ভূমিদস্যু সামছুদ্দিন-আশিকের নজর ইসমাইল কলোনীর অসহায় খোদেজা নুরজাহানের জমিতে

IMG-20251210-WA0008


বিশেষ প্রতিনিধি
যশোর শহরের চিন্নিত ভূমিদস্যু সামসুদ্দিন ও আশিক একের পর এক জমি জালিয়াতিতে সাধারণ মানুষকে দিশেহারা করছে। মুড়োলীর মোড় খ্যা পাড়া, বেজপাড়া, বকচর, রেলগেট পশ্চিম পাড়ার পর এবার তার লোলুপ দৃষ্টি পড়েছে শহরের ৬নং ওয়ার্ড রায়পাড়া ইসমাইল কলোনিতে দুটি জমিতে। এর একটির মালিক মৃত নুরুল হকের স্ত্রী খোদেজা।
জানা যায়, সামছুদ্দিন চক্র বিভিন্ন মামলা দিয়ে সাধারণ মানুষকে অযথা হয়রানি করে। এর একটি কজ্জা ২/০৮ বাদি মোঃ সামছুদ্দিন বনাম মাজেদা খাতুন (ডলি), দেওয়ানি ১৫০/২১ বদলি অতিরিক্ত সদর কোর্ট। দেওয়ানি ১৪৯/২১ সদর আদালত।
এই চক্রের একজন সদস্য বেজপাড়া আজিমবাদ কলোনীর মসজিদ বাড়ি রোডের মৃত ইছাহক মিয়ার ছেলে মোঃ আশিক। তিনি বিজ্ঞ জেলা জজ ১ম আদালত যশোরে একটি মামলা করেছেন যার আসামি এলাহী বক্সের স্ত্রী নূর জাহান, নুরুল হকের স্ত্রী খোদেজা খাতুন, জেলা প্রশাসক যশোর এবং ত্রাণ ও পুনর্বাসন দপ্তরকে। মামলার আর্জিতে বলা হয়েছে এস এ ৬৪১ খতিয়ান ভুক্ত এস এ ১৩৭৬ দাগের আট শতক জমিতে বাদীর পিতা বসবাস করতো। বাস্তবে কখনো তা হয়নি। বরং জমিটি ছিল একটি সরকারি নীচু ডোবা যা বসবাসের চরম অযোগ্য।
ভুক্তভুগি জমি মালিকের ছেলে আনোয়ার হোসেন জানিয়েছেন, সরকার তাদের ভূমিহীন বিবেচনায় ৭৭নং চাঁচড়া মৌজায় আট শতক জমি প্রদান করেন। পরে সেখান থেকে তিন শতক জমি জেলা প্রশাসক এলাহী বক্সের স্ত্রী নুরজাহান কে দেন। বাকি পাঁচ শতক জমিতে মা তিনি সপরিবারে বসবাস করছেন। জমিটি জেলা প্রশাসন তার মা খোদেজা বেগম কে দিয়েছেন। খোদেজা বেগমের স্বামী নুরুল হক ১৯৯৩-৯৪ সালের দিকে মারা যান। অসহায় খোদেজা বেগমের তিন ছেলে ও একটি বোন অতি দরিদ্র। এরা রিক্সা ইজিবাইক চালায়।
খোদেজা বেগমের তিন ছেলে হলেন, আনোয়ার হোসেন, জাকির হোসেন, মনিরুল হক ও বোন তাহমিনা। বৃদ্ধা মা খোদেজা। প্রায় ৮০ বছর তার বয়স। এখন বাটপার ভূমিদস্যু চক্রের কাছে জমি হারানোর শঙ্কায় তিনি দুশ্চিন্তাগ্রস্থ হয়ে পড়েছেন।
২০১২ সালে বেজপাড়া বিহারি কলোনির সাহেবজানের ছেলে সামসুদ্দিন জমিটি তার দাবি করে আদালতে মামলা করেন। মামলাটির বাদি ইছাহকের ছেলে আশিক।
বেজপাড়ার স্থানীয়রা জানান, সামসুদ্দিন একজন চিন্নিত ভূমিদস্যু ও মামলাবাজ। তার চক্রের একজন রাঘব বোয়াল মুড়োলি খাঁ পাড়ার সাহাদত ওরফে বেড়ে মৃত্যুবরণ করায় খানিকটা কমজোরি হয়ে পড়েছে। তবে তার সাথে এখনো ৮/১০ জনের একটি জালিয়াত চক্র রয়েছে। জানা গেছে এই চক্রের আরো দুই সদস্য শাকিল ও আশিক। এই আশিক কে ভাইপো সাজিয়ে বাদি করে সে মামলা করে জমি কব্জা করতে চায়। আশিক কে পাগল সাজিয়ে সে নিজেই এখন মামলা পরিচালনা করছে। বাস্তবে আশিক বহাল তবিয়তে পরিপূর্ণ সুস্থ অবস্থায় খেয়ে দেয়ে চলে ফিরে বেড়াচ্ছে। তিনি নিয়মিত চা পান করছে বাড়ির আসে পাশে চায়ের দোকানে।
সূত্র জানায় বেজপাড়ার বিহারি আজিমাবাদ কলোনিতে সামসুদ্দিনের তিনতলা প্রাসাদোপম একটি ভবন রয়েছে। তার নামে বেনামে রয়েছে আরো অনেক সম্পত্তি। অথচ তার কিছুই ছিল না ক বছর আগে।
সূত্র জানায়, ১৯৭১ সালে সামসুদ্দিন, টেনিয়া, নেহাল, ইকবাল, চিনা মিলে বাঙালি হত্যা, নারী ধর্ষণ, লুটপাট, গরীব সাধারণ মানুষের বাড়ি ঘরে আগুন দেওয়া সহ বিভিন্ন ভয়ঙ্কর অপকর্মে সম্প্রীক্ত ছিল। যশোর শহর ও গ্রামে এরা ছিল মূর্তিমান আতঙ্ক। পাবলিক তাদের এখনো বদমাস নামে ডাকে।
জানা যায়, সামছুদ্দিন চক্র এর আগে মুড়োলি খাঁ পাড়া, বেজপাড়া, রেলগেট পশ্চিম পাড়ায় বিভিন্ন জমি নিজেদের দাবি করেছিল। ঐ এলাকার নারীরা ক বছর আগে ঐ চক্রের কয়েক সদস্য কে ঝাঁটা পেটা করে এলাকা ছাড়া করেছিল। তাছাড়া অসহায় ব্যাক্তির জমি নিজ নামে রেকর্ড, খুন, লুটপাট, বসত ঘরে অগ্নি সংযোগ সহ বিভিন্ন মানবতা বিরোধী অপরাধে এরা অভিযুক্ত। ভুক্তভুগি মানুষ এই অভিযোগ করেছেন।
অসহায় ক্ষতিগ্রস্থ ভুক্তভুগিরা এই সামছুদ্দিন-আশিকের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন, প্রশাসনিক ব্যাবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন। যাতে তাদের অপরাধ সর্ব সন্মুখে প্রকাশ হয় এবং তারা দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির আওতায় আসে।