ঝিনাইদহ-৩ বিএনপির প্রার্থী মেহেদী হাসান রনিপিতার দেখানো পথে জনগণের উন্নয়নে কাজ করতে চান
মোঃ আবু সাইদ শওকত আলী ,
খুলনা বিভাগীয় প্রধানঃ
ঝিনাইদহ-৩ আসনে বিএনপি দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন মহেশপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি মেহেদী হাসান রনি। তাকে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভারতীয় সীমান্তবর্তী উপজেলা মহেশপুর ও কোটচাঁদপুর আসনে প্রার্থী নির্বাচিত করেছেন। রনি এ আসন থেকে চার বার নির্বাচিত বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য প্রয়াত শহিদুল ইসলাম মাস্টারের ছেলে। সোমবার সন্ধ্যায় গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের প্রার্থী ঘোষণা করেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ঝিনাইদহে-৩ আসন থেকে ব্যরিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল, কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-তথ্য বিষয়ক সম্পাদক আমিরুজ্জামান খান শিমুল ও শিল্পি মনির খানের মত হ্যাভিওয়েট আলোচিত প্রার্থীরা দলীয় মনোনয়ন চেয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত সবাইকে টপকে দলীয় টিকিট পেয়েছেন মেহেদী হাসান রনি। তার মনোনয়ন পাওয়ার বিষয়টি নির্বাচনী এলাকার দুই উপজেলার চার লক্ষাধিক ভোটারের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিনত হয়েছে। তবে, স্থানীয় ভোটাররা বলছেন, রনি তার বাবার মতো কর্মীবান্ধব। তিনি এলাকার কোন মানুষের সাথে দেখা হলে বারার মতো বুকে জড়িয়ে ধরেন, আপন করে নেন। বিপদ আপদে তাদের পাশে ছুটে যান। দির্ঘদিন এভাবে এলকাবাসির পাশে থাকায় তার সুনাম ছড়িয়ে রয়েছে।
তবে জেলার বাকি ১, ২ ও ৪ আসনের প্রার্থীদের নাম ঘোষনা করা হয়নি। এসব আসনে বর্তমান এ্যাটর্নি জেনারেল আসাদুজ্জামান খান, কেন্দ্রীয় স্বেচ্চাসেবক দলের সিনিয়র যুগ্ন সাধারন সম্পাদক সাইফুল ইসলাম ফিরোজ, খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক জয়ন্ত কুমার কুন্ডু, জেলা বিএনপির সভাপতি এ্যডভোকেট এম এ মজিদ, গণঅধিকার পরিষদের সাধারন সম্পাদক রাশেদ খান ও তরুণ বিএনপি নেতা হামিদুল ইসলাম হামিদের মতো হ্যাভিওয়েট প্রার্থীরা মনোনয়ন চাইলেও সিদ্ধান্তে হোল্ড করে রাখা হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আসনটি মহেশপুর ও কোটচাঁদপুর উপজেলার ১৭ ইউনিয়ন এবং দুই পৌরসভা নিয়ে গঠিত। এরমধ্যে কোটচাঁদপুরে এক পৌরসভা ও পাঁচ ইউনিয়ন এবং মহেশপুরে একটি পৌরসভা ও ১২ ইউনিয়ন রয়েছে। ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির দলীয় মনোনয়ন পেয়েছিলেন। রনির পিতা প্রয়াত শহিদুল ইসলাম মাস্টার এ আসন থেকে চার বার নির্বাচিত হয়ে ব্যপক উন্নয়ন করেছেন।
রনির পিতা শহিদুল ইসলাম মাস্টার সংসদ সদস্য থাকাকালীন নির্বাচনী এলাকায় যোগাযোগ, চিকিৎসা, শিক্ষাসহ গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নে ব্যপক ভূমিকা রাখেন। যা ছিল স্বাধীনতা উত্তর মহেশপুর কোটচাঁদপুরের ইতিহাসে রেকর্ড। উন্নয়নে পিছিয়ে পড়া ভারতীয় সীমান্ত ঘেষা উপজেলা মহেশপুর ও কোটচাঁদপুরে এমন উন্নয়ন আগে এবং পরে কেউ করেননি। সবথেকে বেশি উন্নয়ন করেন গ্রামীণ রাস্তাঘাট, ব্রীজ, কালভার্টসহ বিভিন্ন সরকারি বেসরকারী অবকাঠামো। তার সময়ে উল্লেকযোগ্য উন্নয়ন ছিল বিদ্যুৎ খাতে। তার বাবার উন্নয়নে এলাকায় ব্যাপক সুনার রয়েছে।
রনি ঢাকার রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল এন্ড কলেজ থেকে ২০০০ সালে মাধ্যমিক ও ২০০২ সালে ঢাকা কমার্স কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন। এরপর অষ্ট্রেলিয়ার কার্ডান ইউনিভার্সিটি থেকে অনার্স শেষ করেন। ২০০৯ সালে দেশে ফিরে বাবার দেখানো পথে বিএনপির রাজনীতিতে যুক্ত হন। এরপর ২০১৫ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত উপজেলা বিএনপি সিনিয়র সহ সাধারন সম্পাদক হিসাবে দ্বায়িত্ব পালন করেন। ২০১৯ সালে থানা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য সচিব এবং ২০২২ সালে উপজেলা বিএনপির সভাপতি হিসাবে নির্বাচিত হন। ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির দলীয় প্রার্থী হিসাবে নির্বাচন করেন। ওই বছর আওয়ামীলীগ সরকার ভোট কারচুপির মধ্যে দিয়ে সরকার গঠন করে।
