মিন্টু-বৃষ্টি দম্পতির বিরুদ্ধেবিদেশ প্রতারণায় যশোরে ভুক্তভুগিদের সংবাদ সম্মেলন
মালিকুজ্জামান কাকা যশোর জেলা প্রতিনিধি।
বিদেশ প্রতারণায় যশোরের ভুক্তভুগিরা সংবাদ সম্মেলন করেছেন। বৃহস্পতিবার দুপুরে প্রেসাক্লাব যশোরে এই সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয় মিন্টু-বৃষ্টি দম্পতি ভুয়া জাল ভিসা দিয়ে সারা দেশে ২৩ কোটি টাকার বেশি আর্থিক প্রতারণা করেছে। এই চক্র এখন মিথ্যা ও হয়রানি মামলায় ভুক্তভুগিদের নতুন করে নাজেহাল করছে। এরই অংশ হিসাবে তারা ভুক্তভুগিদের বিরুদ্ধে অন্তত ২০টি মামলা করেছে। একই ভাবে জাল কাগজ, চুক্তিপত্র, স্ট্যাম্প তৈরি করে এফিটডেবিটের মাধ্যমে বৃষ্টি জামিনে বাইরে এসে ভুক্তভুগি দের হুমকি দিচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন, নাঈমুল হক নাবিল। এ সময় উপস্থিত ছিলেন, ভুক্তভুগি বাবলুর রহমান, মনিরুজ্জামান কামারুল ইসলাম, সাইদুর রহমান সান্টু, সামছুর রহমান, সাজ্জাদ হোসেন রকি, নাইমুল হক নাবিল, ভুট্ট, সাবিনা মুস্তারী খালেদা প্রমুখ।
অভিযোগ করা হয়, যশোর শহরের চোরমারা দীঘিরপাড় এলাকার মিজানুর রহমান মিন্টু ও তার স্ত্রী কুমারী বৃষ্টি রানী @বৃষ্টি বেগম @মারিয়া নূর বৃষ্টি প্রায় ২৩ কোটি টাকা আত্মসাত করেছে। রাজধানী ঢাকা, যশোর, খুলনা, নাটোর সহ বিভিন্ন এলাকায় এদের অফিস ছিল। তাদের এজেন্সির নাম ছিল ইউরো ভিসা সেন্টার। । কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, ইউরোপের বিভিন্ন দেশে পাঠানোর নাম করে টাকা দিয়ে তাদের ভুয়া ভিসার কাগজ দেয়। গত ১৫ অক্টবর ভুক্তভুগি শেখ হাসানুর রহমানের মামলায় পুলিশ এই দুইজন কে আটক করে কারাগারে পাঠায়। কিন্ত জাল কাগজ পত্র তৈরি করে তা দিয়ে বৃষ্টি জামিন নিয়ে এখন বাইরে। আর বাইরে এসেই সে স্বামীর জামিনে জাল কাগজ পত্র তৈরি করছে।
আদতে মিজানুর রহমান মিন্টু যশোর সদর উপজেলার সতিঘাটা কামালপুরের আবুল কালামের ছেলে। ভুক্তভোগী ব্যক্তিদের অভিযোগ, টাকা নেওয়ার পর ওই ব্যক্তি স্ত্রীকে নিয়ে যশোর থেকে পালিয়ে নাটোরে নতুন করে অফিস খুলে বসে।
পুলিশ তদন্তে জানা গেছে, এই দম্পতি এর আগে পর্তুগালসহ বিভিন্ন দেশে লোক পাঠানোর নামে আরও ৪০ জনের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এই প্রতারক দম্পতির কবলে পড়ে মোট ৪৪টি পরিবার নিঃস্ব হয়ে পড়েছে। তবে বাস্তবে এই ভুক্তভুগি র সংখ্যা শতাধিক।
ভুক্তভোগী বাঘারপাড়া উপজেলার হাবুলগ্রামের নাঈমুল হক নাবিল (২৩) জানান, কানাড যেতে তিনি মায়ের জমি বিক্রি ও ঋণ নিয়ে ১৫ লাখ টাকা মিন্টুর হাতে দেন। কিন্তু টাকা নেওয়ার পর যশোর অফিস গুটিয়ে নাটোরে চলে যায় মিন্টু। ভিসাও দেননি, টাকাও ফেরত দেননি। এ ঘটনায় গত ২৭ সেপ্টেম্বর নাবিলের ভগ্নিপতি ভুট্ট যশোর কোতোয়ালি মডেল থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
এব্যাপারে যশোর কোতোয়ালি থানার এসআই তাহমুদুল ইসলাম জানান, ২৮ সেপ্টেম্বর রাতে মামলার কাগজ হাতে পেয়ে পরবর্তীতে ঐ দম্পতিকে আটক করে আদালতে সোর্পদ করেন।
প্রতারণার শিকার যশোর সদর উপজেলার বাবলুর রহমান, ১৮ সেপ্টেম্বর নাটোর সদর থানায় অভিযোগ করেছেন। তাঁর অভিযোগে বলা হয়, বৈধ পথে শ্রমিক ভিসা দেওয়ার নামে চারজনের কাছ থেকে ৫৮ লাখ টাকা হাতিয়ে মিন্টু নাটোর সদর উপজেলার বড় হরিশপুর এলাকায় ‘ইউরো ভিসা হেল্প সেন্টার বিডি’ নামে নতুন অফিস খুলেছেন। টাকা ফেরত চাইলে প্রাণনাশের হুমকিও দিয়েছেন তিনি। আরো ভুক্তভোগী হলেন ঝিকরগাছার রাসেল কবির ও মণিরামপুরের মেহেদী হাসান।
নাটোর থানার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই জামাল উদ্দিন বলেন, প্রাথমিক তদন্তে দেখা গেছে মিন্টু দেশের বিভিন্ন জেলায় একই কৌশলে অফিস খোলে। নিজস্ব একটি বাহিনী তৈরি করে এই দম্পতি। বাহিনীর সদস্যদের মোটরসাইকেল কিনে দিয়ে বহর নিয়ে জনমনে ব্যাপক ভীতি সঞ্চার করতো। তার বহরে থাকতো যশোর শহর মুজিব সড়কের আওয়ামীলীগ ক্যাডার তেঁতুল তলার মনু মিয়ার ছেলে সুজন, ডালমিল মাঠপাড়ার নূর আলমের ছেলে চিন্নিত বাটপার আওয়ামীলীগ ক্যাডার, জুয়াড়ি, মোবাইল চোর তরুণসহ প্রায় ত্রিশ জন। এদের মধ্যে সুজন সম্প্রতি মারা গেছে।
সূত্র জানায়, মিন্টু–বৃষ্টি দম্পতির নেতৃত্বে একটি প্রতারক চক্র কাজ করছে। তারা কানাডা, পর্তুগালসহ বিভিন্ন দেশে পাঠানোর নামে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে। ভুক্তভোগীদের কেউ কেউ ভুয়া ভিসার মাধ্যমে প্রতারণার শিকার হয়েছেন বলেও পুলিশের তদন্তে উঠে এসেছে।
