সাংবাদিক হত্যা ও নির্যাতনের প্রতিবাদে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বিক্ষোভ ও মানববন্ধন অনুষ্ঠিত।

IMG-20251007-WA0086


মোঃ জানে আলম রনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রতিনিধিঃ


ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ৭ অক্টোবর ২০২৫ বাগেরহাটের সাংবাদিক এস. এম. হায়াত উদ্দিন হত্যা এবং নেত্রকোনার সাংবাদিক মহিউদ্দিনের ওপর নির্মম নির্যাতনের প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে উঠেছে সাংবাদিক সমাজ।

আজ মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) সকাল ১১টায় বাংলাদেশ প্রেস ক্লাব ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শাখার উদ্যোগে শহরের টেংকেরপাড় কার্যালয় প্রাঙ্গণে এক বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।

মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ প্রেস ক্লাব ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শাখার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও সরেজমিন বার্তা পত্রিকার ব্যুরো চিফ সাংবাদিক এনামুল হক আরিফ। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সংগঠনের সহ-সভাপতি সাংবাদিক শাহ আলম পালোয়ান।

প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন জেলা সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক জানে আলম রনি। এছাড়া বক্তব্য রাখেন সিনিয়র সহ-সভাপতি সাংবাদিক আলমগীর হোসেন, সহ-সভাপতি মিনহাজ নবী পলাশ, অর্থ সম্পাদক আল-আমিন খন্দকার, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আরেফিন সুলতানা কলি, দপ্তর সম্পাদক আবদুল্লাহ আল সাঈদ এবং সহ-সভাপতি তাহমিনা উদ্দিন।

উপস্থিত ছিলেন বিজয়নগর উপজেলা প্রেস ক্লাব সভাপতি সাংবাদিক মাসেকুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক জাহাঙ্গীর আলম; আখাউড়া উপজেলা সভাপতি সাংবাদিক হুমায়ুন কবির, সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ মিয়া; সরাইল উপজেলা সভাপতি সাংবাদিক আবু তাহের, সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম, সাংগঠনিক সম্পাদক সুফল আমিনসহ জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে আগত প্রায় শতাধিক সাংবাদিক।

মিছিলের পথরেখা ও স্লোগানে উত্তাল শহর
বিক্ষোভ মিছিলটি প্রেস ক্লাব কার্যালয় থেকে শুরু হয়ে টেংকেরপাড়, সদর সার্কেল, কুমাশীল রোড, সুপার মার্কেট, পৌর মার্কেট, সদর থানা এলাকা প্রদক্ষিণ করে মুক্তমঞ্চের সামনে এসে শেষ হয়। এ সময় সাংবাদিকরা হাতে প্ল্যাকার্ড ও ব্যানার ধরে শ্লোগান তোলেন—

“সাংবাদিক হত্যা বন্ধ করো”
“নিপীড়ন-নির্যাতনের বিচার চাই”
“সাংবাদিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করো”
“হায়াতের হত্যাকারীদের ফাঁসি চাই।”
প্রধান বক্তার বক্তব্যে প্রশাসনের নীরবতা ও সাংবাদিক হত্যার প্রতিবাদ
সভায় প্রধান বক্তব্যে সাংবাদিক এনামুল হক আরিফ বলেন, “সারা দেশে সাংবাদিকদের ওপর একের পর এক সন্ত্রাসী হামলা, হত্যা ও নিপীড়নের ঘটনা ঘটছে, অথচ প্রশাসন নীরব দর্শক। আমরা সাংবাদিকরা জাতির চতুর্থ স্তম্ভ। আমাদের হত্যা করা মানে দেশের গণতন্ত্রকে হত্যা করা।”

তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে আরও বলেন, “একজন সাংবাদিক যদি প্রশাসনের দুর্নীতি বা অপরাধের খবর প্রকাশ করেন, সঙ্গে সঙ্গে তাঁর গায়ে ‘চাঁদাবাজ’ ট্যাগ লাগিয়ে মামলা দেওয়া হয়। এটা কোন ধরনের ন্যায়বিচার? সাংবাদিকদের মুখ বন্ধ করার ষড়যন্ত্র চলছে।”

বাগেরহাটের দৈনিক ভোরের চেতনা পত্রিকার সাংবাদিক এস. এম. হায়াত উদ্দিন হত্যার প্রসঙ্গে আরিফ বলেন, “একজন সাংবাদিক সত্য প্রকাশের কারণে যেভাবে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা হলেন, এটা কেবল ব্যক্তি নয়, গণমাধ্যমের ওপর আঘাত। তাঁর পরিবারের এখন মানবেতর জীবন —তাদের দায়িত্ব কে নেবে?”

তিনি আরও যোগ করেন, “নেত্রকোনায় আমাদের সহকর্মী মহিউদ্দিনকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনেই নির্মমভাবে পেটানো হয়েছে। প্রশাসন কি দেখেনি? আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই এবং অবিলম্বে হামলাকারীদের গ্রেপ্তার ও বিচার দাবি করি।”

বাংলাদেশ প্রেস ক্লাবের কেন্দ্রীয় আন্দোলনের ইঙ্গিত
সভায় এনামুল হক আরিফ জানান, “বাংলাদেশ প্রেস ক্লাব দেশের সবচেয়ে বৃহৎ সাংবাদিক সংগঠন। এখন পর্যন্ত প্রায় সাতশত জেলা-উপজেলায় এর শাখা রয়েছে। কেন্দ্রীয় প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সাংবাদিক ফরিদ খান ইতিমধ্যে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বরাবর সাংবাদিক নিরাপত্তা নিশ্চিত ও স্বাধীন সাংবাদিকতার দাবি জানিয়ে স্মারকলিপি দিয়েছেন। যদি সাংবাদিক নির্যাতন বন্ধ না হয়, তাহলে সারাদেশে মহাসমাবেশের ডাক দেওয়া হবে।”

সাংবাদিকদের ঐক্যের আহ্বান
সভায় বক্তারা একযোগে বলেন, “আমরা যদি ঐক্যবদ্ধ না হই, তাহলে সাংবাদিকতার স্বাধীনতা ধ্বংস হয়ে যাবে। গণমাধ্যমকর্মীরা নিঃস্বার্থভাবে সমাজের সত্য তুলে ধরে—তাদের ওপর হামলা মানে সত্যকে রুদ্ধ করা।”

তারা প্রশাসনের উদ্দেশে বলেন, “আমরা চাই না সংঘাত, চাই নিরাপদ কর্মপরিবেশ। কিন্তু যদি আমাদের সহকর্মীদের হত্যা-নির্যাতন বন্ধ না হয়, তাহলে দেশজুড়ে কঠোর আন্দোলনের ডাক দেওয়া হবে।”

সভা শেষে সাংবাদিকরা নিহত হায়াত উদ্দিনের আত্মার মাগফেরাত ও আহত মহিউদ্দিনের দ্রুত সুস্থতা কামনা করে দোয়া করেন। একইসঙ্গে তাঁরা ঘোষণা দেন— “সত্যের কলম থামবে না। ন্যায়বিচার না পাওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশ প্রেস ক্লাব আন্দোলন চালিয়ে যাবে।”

You may have missed