নিরালায় সন্ত্রাসী হামলার টার্গেট ছিল জনি।

ফাহিম ইসলাম, খুলনা বিশেষ প্রতিনিধিঃ
খুলনার নিরালা তালুকদার কমপ্লেক্সের সামনে মঙ্গলবার রাতে ঘটে যাওয়া সন্ত্রাসী হামলার মূল টার্গেট ছিল জনি নামের এক যুবক। পুলিশ বলছে, ওই হামলার মূল উদ্দেশ্য ছিল জনিকে হত্যা করা। তবে জনিকে না পেয়ে সন্ত্রাসীরা এলোপাতাড়ি গুলি চালালে দু’জন গুরুতরভাবে আহত হন।
পুলিশ জানায়, ঘটনাস্থলে গুলিবিদ্ধদের উদ্ধার করে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আহতদের মধ্যে মনির নামে এক ব্যক্তি মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে। আরেকজন আহতের নাম হানিফ।
সন্ত্রাসীদের আগমন ও পরিকল্পনা
একটি সূত্র জানায়, মঙ্গলবার বিকেলেই খুলনার রূপসা নদীর ওপার থেকে ২০-২৫ জন সশস্ত্র সন্ত্রাসী ১১টি মোটরসাইকেলযোগে শহরে প্রবেশ করে। তারা বিআইডব্লিউটিএ খেয়াঘাট পার হয়ে নগরীর বিভিন্ন স্থানে ঘোরাফেরা করে সন্ধ্যার পর নিরালার তালুকদার কমপ্লেক্সের সামনে অবস্থান নেয়। তখনই তারা জনি নামের যুবককে খুঁজে বের করার চেষ্টা করে।
সূত্রটি আরও জানায়, নিরালা ১৯ নম্বর রোডে একটি মাদক আখড়া রয়েছে, যা পরিচালনা করে খুলনার শীর্ষ সন্ত্রাসী পলাশ। জনি পলাশ বাহিনীর একজন সক্রিয় সদস্য। জনি সেখানে অবস্থান করছে এমন তথ্য পেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী গ্রুপের সদস্যরা ওই এলাকায় যায়। কিন্তু তাকে না পেয়ে সন্ত্রাসীরা এলোপাতাড়ি গুলি চালাতে শুরু করে। এতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে পুরো নিরালা এলাকায়।
পুলিশের তৎপরতা ও গ্রেপ্তার অভিযান
গুলির খবর পেয়ে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছায় এবং এলাকা ঘিরে ফেলে। পরে হরিণটানা থানা পুলিশের সহযোগিতায় অভিযান চালিয়ে তিন যুবককে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন—
১️⃣ রূপসা উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নের হান্নান শেখে বাড়ির ভাড়াটিয়া গনি হাওলাদারের ছেলে সুমন হাওলাদার,
২️⃣ একই উপজেলার আইচগাতি ইউনিয়নের খান মোহাম্মদপুর গ্রামের সিদ্দিক ব্যাপারীর ছেলে শামীম,
৩️⃣ এবং রাজাপুর বারাকপুর মোড়ের শেখ শাহিন শেখের ছেলে শেখ শাহারুখ আহমেদ শান্ত।
পুলিশ জানায়, গ্রেপ্তার তিনজনের কাছ থেকে দু’টি মোটরসাইকেল, দু’টি তাজা গুলি এবং একটি বিস্ফোরিত গুলির খোসা উদ্ধার করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।
সংঘর্ষের পেছনে সন্ত্রাসীদের অন্তর্দ্বন্দ্ব
পুলিশের একাধিক সূত্রের দাবি, খুলনার শীর্ষ দুই সন্ত্রাসী পলাশ এবং গ্রেনেড বাবুর মধ্যে চলমান অন্তর্দ্বন্দ্ব থেকেই এই হামলার সূত্রপাত। জনি পলাশ বাহিনীর সদস্য হওয়ায় প্রতিপক্ষ গ্রুপ তাকে হত্যার টার্গেট করে। এ ঘটনার পর থেকে উভয় বাহিনীর সদস্যরা এলাকা ছেড়ে পালিয়েছে বলে জানা গেছে।
পুলিশের বক্তব্য
খুলনা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, “ঘটনার খবর পেয়ে আমরা দ্রুত নিরালা এলাকায় অভিযান চালাই। হরিণটানা থানা পুলিশের সহায়তায় ওই রাতেই তিন সন্ত্রাসীকে আটক করতে সক্ষম হই। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা হামলার কারণ ও পরিকল্পনা সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে। বর্তমানে সেই তথ্যগুলো যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।”
তিনি আরও বলেন, “এ ঘটনায় অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারে রাতেই বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। যারা এই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত, তাদের কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না।”
নদীপথে আগমন ও পালানো
এদিকে পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, নৌপুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে সন্ত্রাসীরা রূপসা নদী পার হয়ে খুলনা শহরে প্রবেশ করে হামলা চালায়। ঘটনার পর তারা আবারও একই পথ ব্যবহার করে পালিয়ে যায়। তাদের বেশিরভাগই রূপসা উপজেলার বিভিন্ন স্থান থেকে এসেছে বলে দাবি করেছে স্থানীয় সূত্র।
এলাকায় আতঙ্ক ও স্থানীয়দের প্রতিক্রিয়া
ঘটনার পর থেকে নিরালা ও তালুকদার কমপ্লেক্স এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, হঠাৎ গুলির শব্দে চারপাশ অন্ধকার হয়ে যায়, সবাই দোকান বন্ধ করে দেয়। অনেক পরিবার রাতে বাসা ছেড়ে অন্যত্র চলে যায়।
একজন স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, “এলাকায় আগেও দুই-একবার গুলি হয়েছে। তবে এত বড় দলবদ্ধ হামলা এই প্রথম। পুলিশ না এলে আরও বড় কিছু ঘটে যেত।”
তদন্ত ও পরবর্তী ব্যবস্থা
পুলিশ জানিয়েছে, আটক তিনজনের জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আরও কয়েকটি স্থানে অভিযান চলছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের শনাক্তে সিসিটিভি ফুটেজও সংগ্রহ করা হয়েছে। এ ঘটনায় অস্ত্র ও সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।