উন্নয়ন ভাবনা প্রেক্ষিত ঝিনাইদহ” শীর্ষক মতবিনিময় সভা।

মোঃ আবু সাইদ শওকত আলী ,
খুলনা বিভাগীয় প্রধানঃ
“উন্নয়ন ভাবনা প্রেক্ষিত ঝিনাইদহ” শীর্ষক মতবিনিময় সভায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, শিক্ষাবিদ, ব্যাবসায়ী নেতা, উন্নয়নকর্মী ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের মিলনমেলায় পরিণত হয়। ঝিনাইদহ প্রেসক্লাব ও ঢাকাস্থ ঝিনাইদহ সাংবাদিক ফোরামের যৌথ আয়োজনে শুক্রবার বিকাল থেকে রাত পর্যন্ত শহরের ড্রিমভ্যালি এন্ড রিসোর্টে এই মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
আসন্ন সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সম্ভভ্য প্রার্থীরা নিজ নিজ দলের পক্ষ থেকে ঝিনাইদহের উন্নয়নে কি ভুমিকা পালন করা হবে তার বর্ণনা করেন। ঝিনাইদহ প্রেসক্লাবের সভাপতি আসিফ কাজল অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। ঢাকাস্থ ঝিনাইদহ সাংবাদিক ফোরামের নেতা জাহিদ হোসেন বিপ্লব, ঝিনাইদহ প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম লিটন ও সহ-সভাপতি আসিফ ইকবাল মাখন পুরো অনুষ্ঠানটি সঞ্চালন করেন।
উদ্বোধনী বক্তব্যে ঢাকাস্থ ঝিনাইদহ সাংবাদিক ফোরামের সভাপতি মেহেদী হাসান পলাশ বলেন, “ঝিনাইদহ একটি সম্ভাবনাময় জেলা। এখানে কৃষি, শিক্ষা, শিল্প, সংস্কৃতি ও পর্যটন খাতে অসংখ্য সুযোগ রয়েছে। এগুলোকে কাজে লাগাতে হলে আগামী দিনে যারা জনপ্রতিনিধি হবেন তাদেরকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।”
বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল বলেন, ঝিনাইদহে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড দ্রুত এগিয়ে নিতে হলে প্রথমেই প্রয়োজন একটি দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা। অতীতে নানা উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করা হলেও চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি ও রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে প্রকৃত উন্নয়ন ব্যাহত হয়েছে। তিনি এমপি নির্বাচিত হলে তার নির্বাচনী এলাকার সরকারী চাকরীজীবীদের ব্যাকগ্রান্ড চেক করা হবে বলে মন্তব্য করেন।
ঝিনাইদহ জেলা বিএনপির সভাপতি এ্যাড এম এ মজিদ বলেন, বিএনপি সরকারের আমলে বন্ধ সরকারী প্রতিষ্ঠানগুলো চালু করা হবে। তিনি বলেন, তার দল সুশাসন ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।
গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান বলেন, আগামী প্রজন্মের জন্য একটি টেন্ডারবাজি ও চাঁদাবাজিমুক্ত সমাজ গঠন করতে হবে। ৫ আগষ্টের পর জেলায় বহুমাত্রিক দুর্নীতির নজীর স্থাপন করা হয়েছে। টিন্ডারবাজী ও চাঁদাবাজী ছাড়াও দখল বানিজ্য করা হয়েছে। তিনি এমপি নির্বাচিত হলে এগুলো জিরো টলারেন্স দেখানো হবে।
ঝিনাইদহ জেলা জামায়াতের আমীর অধ্যাপক আলী আজম মোহাম্মদ আবু বকর বলেন, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি ও দুর্নীতিমুক্ত একটি ঝিনাইদহ গড়তে তারা সবাই নিজ নিজ অবস্থান থেকে কাজ করবেন। কাউকে ফ্রিস্টাইলে দুর্নীতি করতে দেওয়া হবে না।
ঝিনাইদহ ফোরামের সভাপতি অধ্যক্ষ মহাব্বত হোসেন টিপু বলেন, ঝিনাইদহে মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি। জেলার সরকারি-বেসরকারি কলেজ, স্কুল ও মাদরাসায় শিক্ষক সংকট এবং অবকাঠামোগত সমস্যার কথা তারা উল্লেখ করেন।
ঝিনাইদহ চেম্বারের সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, এই জেলায় শস্য উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি কৃষিপণ্য সংরক্ষণ ও বাজারজাতকরণে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরা হয়। বক্তারা বলেন, ঝিনাইদহের বিখ্যাত সবজি, খেজুরগুড় ও দুগ্ধজাত পণ্য দেশব্যাপী ব্র্যান্ডিং করলে স্থানীয় কৃষকরা উপকৃত হবেন। পাশাপাশি তাঁত ও হস্তশিল্পের বিকাশে সরকারি প্রণোদনা দেওয়ার দাবি উঠে আসে।
এনসিপি নেতা হামিদ পারভেজ বলেন, তরুণ প্রজন্মকে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত না করলে টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয়। ঝিনাইদহে তরুণদের জন্য কর্মসংস্থান, আইটি প্রশিক্ষণ ও উদ্যোক্তা সহায়তা বাড়াতে হবে।
ঝিনাইদহ প্রেসক্লাবের সভাপতি আসিফ কাজল বলেন, শুধু রাজনৈতিক দল নয়, নাগরিক সমাজকেও উন্নয়নের কাজে যুক্ত করতে হবে। তিনি শহর ও গ্রামের মধ্যে সমন্বিত উন্নয়ন পরিকল্পনার ওপর জোর দেন।
ঢাকাস্থ ঝিনাইদহ সাংবাদিক ফোরামের সাধারণ সম্পাদক শাহনাজ পারভীন পলি বলেন, ঝিনাইদহকে একটি দৃষ্টান্তমূলক জেলা হিসেবে গড়ে তুলতে সবার ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টার পাশাপাশি সামাজিক নিরাপত্তা, নারীর ক্ষমতায়ন ও স্বাস্থ্যসেবার মানোন্নয়ন নিশ্চিত করার তাগিদ দেন।
মতবিনিময় সভাটি জেলার রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে ব্যাপক সাড়া ফেলে। অনেকেই মনে করছেন, এই আলোচনার মধ্য দিয়ে ঝিনাইদহের উন্নয়ন ভাবনায় একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে।
সভায় ঝিনাইদহ প্রেসক্লাবের সদস্য ছাড়াও বিএনপি, জামায়াত, গণঅধিকার পরিষদ, ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন, এনসিপি, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা বক্তব্য রাখেন। এছাড়া বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও উন্নয়নকর্মীরাও তাদের যুক্তি ও পরামর্শ তুলে ধরেন।