ডিসি অফিসে পরিচ্ছন্নতা কর্মী নিয়োগে ‘বৈষম্যের অভিযোগ’; হরিজন সম্প্রদায়ের বিক্ষোভ–মানববন্ধন
প্রদীপ কুমার রায় ক্রাইম রিপোর্টার লালমনিরহাট
লালমনিরহাটে পরিচ্ছন্নতা কর্মী নিয়োগে ‘বৈষম্যমূলক প্রশ্নপত্র’ তৈরি ও হরিজন সম্প্রদায়ের যোগ্য প্রার্থীদের বাদ দেওয়ার অভিযোগ তুলে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করেছে জেলার হরিজন (সুইপার) সম্প্রদায়। নিয়োগ বাতিলসহ ন্যায্য দাবি না মানা হলে কঠোর আন্দোলনের হুমকিও দিয়েছেন তারা।
শনিবার (৬ ডিসেম্বর) বিকালে লালমনিরহাট রেলস্টেশনের পূর্ব ও পশ্চিম পাশের দুটি সুইপার কলোনি থেকে কয়েক শতাধিক মানুষ ব্যানার ও ঝাড়ু হাতে মিছিল নিয়ে ডিসি অফিস চত্বরে জড়ো হন। পরে ‘বাংলাদেশ হরিজন ঐক্য পরিষদ’ ও ‘হরিজন অধিকার আদায় সংগঠন’ জেলা শাখার ব্যানারে মিছিলটি মিশন মোড়ে পৌঁছে এক ঘণ্টার মানববন্ধনে পরিণত হয়।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সংস্থাপন শাখা পরিচ্ছন্নতা কর্মীসহ ৭টি পদের জন্য ৩৯ জনকে নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। এই ছয়টি পরিচ্ছন্নতা কর্মী পদের জন্য শিক্ষা বোর্ডের জেএসসি বা সমমানের যোগ্যতা চাওয়া হয়। লালমনিরহাটের হরিজন সম্প্রদায়ের ৪৫ জন আবেদন করলেও লিখিত পরীক্ষায় একজনও উত্তীর্ণ হতে পারেননি।
অভিযোগ করে বক্তারা বলেন,
“পরিচ্ছন্নতা কর্মীর পদের প্রশ্ন ৮ম শ্রেণির সমমান ছিল না, বরং বিসিএস ধাঁচের কঠিন প্রশ্ন করা হয়েছে। ইচ্ছাকৃতভাবে হরিজন সম্প্রদায়কে বাদ দেয়ার চেষ্টা চলছে। এতদিন পরিচ্ছন্নতার দায়িত্ব আমাদের সম্প্রদায়ের মানুষই পালন করে এসেছে। অথচ এখন অন্য ধর্ম বা অন্য সম্প্রদায়ের লোক নিয়োগ দিলে আমরা কর্মহীন হয়ে পড়ব।”
তারা আরও বলেন, হরিজন সম্প্রদায়ের নতুন প্রজন্ম শিক্ষিত হচ্ছে—অনেকে স্কুল–কলেজ–বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছে। তাই যদি যোগ্যতা চাওয়া হয়, তবে হরিজন সম্প্রদায়ের শিক্ষিত যুবকদেরই অগ্রাধিকার দিতে হবে।
বক্তারা অভিযোগ করেন,
“লালমনিরহাটের জেলা প্রকাশক এ এইচ এম রকিব হায়দার ইচ্ছাকৃতভাবে কঠিন প্রশ্নপত্র তৈরি করে আমাদের বাদ দেওয়ার চেষ্টা করেছেন।”
দাবি না মানলে তারা ডিসি অফিস প্রাঙ্গণে মানুষের বিষ্ঠা (পায়খানা) রেখে প্রতীকী আন্দোলন করবেন, পাশাপাশি জেলার সব প্রতিষ্ঠানে কর্মরত হরিজন কর্মচারীরাও কাজ বন্ধ রাখবেন। প্রয়োজনে পার্শ্ববর্তী জেলা থেকেও হরিজন সম্প্রদায়কে এনে বৃহত্তর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
এ বিষয়ে লালমনিরহাটের জেলা প্রকাশক এ এইচ এম রকিব হায়দার বলেন,
“প্রশ্নপত্র কোনো নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের কথা ভেবে করা হয়নি। সকল প্রার্থীর বিষয় বিবেচনা করেই প্রশ্নপত্র তৈরি করা হয়েছে। তাদের অভিযোগ ভিত্তিহীন। কেউ পরীক্ষায় অকৃতকার্য হলে আন্দোলন করলে আমাদের কিছু করার নেই।”