২০২৪ সালের ৫ আগষ্ট ছাত্র জনতার গণ-অভ্যুত্থান চুড়ান্ত রুপ নিলে স্বৈরাচার আওয়ামীলীগ সরকার প্রধান শেখ হাসিনা পালিয়ে যান। রনি দলীয় কর্মসূচী পালনসহ নির্বাচিত এলাকার শহর থেকে প্রত্যান্ত অঞ্চলে গণসংযোগ বাড়িয়ে দেন। বিএনপির ভবারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ঘোষিত ৩১ দফা সম্বলিত লিফলেট বিতরণ ও সদস্য সংগ্রহ কর্মসূচীসহ দলীয় বিভিন্ন কর্মসূচী পালনে নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
উল্লেখ্য, ঝিনাইদহ-৩ আসন দু’টি উপজেলা নিয়ে গঠিত হলেও স্বাধীনতার পর থেকে বারোটি নির্বাচনের প্রতিবারই ভারত সীমান্তবর্তি উপজেলা মহেশপুর থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে এলাকার উন্নয়নের নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন। কোটচাঁদপুর থেকে মহেশপুর উপজেলায় ইউনিয়ন ও ভোটার সংখ্যা ডাবল হওয়ায় এ উপজেলার প্রার্থীরা নির্বাচনে বিশেষ সুবিধা পেয়ে থাকেন।
এ আসনটিতে ৯১, ৯৬ ও ২০০১ সালে বিএনপির প্রার্থী শহিদুল ইসলাম মাস্টার নির্বাচিত হলেও ২০০৮ সালের নির্বাচনে এই আসন থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শফিকুল আজম খান চঞ্চল নৌকা প্রতিক নিয়ে নির্বাচিত হন। এরপর একতরফা ভোটে ২০১৪ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নবী নেওয়াজ এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনে শফিকুল আজম খান চঞ্চল সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন। তবে উল্লেখযোগ্য কোন উন্নয়ন করতে পারেননি তারা। তারা ক্ষমতায় এসে টেন্ডারবাজি ও লুটপাটের রাজনীতি শুরু করেন। উন্নয়ন বঞ্চিত হন নির্বাচনী এলাকার সাধারন মানুষ। ২০২৪ সালের জাতীয় নির্বাচনের একতরফা ভোটে আওয়ামীলীগ থেকে দলীয় টিকিটে সালাউদ্দীন মিয়াজি নির্বাচিত হলেও মাত্র ছয় মাস পরে সরকারের পতন হয়।
কিন্তু এলাকাবাসি বলছেন, রনির পিতা সাবেক সাংসদ শহিদুল ইসলাম মাস্টার ১৯৯১ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত জাতীয় সংসদে প্রতিনিধিত্ব করার সময় তার নির্বাচনী এলাকায় ২৮৭ গ্রাম বিদ্যুতায়ন করেন। শিক্ষানুরাগি এ সাংসদ নিজ উদ্দ্যোগে আটটি কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন এবং মহেশপুর ডিগ্রী কলেজ সরকারিকরণ করেন। অসংখ্য প্রাইমারি স্কুল প্রতিষ্ঠাসহ প্রতি ইউনিয়নে দুইটি করে মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও অসংখ্য মাদ্রাসা, মসজিদ, মন্দির, কবরস্থান ও শ্মশান প্রতিষ্ঠা করেন। যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়নে সাতটি বড় ব্রীজসহ অসংখ্য ব্রীজ ও কালভার্ট ও নির্মাণ করেন। তার সময়ে নির্মিত হয় মহেশপুর ও কোটচাঁদপুর উপজেলায় জেলা পরিষদ অডিটোরিয়াম ও ডাকবাংলা ও থানা ভবন। মহেশপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বহুতল ভবন নির্মাণসহ ৫০ শয্যা থেকে ১০০ উন্নীত করেন।
উপজেলা বিএনপির সাধারন সম্পাদক দবির উদ্দীন বিশ্বাস বলেন, উদীয়মান নেতা মেহেদী হাসান রনি। রনি বাবার মত রাতদিন নির্বাচনী এলাকার মানুষের দ্বারে দ্বারে গিয়ে দেখা করে কথা বলেন, তাদের পাশে থাকার চেষ্টা করেন। রনি তার বাবার মত কর্মীবান্ধব একজন নেতা।
উপজেলা বিএনপির সভাপতি মেহেদী হাসান রনি জানান, বাবার উৎসাহে ছাত্রদলে আমার রাজনৈতিক জীবন শুরু। আমি বাবার কাছে শিখেছি কিভাবে সাধারন মানুষের পাশে থেকে তাদের ভাগ্য উন্নয়নে কাজ করতে হয়। দল দ্বিতীয়বারের মত আমাকে দলীয় মনোনয়ন দিয়েছে। আজ বাবা নেই, বাবার দেখানো পথে ঝিনাইদহ-৩ আসনের জনগণের উন্নয়নে কাজ করতে চাই। এ আসন থেকে জয়ি হবো ইনশাল্লাহ।
