কেন্দুয়ার রাজী নদী অবৈধ দখল ও নদী হত্যার অভিযোগে মানববন্ধন।

IMG-20251011-WA0022

মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন, ময়মনসিংহ বিভাগের বিশেষ রিপোর্টারঃ

(হাজী লিটনের বিরুদ্ধে এলাকাবাসীর ক্ষোভ প্রশাসনের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন)

নেত্রকোণা জেলার কেন্দুয়া উপজেলার মোজাফফরপুর ইউনিয়নের হারুলিয়া (মধ্যপাড়া, ওয়ার্ড নং ২,৩ ) গ্রামে ঐতিহাসিক রাজী নদী দখল ও নদী হত্যার অভিযোগে প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতা হাজী লিটনের বিরুদ্ধে মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়েছে।

শনিবার (১১ অক্টোবর ২০২৫) দুপুরে নেত্রকোনার কেন্দুয়ায় মোজাফফরপুর ইউনিয়নের মধ্য হারুলিয়া গ্রামে “সচেতন গ্রামবাসী” ব্যানারে আয়োজিত এ মানববন্ধনে শতাধিক স্থানীয় মানুষ অংশগ্রহণ করেন। তারা রাজী নদী দখল, নক্সা পরিবর্তন, সরকারি তহবিল আত্মসাৎসহ প্রশাসনের নীরব ভূমিকার বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়- হাজী লিটন দীর্ঘদিন উপজেলা আওয়ামী লীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক হয়ে সরকারি প্রভাব খাটিয়ে রাজী নদীর পুরনো নক্সা পরিবর্তন করে সেটিকে “খাল” হিসেবে দেখান। এরপর সেই নক্সা অনুযায়ী কোটি টাকার উপরে ব্যয়ে দেখিয়ে একটি ব্রিজ নির্মাণের প্রকল্প অনুমোদন করেন, এতে তার প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ ছিল। কিন্তু বাস্তবে পুরনো নদীপথ ভরাট করে সেখানে রাস্তা নির্মাণ করা হয়, ফলে নদীটি সরকারি কাগজে কার্যত বিলুপ্ত হয়ে যায়।
এলাকাবাসীর অভিযোগ- অযৌক্তিক টেন্ডারের মাধ্যমে প্রায় কোটি টাকার সরকারি অর্থ আত্মসাৎ করা হয়েছে, অথচ ব্রিজটি আজও অসম্পূর্ণ অবস্থায় পড়ে আছে।

সরে জমিনে গিয়ে ভুক্তভোগীদের সাথে কথা বলে  জানা যায়- বিগত আওয়ামী লীগের সরকারের আমলে কেউ এই অনিয়মের প্রতিবাদ করতে গেলে হাজী লিটনের অনুসারীরা তাদের ওপর হামলা চালাত, এমনকি মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে হয়রানি করতঃ। এমনকি এই গ্রামের কয়েকজনকে রক্তাক্ত জখমও করা হয়েছিল বলে অভিযোগ রয়েছে।
বর্তমানে হাজী লিটন আবারও রাজী নদীকে “ফিশারিজ প্রকল্প” দেখিয়ে নিজের সম্পত্তি দাবি করছেন।
তিনি সরেজমিনে নিজে না গিয়ে অন্য এলাকার অন্য দলের দাপটি লোকজনকে ব্যবহার করে জবরদখলের চেষ্টা চালাচ্ছেন এবং স্থানীয়দের ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন বলেও অভিযোগ তার বিরুদ্ধে।
এদিকে সচেতন মহল ও স্থানীয় নাগরিক সমাজ প্রশ্ন তুলেছেন—একটি প্রাকৃতিক নদী কীভাবে বন্দোবস্তের আওতায় আসে?
কেন্দুয়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি অফিস) কি করে নদীকে খাল হিসেবে অনুমোদন দেয়? প্রশাসনের এমন ভূমিকা নিয়েও এলাকায় ব্যাপক ক্ষোভ ও উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে।

সহকারী কমিশনার ভূমি নাইম উল ইসলাম চৌধুরী বলেন- আমি এখনো কোন অভিযোগ পাইনি,অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মানববন্ধনে আব্দুর রহমান (৭০), রতন মিয়া (৭০) ইমরান আহমেদ (৪৫), ফরহাদ হোসেন (৪৪) বলেন- “রাজী নদী শুধু একটি জলাশয় নয়, এটি হারুলিয়ার ঐতিহ্যের প্রতীক। হাজী লিটন এই নদী অবৈধভাবে বাঁধ বেঁধে (ফিশারী) দিয়ে দখল করে জনগনের অধিকার চিনিয়ে নিয়ে এই নদী হত্যা করেছে। একে হত্যা করা মানে গ্রামের অস্তিত্ব ধ্বংস করা।”
তারা অবিলম্বে রাজী নদী দখলমুক্ত করার জন্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপ,আরওআরের প্রকৃত (পুরাতন) নক্সা পুনঃস্থাপন, ও দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান।

হাজী লিটনের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

এছাড়াও সরকারিভাবে এই জায়গায় মধ্য হারুলিয়া নদীর উপর একটি ব্রীজ স্হাপন করা হয় যাহা ৫০ ফুট।  যার প্রকল্পে ব্যায় ধরা হয় (১,৭৬৩০৪০/-) এক কোটি সাত লাখ তেষট্রি হাজার চল্লিশ টাকা। এখনো এই প্রকল্পের কাজের অসম্পূর্ণ থেকে যায় বলে দেখা যায়।