মোরেলগঞ্জে পঞ্চাশ ঊর্ধ্ব বৃদ্ধের ওপর সশস্ত্র হামলা: দাড়ি টেনে ছিঁড়ে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত, ন্যায়বিচারের দাবিতে এলাকাবাসীর তীব্র ক্ষোভ
মোঃ ফিরোজ আহমেদ মোরেলগঞ্জ (বাগেরহাট):
বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ বিশারীঘাটা গ্রামে জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে এক অসহায় পরিবারের ওপর সংঘবদ্ধ সশস্ত্র হামলার অভিযোগ উঠেছে। হামলায় গুরুতর আহত হয়েছেন স্থানীয় আব্দুস ছোবাহান হাওলাদার (৫৮)। হামলাকারীরা শুধু মারধরই করেনি, বরং তার দাড়ি টেনে ছিঁড়ে ফেলে—যা ধর্মীয় অনুভূতিতে চরম আঘাত হিসেবে দেখছেন স্থানীয়রা।
ঘটনাটি ঘটে গত ১৭ অক্টোবর (শুক্রবার) জুমার নামাজের আগে দুপুরে। প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে জানা যায়, ১৫–২০ জন সশস্ত্র ব্যক্তি হঠাৎ আব্দুস ছোবাহানের বাড়িতে প্রবেশ করে তাকে ও তার দুই মেয়ে রওশন আরা বেগম ও জায়েদা বেগমকে বেধড়ক মারধর করে। এ সময় ঘরের আলমারির তালা ভেঙে প্রায় ৮০ হাজার টাকা লুটের অভিযোগও পাওয়া গেছে।
ভুক্তভোগীর মেয়ে রওশন আরা বেগম জানান, “আমরা কারও সঙ্গে কোনো ঝামেলায় ছিলাম না। কিন্তু একই গ্রামের আবু ছালেহ শেখ, আব্দুল্লাহ শেখ, আব্দুস সালাম শেখ, ইয়াছিন শেখ, রুহুল আমিন বয়াতী ও মানিক শেখসহ আরও কয়েকজন হঠাৎ অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়।”
হামলার পর স্থানীয়রা আহতদের উদ্ধার করে মোরেলগঞ্জ থানায় নিয়ে যায়। পুলিশ তাদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠায়, পরে আব্দুস ছোবাহানের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সুস্থ হয়ে তিনি ছয়জনকে আসামি করে বাগেরহাট সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে (সিআর ২৪১/২৫) মামলা দায়ের করেছেন।
স্থানীয় প্রবীণ আব্দুল কাদের হাওলাদার বলেন, “আব্দুল্লাহ শেখ তো ওদের ভাগ্নে, ছোবাহানের আশ্রয়ে বড় হয়েছে। অথচ সেই ভাগ্নেই হামলার নেতৃত্ব দিয়েছে—এটা অমানবিক।”
মসজিদের মুসল্লি আবুবকর সিদ্দিক বলেন, “দাড়ি টেনে ছিঁড়ে ফেলা নবীর সুন্নতের অপমান। এটা ধর্মীয় অনুভূতিতে গুরুতর আঘাত। আমরা এই ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই।”
স্থানীয়দের অভিযোগ, হামলাকারীরা দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় সন্ত্রাস, মাদক ব্যবসা ও সম্পদ দখলের সঙ্গে জড়িত, কিন্তু প্রশাসন নীরব ভূমিকা পালন করছে।
আব্দুস ছোবাহান হাওলাদার বলেন, “আমি বৃদ্ধ মানুষ, কোনোমতে প্রাণে বেঁচেছি। এখনো হুমকি পাচ্ছি। আমি শুধু নিরাপত্তা ও ন্যায়বিচার চাই।”
মোরেলগঞ্জ থানার এক কর্মকর্তা বলেন, “আদালতের নির্দেশনা পেলে তদন্তসাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
দক্ষিণ বিশারীঘাটার এই ঘটনা শুধু জমি বিরোধ নয়—এটি আত্মীয়তার মুখোশে লুকানো লোভ, নৈতিক অবক্ষয় ও প্রশাসনিক উদাসীনতার প্রতিচ্ছবি। এলাকাবাসীর প্রশ্ন—এক বৃদ্ধের দাড়ি টেনে ছিঁড়ে ফেলার মতো নৃশংসতার বিচার না হলে সমাজে আইনের প্রতি আস্থা কোথায় থাকবে?
