খুলনায় নৃশংস ট্রিপল মার্ডার উদঘাটন: সম্পত্তি বিরোধেই শিশু ও নানিকে হত্যা

IMG-20251129-WA0006

বিশেষ প্রতিনিধিঃ ফাহিম ইসলাম,খুলনা

খুলনায় একই পরিবারের দুই শিশু—ফাতিহা (৭), মুস্তাকিম (৮)—এবং তাদের নানি মহিতুন্নেছা (৫৩) হত্যা মামলার রহস্য পুলিশের কড়া তৎপরতায় উদঘাটন হয়েছে। হত্যাকাণ্ডের মূল হোতাসহ তিনজনকে গ্রেফতার করেছে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ (কেএমপি)। সম্পত্তি নিয়ে দীর্ঘদিনের পারিবারিক বিরোধই এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের মূল কারণ বলে জানিয়েছে পুলিশ।

শনিবার (২৯ নভেম্বর) দুপুরে কেএমপি কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার আবু রায়হান মুহাম্মদ সালেহ্ হত্যাকাণ্ডের বিস্তারিত তুলে ধরেন।

সম্পত্তি বিরোধ থেকেই খুনের পরিকল্পনা

পুলিশ জানায়, নিহত শিশুদের বাবা শেফার আহম্মেদ ও গ্রেপ্তারকৃত প্রধান আসামি শেখ মোহাম্মদ শামীম আহম্মেদ পরস্পরের মামাতো–ফুফাতো ভাই। খুলনার রুপসায় পারিবারিক জমি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে তাদের মধ্যে তীব্র বিরোধ চলছিল।

অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার বলেন, “কারাগারে থাকা অবস্থায় শামীম একটি সন্ত্রাসী গ্রুপের সদস্যের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা গড়ে তোলে। কারাগার থেকে বের হয়ে বড় অঙ্কের টাকার বিনিময়ে সেই গ্রুপের ভাড়াটে সন্ত্রাসীদের মাধ্যমে প্রতিপক্ষ শেফার আহম্মেদের পরিবারকে নিশ্চিহ্ন করার পরিকল্পনা করে।”

তারই অংশ হিসেবে ১৬ নভেম্বর শামীম নিজেই শেফার আহম্মেদের বাড়িতে ঢুকে দুই শিশু ও তাদের নানিকে নির্মমভাবে হত্যা করে পালিয়ে যায়।

বিমানবন্দর থেকে গ্রেফতার

হত্যার পর থেকে শামীম পলাতক থাকার পাশাপাশি বিদেশে পালানোর চেষ্টা করছিলেন। কেএমপি জানায়, দেশের সব স্থল, নৌ ও বিমানবন্দরে তার ছবি পাঠানো হয়। মঙ্গলবার গভীর রাতে ফ্রান্সগামী ফ্লাইটে চড়ার আগমুহূর্তে তাকে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে আটক করে বিমানবন্দর পুলিশ। পরে তাকে খুলনার লবণচরা থানায় হস্তান্তর করা হয়।

শামীম আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। শুক্রবার বিকেলে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট-৩ নম্বর আদালতের বিচারক মো. আসাদুজ্জামান তার জবানবন্দি গ্রহণ করে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

আরও দুই সহযোগী গ্রেফতার

পুলিশ জানায়, হত্যাকাণ্ডে শামীমের সঙ্গে জড়িত ছিল আরও দু’জন—

তারিকুল ইসলাম তারেক (২৬): পূর্বের একটি মাদক মামলার আসামি

তাফসির হাওলাদার (২০): চুরি ও ছিনতাইয়ের দুই মামলার আসামি

তারা দু’জনই হত্যাকাণ্ডে সরাসরি সহযোগিতা করেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

আরও আসামিদের খুঁজছে পুলিশ

লবণচরা থানার ওসি (তদন্ত) মো. ইউসুফ আলী জানান, “এ হত্যাকাণ্ডে আরও কয়েকজন জড়িত থাকার তথ্য পাওয়া গেছে। তাদের গ্রেফতারে বিশেষ অভিযান চলছে। দ্রুতই তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।”

অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার বলেন, “সম্পত্তি ও লোভের কারণে মানুষ কতটা নৃশংস হতে পারে তার ভয়াবহ উদাহরণ এই হত্যা। জনগণকে সচেতন থাকতে হবে এবং যেকোনো বিরোধের ক্ষেত্রে আইনগত সাহায্য নিতে হবে।”