নলডাঙ্গায় ন্যায্য মূল্যে সার পেয়ে উচ্ছ্বসিত কৃষকরা
মনিরুল ইসলাম, নাটোর প্রতিনিধি:
নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলায় কৃষকদের ন্যায্যমূল্যে সার প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে এক অভিনব উদ্যোগ নিয়েছেন উপজেলা কৃষি অফিসার কিষোয়ার হোসেন। তার নেতৃত্বে পরিচালিত স্বচ্ছ সার বিতরণ কার্যক্রমে কৃষকদের মধ্যে দেখা দিয়েছে ব্যাপক সন্তুষ্টি ও আস্থা।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, নলডাঙ্গায় বর্তমানে ১৭টি অনুমোদিত সার ডিলার রয়েছেন। প্রতিটি ডিলারের দোকানে ট্যাগকৃত উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তার উপস্থিতিতে সার বিক্রি করা হচ্ছে। কৃষকরা তাঁদের চাষযোগ্য জমির পরিমাণ অনুযায়ী সরকার নির্ধারিত দামে সার পাচ্ছেন। প্রতিটি বিক্রির সময় ক্যাশ মেমো প্রদান বাধ্যতামূলক করায় সার বিতরণে অনিয়ম বা মজুতদারির সুযোগ কমে গেছে।
ফলে এখন শতভাগ নিশ্চয়তার সঙ্গে কৃষকরা তাঁদের প্রাপ্য সার পাচ্ছেন। এতে কৃষি অফিসের প্রতি কৃষকদের আস্থা বেড়েছে এবং উপজেলা জুড়ে এই উদ্যোগের প্রশংসা ছড়িয়ে পড়েছে।
উপজেলা কৃষি অফিসার কিষোয়ার হোসেন বলেন,
“আমাদের মূল লক্ষ্য হলো কোনো কৃষক যেন বঞ্চিত না হন এবং কেউ যেন অতিরিক্ত সার মজুত করতে না পারেন। প্রতিটি ধাপে আমরা স্বচ্ছতা নিশ্চিত করেছি। কৃষক তার জমির উপযুক্ত পরিমাণ সার পাচ্ছেন, সেটিই আমাদের সফলতা।”
তিনি আরও জানান, সঠিক সার প্রয়োগ সম্পর্কে কৃষকদের সচেতনতা বাড়াতে ইতোমধ্যে ৪ হাজার লিফলেট বিতরণ করা হয়েছে। এতে ফসলভিত্তিক সার ব্যবহারের সঠিক মাত্রা, সময় ও পদ্ধতি বিস্তারিতভাবে উল্লেখ রয়েছে।
এছাড়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে মাটির নমুনা সংগ্রহ করে উর্বরতা পরীক্ষা করা হচ্ছে। পরীক্ষার ফল অনুযায়ী কৃষকদেরকে জমির গুণাগুণ অনুযায়ী সঠিক সার প্রয়োগ ও ফসল ব্যবস্থাপনার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
মাধবপুর গ্রামের কৃষক সাইফুল ইসলাম, ধনকোড়া গ্রামের মোঃ শামীম এবং হলুদঘর গ্রামের শহিদুল ইসলামসহ কয়েকজন কৃষক বলেন,
“আগে সার নিতে গিয়ে অনেক ভোগান্তি হতো, এখন নিয়ম মেনে ঠিক দামে সার পাচ্ছি। খরচ কমেছে, সময়ও বাঁচছে। এখন আর দালাল বা বাড়তি দামের ঝামেলা নেই।”
অন্যদিকে বৈদ্যবেলঘড়িয়া গ্রামের মোঃ আমন আলী ও বাসুদেবপুর গ্রামের খোরশেদ আলী উপজেলা কৃষি অফিসে এসে কর্মকর্তাদের এমন উদ্যোগের প্রশংসা করে বলেন,
“এমন স্বচ্ছ সার বিতরণ ব্যবস্থা সারা দেশেই চালু করা উচিত। এতে কৃষক হয়রানি কমবে, উৎপাদন বাড়বে, আর দেশের খাদ্য নিরাপত্তা আরও মজবুত হবে।”
এমন অভিনব সার বিতরনের বিষয়টি ডিলাররাও দেখছেন ইতিবাচক দৃষ্টিতে,উপজেলার মন্ডল ট্রেডার্স, ভাই ভাই স্টোর ও ফাতেমা ট্রেডার্সের মালিকরা জানান,কৃষি অফিসের নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা সার বিক্রি করছি। কর্মকর্তারা নিয়মিত দোকানে আসেন ও তদারকি করেন। এতে আস্থা ও স্বচ্ছতা দুটোই বজায় থাকছে। এতে কৃষক ও ডিলার—দুই পক্ষের সম্পর্ক আরও দৃঢ় হচ্ছে।”
এই উদ্যোগের ফলে শুধু সার বিতরণেই নয়, কৃষকদের মধ্যে কৃষি প্রযুক্তি, মাটি পরীক্ষা ও সঠিক সার ব্যবহারের বিষয়ে সচেতনতা বেড়েছে। এখন কৃষকরা জানেন কোন ফসলে কতটুকু সার প্রয়োগ করলে সর্বোচ্চ ফলন পাওয়া যায়।
নলডাঙ্গা উপজেলা কৃষি অফিসের এই কার্যক্রমকে স্থানীয় জনসাধারণ একে কৃষি খাতে স্বচ্ছতা ও সেবার নতুন মডেল হিসেবে দেখছেন।
উপজেলা কৃষি অফিসের স্বচ্ছ সার বিতরণ ব্যবস্থা, মাঠপর্যায়ের তদারকি, মাটি পরীক্ষা ও সচেতনতামূলক উদ্যোগ নলডাঙ্গার কৃষিতে এক নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। স্থানীয়দের প্রত্যাশা—এ ধরনের উদ্যোগ সারাদেশে ছড়িয়ে পড়লে কৃষক বাঁচবে, কৃষি বাঁচবে, আর দেশও হবে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ।
