সাভারের আদালতের নির্দেশ অমান্য করে সম্পত্তি দখলের চেষ্টা: প্রভাবশালী মহলের বিরুদ্ধে অভিযোগ

IMG-20251104-WA0056

নিজস্ব প্রতিবেদক, সাভার :

রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে সাভারের দামপাড়া এলাকায় এক ব্যক্তির নিজস্ব সম্পত্তি দখল, হামলা এবং প্রাণনাশের হুমকির অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় একদল প্রভাবশালী মহলের বিরুদ্ধে। আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও তারা জোরপূর্বক জায়গায় প্রবেশ করে সাইনবোর্ড ভাঙচুর করেছে বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, অভিযুক্তদের মধ্যে রয়েছেন শরিফ সরকার ওরফে পাগলা শরিফ (৩৪), পিতা: দিলগণি সরকার; আরাফাত সরকার (৪০), আদেল সরকার (৩৪), পিতা: মৃত হাবেজ উদ্দিন সরকার; রুবেল সরকার (৩৩), পিতা: দুলাল উদ্দিন সরকার; দিলগণি সরকার (৭৫), পিতা: মৃত রমিজ উদ্দিন; দুলাল উদ্দিন সরকার (৬০) এবং ফরিদ উদ্দিন সরকার, পিতা: মৃত বাবুর উদ্দিন সরকার।

জানা গেছে, মৌজা দামপাড়া আরএস ৫০নং দাগ, বি আরএস ৯৬৯নং খতিয়ান ও ১১৩০নং দাগের সম্পত্তি নিয়ে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৪৫ ধারায় পিটিশন মামলা (নং–৩০৭/২০২৫) দায়ের করা হয়। আদালত মামলার প্রাথমিক শুনানি শেষে বিবাদমান ভূমিতে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার নির্দেশ দেন এবং বিবাদী পক্ষকে উক্ত সম্পত্তিতে প্রবেশ ও কোনো ধরনের কার্যক্রম থেকে বিরত থাকতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেন।

কোর্টের নির্দেশে সাভার মডেল থানার এএসআই মো. মোজাম্মেল হক ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তিনি জানান, আদালতের ১৪৪ ধারার এই নোটিশ উভয় পক্ষকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে।আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী উভয় পক্ষকে বর্তমানে যেভাবে সম্পত্তি রয়েছে সেভাবেই থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

অভিযোগকারীর দাবি, পুলিশের পরিদর্শনের পরও প্রভাবশালী মহল আদালতের আদেশ উপেক্ষা করে পুনরায় সেখানে প্রবেশ করে। পারভেজ সরকারের চাচাতো ভাই জাহিদ সরকার নতুন বাড়ি নির্মাণের কাজ শুরু করলে একদল লোক গিয়ে মিস্ত্রিদের ভয়ভীতি দেখায়, পানির পাইপ কেটে দেয় এবং নির্মাণসামগ্রী ভাঙচুর করে।

এলাকাবাসীর দাবি, শরিফ সরকার ও তার ঘনিষ্ঠ একটি গোষ্ঠী দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে চলেছেন। তাদের বিরুদ্ধে একাধিকবার জমি দখলের অভিযোগ উঠলেও অধিকাংশ সময় প্রশাসনিক প্রভাব ব্যবহার করে বিষয়গুলো ধামাচাপা পড়ে গেছে বলে জানা যায়।

স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা জানান, অভিযুক্তদের পরিবার দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক যোগাযোগের কারণে এলাকায় প্রভাবশালী হিসেবে পরিচিত। অতীতে রাজনৈতিক দলের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে যুক্ত থাকলেও বর্তমানে ওই পরিচয় ব্যবহার করে তারা সাধারণ মানুষের ওপর প্রভাব বিস্তার করছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

তারা আরও জানান,শরীফ সরকারের বাবা দিলগণি সরকার ছিলেন ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ডা. এনামুর রহমান, সাভার উপজেলা চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মনজুর আলম রাজীবসহ আরও আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে বিভিন্ন প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করেছেন—যার ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেখা যায়।

অভিযুক্তদের মধ্যে আরও একজন আশুলিয়া ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ নেতা আরাফাত সরকার—এমনটাই দেখা যায় ফেস্টুনে প্রচারিত ছবিতে। এখন তারা অস্বীকার করছেন যে, তারা কখনো আওয়ামী লীগের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। কিন্তু এলাকাবাসীর সবাই বলেন, তারা সবাই স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী।

আরাফাত সরকারের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের আমলে সাংবাদিকদের প্রতি খারাপ আচরণের অভিযোগ আছে—এমনটাই জানা যায়। এখন তার উত্তরসূরিরা সেই প্রভাব খাটিয়ে জমি-বাড়ি দখলের মতো কর্মকাণ্ডে জড়িত হচ্ছে।

স্থানীয়রা বলছেন, আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও একদল প্রভাবশালী ব্যক্তির এমন কর্মকাণ্ড আইনের প্রতি চরম অবজ্ঞার শামিল। তারা দ্রুত প্রশাসনের হস্তক্ষেপ এবং অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।

অভিযুক্তদের বক্তব্য জানতে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।