মানব সেবা ট্রেডার্স নিয়ে যশোরে নাজমার সংবাদ সম্মেলন

IMG-20251220-WA0012


মালিকুজ্জামান কাকা
যশোরের মনিরামপুর উপজেলার স্বরূপদাহ গ্রামের সফিকুজ্জামানের স্ত্রী নাজমা খাতুন শনিবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করেছেন। একটি সংঘবদ্ধ প্রতারণা চক্রের শিকার হয়ে ন্যায়বিচারের আশায় তিনি প্রেস ক্লাব যশোরে এই সংবাদ সম্মেলন করেন।
তিনি জানান এই প্রকল্পের সঙ্গে দীর্ঘদিন প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত থাকায় বিষয়টির প্রতিটি ধাপ সম্পর্কে অবগত হয়ে তার বর্ণনা দিয়েছেন।
২০২৪ সালের জুলাই মাস থেকে নাজমার স্বামী শফিকুজ্জামান (যশোর জেলা কৃষি শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক) এর সঙ্গে একই উপজেলার দুর্গাপুরের মৃত লিয়াকত আলী গাজীর ছেলে
মুরাদ হোসেন। তিনি সমন্বয়কারী (যশোর জেলা) ও সুপারভাইজার (খুলনা বিভাগ), (স্বাস্থ্য, স্যানিটেশন ও আবাসন প্রকল্প প্রণোদনা ব্ল‍্যাক) হিসাবে দায়িত্বে ছিলেন।এর মধ্যে প্রকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্যে পর্যায়ক্রমে ২০২৪ সালের ২০ জুলাই, ১৯ আগস্ট ও ২০ আগস্ট তিনটি চুক্তিপত্র হয়। ১০০ টাকার নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে চুক্তি সম্পন্ন হয়। যেখানে মুরাদ হোসেন, তার মা মণি বেগম এবং ভগ্নিপতি জাকির হোসেন স্বাক্ষর করেন।
প্রকল্পের নীতিমালা ও অনিয়ম: চুক্তি অনুযায়ী প্রকল্পের নির্ধারিত ফিস ছিল, সৌর বিদ্যুৎ ৮০০ টাকা, বাথরুম/টয়লেট ৮০০ টাকা, সাবমারসিবল টিউবওয়েল ১১,২০০ টাকা, ডিপ টিউবওয়েল ৭,০০০ টাকা, ঘর ১৫,০০০ টাকা। কিন্তু বাস্তবে প্রকল্প কর্মীরা প্রতিটি প্রকল্পে অতিরিক্ত ২০,০০০ থেকে ৩০,০০০ টাকা আদায় করেছে। সফিকুজ্জামান এর প্রতিবাদ করলে কর্মীরা ক্ষুব্ধ হয়ে মুরাদ হোসেনের পরামর্শে প্রকল্পের নিয়ন্ত্রণ কৌশলে নিজেদের হাতে নিয়ে নেয়। ২৪ জুলাই ২৫ জন কর্মকর্তা কর্মচারীর উপস্থিতিতে ৩০০ টাকার নন জুডিসিয়াল স্ট্যাম্পে প্রকল্পের বাথরুম ৫০৩ টি, ঘর ১৮৫ টি, সৌর বিদ্যুৎ ৭৮ টি, সাবমাসিবল টিউবওয়েল ০৭ টি, ডিপ টিউবওয়েল ৮২ টি সর্বমোট ৮৫৫ টি প্রকল্প বুঝিয়া পাইয়া মুরাদ হোসেন সহ ২৫ জন কর্মী স্ব শরীরে নিজ স্বাক্ষর প্রদান করিয়া সফিকুজ্জামানের কাছ থেকে প্রকল্প হস্তান্তর করে নেয়। এর পরে উক্ত প্রকল্পে তার কোন দায়ভার থাকে না।
চুক্তিপত্র অনুযায়ী সরকারি-বেসরকারি ঝুঁকি, আইনগত জটিলতা ও কর্মী নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব ছিল মুরাদ হোসেনের। অথচ তিনি গোপনে কর্মী ও গ্রাহকদের কাছ থেকে বিপুল অংকের টাকা আদায় করেন।
প্রথম চুক্তির তারিখ থেকে ২৫ জুলাই পর্যন্ত সফিকুজ্জামান পাকা ইট, বালি, সিমেন্ট, মিস্ত্রি খরচ, আসবাবপত্র, অফিস ভাড়া ও প্রকল্প ফিস বাবদ মোট ৪১,৯৬,১৪০ টাকা মুরাদ হোসেনকে প্রদান করেন। এরপর হিসাব মিলিয়ে দেখা যায় অতিরিক্ত ৭-৮ লাখ টাকার গরমিল রয়েছে। এই মুরাদ হোসেনের কাছে আনুমানিক ২০-২৫ লাখ টাকা পাওনা রয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন কর্মীর কাছে ৪০-৫০ লাখ টাকারও বেশি রয়েছে যা তারা আত্মসাত করেছে।
এসব অনিয়মের প্রতিবাদ করায় অভিযুক্তরা আমাদের বাড়িতে এসে গালিগালাজ, অস্ত্রের ভয়, শারীরিক নির্যাতন ও প্রাণনাশের হুমকি দেয়। আমার ছেলে শাহরিয়ার নাফিজকে ৭ নভেম্বর পরিকল্পিতভাবে নির্যাতন করা হয়।
বাধ্য হয়ে নাজমা বেগম ৪ অক্টোবর দৈনিক যশোর পত্রিকায় সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি, ৪ নভেম্বর মণিরামপুর খানায় জিডি (নং-২১৬), সেনা ক্যাম্প ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বরাবর একাধিক অভিযোগ দায়ের করেন।
এরপর অভিযুক্তরা ১৫ ডিসেম্বর যশোর প্রেস ক্লাবে মিথ্যা তথ্য দিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে।
মানব সেবা ট্রেডার্স লিঃ এর সল্পমূল্য বাজার প্রকল্প পরিচালনা করেন শফিকের নিয়োগকৃত নাসরিন বেগম। প্রকল্পের টাকা বিগত ৩ মাস থেকে কোন হিসাব দেননি। নাসরিনের বিস্বস্ত সহকারী তার স্বামী শফিকুল ইসলাম। তিনি মনিরামপুরের আজিজ শেখের ছেলে। গ্রাম গাংড়া। প্রকল্পের বিশ থেকে ২৫ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। নাসরিন বেগম আনুমানিক গত ৭/৮ দিন আগে সড়ক দূর্ঘটনায় মারা যায়। এর পর থেকে শফিকুল ইসলাম পলাতক রয়েছেন।
নাজমা বেগম বলেন, গত দুই মাস ধরে প্রাণনাশের আশঙ্কায় আমরা নিজ বাড়িতে বসবাস করতে পারছি না। পরিবার সদস্য নিয়ে আমরা চরম নিরাপত্তাহীনতায় দিন কাটাচ্ছি।