অনুমোদনের জটিলতায় গাজীপুরে মেলা: দায় কার প্রশ্নের মুখে প্রশাসনিক সমন্বয় ও সাংবাদিকদের নিরাপত্তা।
গাজীপুর প্রতিনিধিঃ
দেশে সেনাবাহিনী, পুলিশ, রাজনৈতিক দল কিংবা ধর্মীয় সংগঠন চাইলে বিভিন্ন কর্মসূচি ও মেলার অনুমোদন তুলনামূলক সহজেই পাওয়া যায় এমন অভিযোগ দীর্ঘদিনের। তবে সাংবাদিক বা সংবাদকর্মীদের উদ্যোগে কোনো আয়োজন কিংবা অনিয়মের সত্য অনুসন্ধানে গেলে অনুমোদন ও সহযোগিতা পাওয়া নিয়ে দেখা দেয় নানা জটিলতা। গাজীপুরের বাসন থানা এলাকায় ধারাবাহিকভাবে অনুষ্ঠিত দুটি মেলা ঘিরে সম্প্রতি এমনই একাধিক প্রশ্ন সামনে এসেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের জিএমপি কমিশনার কার্যালয়ের মাত্র প্রায় ১০০ ফুট দূরত্বের মধ্যে বাসন থানা এলাকায় পরপর দুইবার মেলা বসানো হয়েছে। বিষয়টি এলাকাবাসীসহ সংশ্লিষ্ট অনেকেরই জানা থাকলেও, এসব মেলার অনুমোদন কোথা থেকে এবং কীভাবে দেওয়া হয়েছে তা নিয়ে স্পষ্ট কোনো তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না।
এ বিষয়ে বাসন থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, তারা এসব মেলার বিষয়ে অবগত নন। অন্যদিকে, পুলিশ কমিশনার কার্যালয়ের সিটিএসবি শাখার কর্মকর্তা তানভীর আহমেদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমরা বিষয়টি জানি না, সম্ভবত থানার সঙ্গে সমন্বয় করেই মেলা চালানো হচ্ছে।
তবে থানার পক্ষ থেকে আবার বলা হচ্ছে, বিষয়টি কমিশনার কার্যালয় জানে। ফলে প্রশ্ন উঠছে থানা জানে না, কমিশনার কার্যালয় জানে না, তাহলে এসব মেলার অনুমোদন দিল কে নাকি প্রশাসনের ভেতরে দায়িত্ব এড়ানোর একটি অঘোষিত সমন্বয় ব্যবস্থাই কার্যকর রয়েছে
এদিকে এক সাংবাদিকের সঙ্গে আলাপকালে জানা যায়, ছোটখাটো মেলার জন্য আলাদা কোনো অনুমোদনের প্রয়োজন হয় না। কিন্তু এখানেই দেখা দেয় গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ছোট খাটো অপরাধ যদি আইনের আওতায় পড়ে এবং তার বিচার হয়, তাহলে ছোটখাটো মেলার ক্ষেত্রে অনুমোদনের বাধ্যবাধকতা কেন প্রযোজ্য হবে না
সংশ্লিষ্ট সাংবাদিকদের অভিযোগ, তারা মেলার অনুমোদন কিংবা এসব অনিয়ম নিয়ে প্রশ্ন তুলতে গেলে প্রায়ই ‘উপরে নির্দেশ’, ‘বিবেচনার বিষয়’ কিংবা নীরব চাপের মুখে পড়তে হয়। কেউ কেউ অভিযোগ করেছেন, সত্য ঘটনা প্রকাশের চেষ্টা করলে পুলিশি হয়রানি, প্রশাসনিক হুমকি, এমনকি মিথ্যা মামলার আশঙ্কা তৈরি করা হয়। যদিও এসব অভিযোগের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে স্থানীয় মানবাধিকার কর্মীরা জানান, প্রশাসনিক স্বচ্ছতা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা বাধাগ্রস্ত হলে তার প্রভাব শুধু সাংবাদিক সমাজেই সীমাবদ্ধ থাকে না। তাদের মতে, সময়মতো কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়া হলে আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বড় ধরনের অস্থিরতা, সহিংসতা বা অপ্রীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে, যা পরবর্তীতে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকেও প্রশ্নবিদ্ধ করবে।
স্থানীয় সচেতন মহলের প্রশ্ন, একটি মেলা যদি প্রকাশ্যে, প্রশাসনের নাকের ডগায় বসে, তাহলে দায় কার থানা না জানলে কমিশনার কার্যালয় জানবে, আর কমিশনার কার্যালয় না জানলে থানা জানবে এই দায় এড়ানোর সংস্কৃতি কি প্রশাসনিক স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির পরিপন্থী নয়,
সব মিলিয়ে গাজীপুরের বাসন থানা এলাকার মেলাগুলো এখন একটি বড় প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে আইনের প্রয়োগ কি সবার জন্য সমান, নাকি ক্ষমতা ও পরিচয়ের ভিত্তিতে ভিন্ন ভিন্ন মানদণ্ডে পরিচালিত হচ্ছে? একই সঙ্গে সত্য অনুসন্ধানে নিয়োজিত সাংবাদিকদের নিরাপত্তা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে প্রশাসনের জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি উঠেছে।
