবর্তন

গত কয়েক বছরে সরকারি প্রণোদনা কর্মসূচির ফলে মোরেলগঞ্জ উপজেলায় ধান উৎপাদনে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে।
কৃষি কর্মকর্তাদের ভাষায়, উন্নত জাতের বীজ ব্যবহার ও সঠিক কৃষি প্রযুক্তির প্রয়োগের ফলে ফলন ২০ থেকে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। কৃষকের আয় বেড়েছে, বেড়েছে জীবনের মানোন্নয়ন।

চলতি মৌসুমে এসব বীজ–সার বিতরণের মাধ্যমে নতুন আশার আলো দেখা দিয়েছে কৃষকের চোখে। তারা আশা করছেন, এবারও ভালো ফলন হবে এবং ঘরে তুলতে পারবেন তাদের কষ্টার্জিত ফসল সোনালি ধান।