ঠাকুরগাঁওয়ে শুরু হয়েছে শত বছরের লোকজ ঐতিহ্যবাহী ধামের গান।

মোঃ আনোয়ার হোসেন, নিজস্ব প্রতিনিধি:
উত্তর বাংলার প্রাণের সংস্কৃতি বহন করে চলা শত বছরের ঐতিহ্যবাহী ধামের গান আবারও গুঞ্জন তুলেছে ঠাকুরগাঁওয়ে মাঠে-ঘাটে, গাঁও-গেরামে। পল্লি জনপদের আবেগ ভক্তি এবং আত্মার আরাধনায় পরিপূর্ণ এই লোকজ সংগীত শুধু বিনোদনের মাধ্যম নয় বরং এটি এক আধ্যাত্মিক সাধনার প্রতিফলন। গত শনিবার রাত থেকে রুহিয়া উত্তর মন্ডলাদাম, তালতলী, বৈরাগী হাট, গড়গড়িয়ার ধামসহ বিভিন্ন স্থানে শুরু হয় এই সংগীতানুষ্ঠান।চিরায়ত ধারার এই আসরে উপস্থিত ছিলেন হাজারো দর্শক-শ্রোতা। ধামের গান মূলত পাঁচালী, পালা ও সামাজিক যাত্রার সংমিশ্রণ। এখানে পুরুষ শিল্পীরা নারী চরিত্রে অভিনয় করে গান, নৃত্য ও হাস্যরসের মাধ্যমে দর্শকদের মনোরঞ্জন করেন। এটি একটি পারিবারিক বিনোদন, যেখানে ছোট-বড় সবাই মিলে উপভোগ করে থাকে। কয়েকটি ধাম ঘুরে দেখা যায় লোকসমাগম ছিল চোখে পড়ার মতো। তরুণ-তরুণী থেকে শুরু করে প্রবীণরাও ধামের তালে তালে হৃদয় মেলাতে হাজির হয়েছিলেন। এমন আয়োজন যেন হারিয়ে যেতে বসা সংস্কৃতিকে আবারও প্রাণ এনে দিয়েছে। ধামের গান কেন্দ্রিক এই উৎসবকে ঘিরে বসে গেছে মেলা। স্থানীয় হস্তশিল্প, মাটির তৈজসপত্র, লোকজ খাবার ও খেলনা নিয়ে হাজির হন অসংখ্য দোকানি। ভীড় জমিয়েছে আশেপাশের এলাকা থেকে আগত দর্শনার্থী। ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গি উপজেলার লাহিড়ীহাট ভোটপাড়া এলাকা থেকে গান শুনতে আসা রবীন্দ্রনাথ রায় বলেন, ছোটবেলা থেকেই ধামের গান শুনছি। এই গান শুধু গান নয় একটা অনুভব একটা আবেগ। আজকাল অনেক কিছু হারিয়ে যাচ্ছে কিন্তু ধামের এই গান আমাদের মাটির সাথে সম্পর্ক রক্ষা করে চলেছে। এই ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখা আমাদের দায়িত্ব। গান শুনতে আসা রমেশ চন্দ্র বর্মন বলেন, আমি ছোটবেলা থেকেই ধামের গান শুনে আসছি। আজও এই গান শুনলে রাতে ঘুম আসেনা। গান দেখে শুনে উপভোগ করতেই রাত কেটে যায়। ধাম শিল্পীরা তাদের পরিবেশনার ফাঁকে বলেন, ধাম শুধু গান নয়, এটা এক আত্মার সাধনা। আমরা গান করি, অভিনয় করি, কিন্তু এর ভেতরে আছে ভক্তি, সংস্কৃতি আর লোকজ বোধ। রুহিয়ার মানুষ আজও এই ঐতিহ্য ধরে রেখেছে এটাই আমাদের গর্ব। আমরা চাই তরুণ প্রজন্মও এগিয়ে আসুক এই সংস্কৃতির ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে। রুহিয়া ধানাধীন ২১নং ঢোলারহাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অখিল চন্দ্র রায় বলেন, ধামের গান এই অঞ্চলের সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। প্রতিবছর এই আয়োজন মানুষের মধ্যে আনন্দ ছড়িয়ে দেয়, সমাজে সৌহার্দ্য গড়ে তোলে। আমরা ইউনিয়ন পরিষদ থেকে সর্বোচ্চ সহায়তা করার চেষ্টা করি যেন এই ঐতিহ্য বাঁচিয়ে রাখা যায়। পাশাপাশি চাই এই সংগীত ও সংস্কৃতিকে ঘিরে পর্যটনও বিকশিত হোক।