নাটোরে স্লুইসগেট বন্ধ রেখে মাছ চাষ, জলাবদ্ধ ৫ হাজার হেক্টর জমি !

IMG_20251031_213515

বিশেষ প্রতিবেদকঃ
নাটোরের সিংড়ায় গদাই নদীর জায়গা দখল করে পুকুর খনন, বাঁধ ও স্থাপনা নির্মাণ এবং স্লুইচগেট বন্ধ করে মাছ শিকারের অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে।

নদীর স্লুইচগেট বন্ধ থাকায় পানি নিষ্কাশনের অভাবে গত বিশ বছর ধরে ভয়াবহ জলাবদ্ধতায় রয়েছে উপজেলার ১৫টি বিলের পাঁচ হাজার হেক্টর আবাদি জমি। এতে চরম বিপাকে পড়েছে উপজেলার ৪০টি গ্রামের কয়েক হাজার কৃষক। প্রতিবছরের ন্যায় এবারও শঙ্কায় পড়েছে বোরো ও রবিশস্য আবাদ।

স্থানীয় কৃষকদের অভিযোগ, নদীর জায়গা ও খাল-জলাশয় দখল করে কোটি কোটি টাকার সম্পদ ভোগ করছে স্থানীয় প্রভাবশালী চক্রটি। এতে বিপুল রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার। জলাবদ্ধতায় কারণে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে কৃষিকাজ। এসব সমস্যা সমাধানে বার বার এমপি, মন্ত্রী ও স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তাদের বলেও কোনো প্রতিকার পাওয়া যায়নি।

স্থানীয় প্রশাসন ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, এলাকার ফসল রক্ষায় নাটোরের সিংড়া উপজেলার হাতিয়ানদহ ইউনিয়নের বড় শাঐল নামক স্থানে একটি স্লুইচগেট নির্মাণ করা হয়। বর্তমানে ওই স্লুইচগেটটি স্থানীয় মসজিদের নাম ভাঙিয়ে দখলে নিয়েছেন স্থানীয় একটি প্রভাবশালী চক্র।

প্রতিবছর বর্ষায় নিজেদের ইচ্ছামতো স্লুইচগেট খুলে উপজেলার লালোর, সের কোল, হাতিয়ানদহ ও কলম ইউনিয়ন এবং সিংড়া পৌরসভার নিঙ্গইন ও শৈলমারী এলাকার অন্তত ১৫টি বিলে নদীর পানি প্রবেশ করান তারা। বর্ষা শেষে পানি নিষ্কাশন বন্ধ রেখে ১০-১৫ লক্ষ টাকায় স্লুইচগেটটি মাছ ব্যবসায়ীদের কাছে ইজারা দেওয়া হয়। এবছরও প্রায় ৮ লক্ষ টাকা ইজারা দেওয়া হয়েছে।

গত বুধবার (৩০ অক্টোবর) সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার সেরেল, হাতিয়ানদহ এবং লালোর ইউনিয়নে ১৩টি বিলের পাড়ে মোট ৪০টি গ্রাম। এসব বিলের মধ্যে কোথাও এক মানুষ, কোথাও এক বুক সমান পানি। আবার কোথাও হাঁটু ও মাজা পরিমাণ পানি রয়েছে। বিলের কৃষিজমির পানি নিষ্কাশনের জায়গা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এসব গ্রামের হাজার হাজার কৃষকের কষ্টে অর্জিত ফসল এখন পানিতে ভাসছে। অনেক ক্ষেতের উঠতি ফসল পানিতে নিমজ্জিত। স্থানীয় কৃষকদের দাবি, একটু ভারী বৃষ্টি হলেই সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা, তলিয়ে যায় জমির কাঁচা-পাকা ধান।

পুঠিমারী গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক মোক্তার আলী বলেন, বিঘাপ্রতি ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা ব্যয় করে অনেক স্বপ্ন নিয়ে বর্ষা মৌসুমে সারে ১০ বিঘা ধান আবাদ করছিলাম। এখন সব ধান পানির নিচে। প্রায় ৩০ বছর ধরে এই অবস্থা। এখন কী খাবো? কী নিয়ে আবাদ করবো? জলাবদ্ধতার কারণে কোনো বছরের পর বছর আমরা ক্ষতিগ্রস্ত।

একই অবস্থা এলাকার অন্যান্য কৃষকদেরও।

এদিকে স্লুইচগেট বন্ধ করে মাছ চাষের বিষয়ে জানতে চাইলে ইজারাদার ও স্থানীয় মাছ ব্যবসায়ী খোরশেদ বলেন, বিলের পানির মাছ ধরার জন্য স্থানীয় মসজিদের কমিটির নিকট থেকে এবার জোলাটি ৭ লক্ষ ৫৮ হাজার টাকা দিয়া (ইজারা) নিছি। এসব বিলের পানি বেশি করে ছাইরা দিলে সৌতি জাল টেকে না, ফাইট্যা যায়।

জোলা কমিটির সভাপতি আব্দুল ওহাব মাস্টার বলছেন, তারা অনেক বছর ধরে জোলাটি মসজিদের নামে ইজারা দেন। এই জায়গা মসজিদকে দান করা হয়েছে, ব্যক্তির নামেও আছে। এসব টাকা দিয়ে মসজিদের উন্নয়নসহ রাস্তা-ঘাট এবং নদীতে একটি ব্রিজ নির্মাণ করা হয়েছে। তবে প্লাবন ভূমি ও নদীর তীর কীভাবে মসজিদ বা ব্যক্তি মালিকানা হয়? এমন প্রশ্নে কোনো উত্তর দিতে পারেননি তিনি।