পাবনায় হোটেল ড্রিম প্যালেসে হামলা ও ভাংচুর: আদনানসহ তিনজনের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল।

পাবনা জেলা প্রতিনিধিঃ
পাবনা সদর উপজেলার শালগাড়িয়া এলাকায় অবস্থিত হোটেল ড্রিম প্যালেসে হামলা, ভাংচুর ও চাঁদাবাজির ঘটনায় দায়ের করা মামলার তদন্তে এস এম আদনান উদ্দিনসহ তিনজনের বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পেয়েছে পুলিশ। বুধবার (৭ অক্টোবর) তদন্ত প্রতিবেদনটি বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিসিয়াল দ্রুত বিচার আদালত, পাবনায় দাখিল করা হয়।
তদন্ত কর্মকর্তা মোঃ ইয়াদুর রহমান, উপপরিদর্শক (নিরস্ত্র), পাবনা থানার দাখিলকৃত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে—
গত ২৮ জানুয়ারি (২০২৫) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে এস এম আদনান উদ্দিনের নেতৃত্বে প্রায় ১৫ থেকে ২০ জন ব্যক্তি হোটেল ড্রিম প্যালেসে জোরপূর্বক প্রবেশ করে ব্যাপক ভাংচুর চালায়। হামলাকারীরা জিআই পাইপ, লাঠি, হকিস্টিক ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে হোটেলের নিচতলা ও অফিসকক্ষে তাণ্ডব চালিয়ে ল্যাপটপ, মনিটর, হার্ডডিস্ক, ক্যামেরা, মাইক্রোফোনসহ মূল্যবান সামগ্রী ভেঙে ফেলে। এছাড়াও পার্কিংয়ে থাকা একটি মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন আসবাবপত্র নষ্ট করে প্রায় ২০ লক্ষ টাকার ক্ষয়ক্ষতি করে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
এ ঘটনায় হোটেলের ম্যানেজার মোঃ আলীমুজ্জামান আহমেদ বাদী হয়ে আইন শৃঙ্খলা বিঘ্নকারী অপরাধ (দ্রুত বিচার) আইন ২০০২ এর ৪/৫ ধারায় মামলা দায়ের করেন।
তদন্তে জানা যায়, অভিযুক্ত এস এম আদনান উদ্দিনের পিতা আজিম উদ্দিন মোল্লা “অনন্য সমাজকল্যাণ সংস্থা”-তে কর্মরত ছিলেন এবং মৃত্যুর পর প্রতিষ্ঠানটি তার পাওনা ৯৩,৭৮০ টাকা তার স্ত্রী শাহানারা পারভীনের ব্যাংক হিসাবে হস্তান্তর করে। কিন্তু পরবর্তীতে আদনান উদ্দিন অতিরিক্ত অর্থ দাবি করলে প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ তা প্রত্যাখ্যান করে। এ ঘটনার জেরে তার মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয় এবং পরবর্তীতে তিনি উক্ত হোটেল ও সংস্থার বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে হুমকি ও চাপ সৃষ্টি করতে থাকেন বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ রয়েছে।
এছাড়াও তদন্তে উঠে এসেছে যে, আদনান উদ্দিন হোটেল ড্রিম প্যালেসের বিষয়ে ‘নেতিবাচক সংবাদ’ প্রকাশ না করার বিনিময়ে হোটেল কর্তৃপক্ষের নিকট মাসিক খরচ দাবি করতেন। কর্তৃপক্ষ তা অস্বীকার করায় তিনি সহকর্মীদের নিয়ে হোটেলে হামলা চালান বলে সাক্ষ্য ও ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণে প্রমাণ মেলে।
তদন্ত প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, অভিযুক্তরা বাদী ও হোটেল কর্মচারীদের মারধর করে এবং ভয়ভীতি প্রদর্শন করে। ঘটনার সঙ্গে অভিযুক্ত মোঃ তোফাজ্জল হোসেন (৪৪) ও মোঃ আব্দুল্লাহ আল-নাহিয়ান (২৩)-এর সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া গেছে। তবে অপর অভিযুক্ত রকি করিম (৩৫)-এর বিরুদ্ধে কোনো প্রমাণ মেলেনি।
পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনার সময় উপস্থিত অজ্ঞাতনামা আরও ১৫ থেকে ২০ জন হামলাকারীর পরিচয় শনাক্তের প্রক্রিয়া চলছে। সনাক্ত হলে সম্পূরক প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করা হবে।
এদিকে, তদন্তে অভিযুক্ত এস এম আদনান উদ্দিনের বিরুদ্ধে সাইবার নিরাপত্তা আইন ২০২৩-এর ২৫(২) ধারায় দায়েরকৃত পাবনা সদর থানার আরও একটি মামলা (এফআইআর নং-২১, তারিখ ৬ জুন ২০২৫) বিদ্যমান রয়েছে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।