সংবাদ প্রকাশের জেরেনেত্রকোনার মদন উপজেলায় সাংবাদিকের হাত কেটে নেওয়ার হুমকি।

মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন, ময়মনসিংহ বিভাগের বিশেষ রিপোর্টারঃ
নেত্রকোনার মদনে এলজিইডির নির্মাণ করা নতুন সড়কে অনিয়ম নিয়ে সংবাদ প্রকাশের জেরে সাংবাদিকদের হাত কেটে নেওয়ার হুমকি দিয়েছেন পৌর বিএনপি সভাপতি কামরুজ্জামান চন্দন। এ ঘটনায় স্থানীয় সাংবাদিক সমাজে চরম উদ্বেগ ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
জানা যায়- মদন পৌরসভার নতুন পিচঢালা সড়কটি ২০২৪ সালের জুন মাসে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) প্রায় ১কোটি ৫৫ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করে। সড়কটির ৩ বছরের ফিটনেস থাকলেও বছর না যেতেই পৌরসভা পুনরায় একই সড়কে ১ কোটি ৯২ লাখ টাকা ব্যয়ে আরসিসি ঢালাইয়ের কাজ শুরু করে।
এই অনিয়ম নিয়ে সাংবাদিকরা সংবাদ প্রকাশ করলে ক্ষুব্ধ হয়ে গত শুক্রবার বিকেলে পৌর এলাকার ওই সড়কে এক সমাবেশে মাইকে প্রকাশ্যে সাংবাদিকদের হাত কেটে নেওয়ার হুমকি দেন পৌর বিএনপির সভাপতি কামরুজ্জামান চন্দন।
হুমকির শিকার সাংবাদিকরা হলেন—দৈনিক কালের কণ্ঠ-এর আঞ্চলিক প্রতিনিধিঃ ফয়েজ আহমেদ হৃদয়, দৈনিক যুগান্তর এর উপজেলা প্রতিনিধিঃ তোফাজ্জল হোসেন,
এবং আমার দেশ-এর উপজেলা প্রতিনিধিঃ নিজাম তালুকদার।
এর আগে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারের প্রতিনিধি ও উপজেলা বিএনপি সভাপতি নূরুল আলম তালুকদারের ছোট ভাই আব্দুল্লাহ আল রোমান স্থানীয় লোকজন নিয়ে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে চাঁদা দাবির অভিযোগ তুলে মানববন্ধন করেন।
সাংবাদিক ফয়েজ আহমেদ হৃদয় বলেন-“অনিয়মের বিরুদ্ধে নিউজ করায় একটি সুবিধাবাদী মহল আমাদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মিথ্যা অভিযোগ তুলেছে, আবার সংবাদ প্রকাশ করলে আমাদের হাত কেটে ফেলা হবে। এখন আমি পরিবার নিয়ে আতঙ্কে আছি। এ বিষয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরি করব।”
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে পৌর বিএনপি সভাপতি কামরুজ্জামান চন্দন বলেন-“রাস্তার কাজ নিয়ে সাংবাদিকরা টাকা চেয়েছিল শুনেছি। সমাবেশে লোকজনকে শান্ত করতে গিয়ে হাত কেটে নেওয়ার কথা বলে ফেলেছি। এখন বুঝতে পারছি, এমন বক্তব্য দেওয়া ঠিক হয়নি।”
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়-
মদন-কেন্দুয়া ইউজেডআর ভাটি মনোহরপুর ভায়া দেওয়ানবাজার সড়কের ৩ হাজার ৩৭০ মিটার অংশটি ২০২৪ সালের জুনে রাহাত এন্টারপ্রাইজ নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করে। কিন্তু একই বছরের জুলাই থেকে পৌরসভা কবির সিন্ডিকেট সেন্স নামের প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে ৮০৫ মিটার সড়কে আরসিসি ঢালাইয়ের কাজ শুরু করে। কাজের ব্যয় ধরা হয়েছে ১ কোটি ৯২ লাখ টাকা, যা ২০২৫ সালের জুলাই মাসে শেষ হওয়ার কথা।
স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন,
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি পুরনো পাকা সড়কের ওপর বক্সকাটিং ও বালু না দিয়ে সরাসরি সিসি ঢালাই দিচ্ছে, যা প্রকল্পের নিয়মবহির্ভূত। যদিও পৌরসভা কর্তৃপক্ষ দাবি করছে— প্রকল্পে ৮০৫ মিটারের পরিবর্তে ১,২০০ মিটার সড়ক নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়েছে, তাই বালু ফেলার প্রয়োজন নেই। তবে এ সংক্রান্ত কোনো নতুন এস্টিমেট পাওয়া যায়নি।
মদন পৌরসভার প্রশাসক (ইউএনও) মো. অলিদুজ্জামান বলেন-“এলজিইডি সড়কটি নির্মাণের সময় পৌরসভার লিখিত অনুমতি নেয়নি। বর্তমান প্রকল্পটি আগে থেকেই অনুমোদিত ছিল। স্থানীয় জনগণের মতামতের ভিত্তিতেই কাজ চলছে।”
এ ঘটনায় সাংবাদিক সমাজে তীব্র ক্ষোভ ও নিন্দা জানানো হয়েছে। তারা অবিলম্বে হুমকিদাতার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান।