খাদ্য গুদামে বদলি বাণিজ্য: কোটি টাকার ঘুষে সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য

IMG-20251103-WA0000

মোঃ রাসেল আহমেদ
ক্রাইম রিপোর্টার, নেত্রকোনা

ময়মনসিংহ ও নেত্রকোনার সরকারি খাদ্য গুদামগুলোতে চলছে প্রকাশ্য বদলি বাণিজ্য। মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই কয়েকজন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে ‘পারিবারিক সমস্যা’ দেখিয়ে প্রত্যাহারের আবেদন করিয়ে নেওয়া হয়েছে। এরপর মোটা অঙ্কের ঘুষের বিনিময়ে অন্যদের পদায়ন করা হচ্ছে।

সম্প্রতি অন্তত ছয়টি গুদামের কর্মকর্তাদের এভাবে বদলি ও পদায়নের তথ্য পাওয়া গেছে।

অভিযোগ উঠেছে, ময়মনসিংহ আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক আশরাফুল আলমের নেতৃত্বে গঠিত একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট এই বদলি বাণিজ্যের মূল হোতা। পুরো প্রক্রিয়ায় খাদ্য পরিদর্শক মোঃ মাজহারুল ইসলাম কামাল মধ্যস্থতা করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

নেত্রকোনার কেন্দুয়া সদর খাদ্য গুদামে সম্প্রতি মেয়াদ শেষ না হতেই বিধি বহির্ভূতভাবে একজন উপ-পরিদর্শককে পদায়ন করা হয়। নিয়ম অনুযায়ী সেখানে পরিদর্শক পদমর্যাদার কর্মকর্তা থাকার কথা। অভিযোগ ওঠার পর ওই পদায়ন আদেশ পরে বাতিল করা হয়।

এদিকে নেত্রকোনা সদর, ঠাকুরাকোনা, ময়মনসিংহের গৌরীপুর, তারাকান্দা, ধলা ও শ্যামগঞ্জ গুদামে দেখা গেছে—দুই বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই কর্মকর্তাদের ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে বদলি করা হয়েছে, এবং তাৎক্ষণিকভাবে নতুন কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এতে প্রশাসনিক স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারাকান্দা গুদামের কর্মকর্তা মোঃ আলাল হোসেনকে গত ১৯ আগস্ট মেয়াদ পূর্ণের দুই মাস আগেই বদলি করে প্রথমে ফুলবাড়িয়া, পরে গৌরীপুর খাদ্য গুদামে পদায়ন করা হয়। মাত্র ১৭ দিনের ব্যবধানে দুই দফা বদলি করা হয়।
গত ২২ অক্টোবর নেত্রকোনার সদর গুদামের কর্মকর্তাকেও একইভাবে বদলি করা হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে—মেয়াদ শেষের আগেই কর্মকর্তাদের চাপ দিয়ে পারিবারিক সমস্যার আবেদন লিখিয়ে নেওয়া হয়েছে, পরে মোটা অঙ্কের ঘুষের বিনিময়ে তাদের স্থানে অন্য কর্মকর্তাদের বসানো হয়েছে।

খাদ্য অধিদপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন,

“আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রকের অফিস থেকে চাপ দিয়ে আমাদের পারিবারিক সমস্যার আবেদন করতে বলা হয়েছে। ঊর্ধ্বতনের কথা না মানলে সমস্যায় পড়তে হবে—এই ভয়েই সবাই আবেদন দিয়েছে। এখন প্রতি বদলিতে ১২ থেকে ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ঘুষ লেনদেন হচ্ছে। টাকা না দিলে গুদামের দায়িত্বও দেওয়া হয় না।”

তারা আরও বলেন,

“একসাথে এতজন কর্মকর্তাকে পারিবারিক সমস্যা দেখিয়ে প্রত্যাহার করা এবং ঘুষে নতুনদের বসানো—এর আগে কখনো এমন অনিয়ম দেখা যায়নি।”

এ বিষয়ে খাদ্য পরিদর্শক মোঃ মাজহারুল ইসলাম কামাল বলেন,

“আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক স্যারকে কল দিয়েছিলেন একজন সাংবাদিক, তিনি আমাকে জানিয়েছিলেন। অভিযোগের বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা। কয়েকজন কর্মকর্তা স্বেচ্ছায় আবেদন করে বদলি নিয়েছেন। অহেতুক কিছু মানুষ আমাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে।”

ময়মনসিংহ আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক (আরসি ফুড) আশরাফুল আলমের মোবাইলে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। তবে তিনি অভিযোগের বিষয়টি পরিদর্শক মাজহারুল ইসলাম কামালকে অবহিত করেছেন বলে জানা গেছে।

খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) আবুল হাছানাত হুমায়ুন কবীরের ফোন বন্ধ থাকায় তাঁর বক্তব্য জানা যায়নি।

এ বিষয়ে খাদ্য সচিব মাসুদুল হাসান বলেন,

“আমাদের নীতিমালা অনুযায়ী একজন কর্মকর্তা দুই বছর একটি স্টেশনে থাকবেন। কোনো অনিয়ম না থাকলে তাঁকে বদলির নিয়ম নেই। একসাথে এত কর্মকর্তার পারিবারিক সমস্যা হওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”