হাইকোর্টে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইলেন খুলনার জেলা প্রশাসক ও ইউএনও
খুলনার ডুমুরিয়া এলাকার ভদ্রা নদী ও হরি নদের তীরে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা ১৪টি ইটভাটা উচ্ছেদের আদেশ বাস্তবায়িত না হওয়ায় হাইকোর্টে হাজির হয়ে নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়েছেন খুলনার সাবেক ও বর্তমান জেলা প্রশাসক এবং ডুমুরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)। বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক-আল জলিলের বেঞ্চে তাঁরা হাজির হয়ে আজ মঙ্গলবার এই ক্ষমা প্রার্থনা করেন। আদালত ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে তাঁদের অব্যাহতি দিয়ে আগামী ৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে হরি নদ ও ভদ্রা নদীর তীরের ওই ইটভাটাগুলো অপসারণ করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আবেদনকারী জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। তিনি বলেন, ২০২১ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি ওই ইটভাটাগুলো উচ্ছেদের নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। ৯০ দিনের মধ্যে তা উচ্ছেদ করতে খুলনার জেলা প্রশাসকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তা উচ্ছেদ না করায় আজ খুলনার সাবেক জেলা প্রশাসক মো. মনিরুজ্জামান তালুকদার, বর্তমান জেলা প্রশাসক খন্দকার ইয়াসির আরেফীন ও ডুমুরিয়ার ইউএনও শরীফ আসিফ রহমান আদালতে হাজির হয়ে নিঃশর্ত ক্ষমা চান। নির্দিষ্ট দিনের মধ্যে ইটভাটা উচ্ছেদের জন্য আদালতের কাছে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তাঁরা।
আদালত আগামী ৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে হরি নদ ও ভদ্রা নদীর তীরের ওই ইটভাটাগুলো অপসারণ করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন।
আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, হাইকোর্ট জেলা প্রশাসকদের বলেছেন, ‘পরিবেশ রক্ষায় আপনারা সোচ্চার না হলে নদী দখল হয়ে যাবে।’
উচ্ছেদের নির্দেশ দেওয়া ইটভাটাগুলো হলো ডুমুরিয়ার কুলবাড়িয়া, বরাতিয়া ও ভদ্রাদিয়া মৌজার ভদ্রা নদীর তীরবর্তী ফজলুর রহমানের এসবি ব্রিকস; একই মৌজা ও নদীর তীরে গড়ে ওঠা খুলনা-৫ আসনের সংসদ সদস্য নারায়ণ চন্দ্র চন্দের মালিকানাধীন কেপিবি ব্রিকস; কুলবাড়িয়া বরাতিয়া ও খর্ণিয়া মৌজার ভদ্রা নদীর তীরে গড়ে তোলা ডুমুরিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এজাজ আহমেদের মালিকানাধীন সেতু-১ ব্রিকস, শাহজাহান জমাদ্দারের নূরজাহান-১ ব্রিকস, হুমায়ূন কবিরের কেবি-২ ব্রিকস; কুলবাড়িয়া বরাতিয়া ভদ্রা নদীর তীরে শাহজাহান জমাদ্দারের শান ব্রিকস, রানাই মৌজার ভদ্রা নদীর তীরে মো. সোবাহান সানার এফএম ব্রিকস, রানাই মৌজার হরি নদের তীরে জাহিদুল ইসলামের কেবি ব্রিকস, ইসমাইল হোসেন বিশ্বাসের আল-মদিনা ব্রিকস, মশিউর রহমানের মেরি ব্রিকস, আবদুল লতিফ জমাদ্দারের জেবি ব্রিকস, আমিনুর রশিদের লুইন ব্রিকস, চহেড়া মৌজার হরি নদের তীরে গাজী আবদুল হকের সেতু-৪ ব্রিকস এবং রুদাঘরা মৌজার হরি নদের তীরে গাজী ইমরানুল কবিরের টিএমবি ব্রিকস।
এর আগে আদালতের নির্দেশে খুলনার জেলা প্রশাসক ও ডুমুরিয়ার সহকারী কমিশনার (ভূমি) সিএস ও আরএস পরচা অনুসারে জরিপ করে ভদ্রা নদী ও হরি নদের সীমানা নির্ধারণ করে আদালতে দাখিল করেছিলেন। জরিপ অনুযায়ী, ওই দুই নদ-নদীর তীরের সীমানার মধ্যে ১৪টি ইটভাটা রয়েছে। এরপর ইটভাটা উচ্ছেদের নির্দেশনা চেয়ে আবেদন করা হয়।